নিষেধাজ্ঞা ভেঙে পটকা-আতশবাজি, ফানুসের আগুন বাসাবাড়িতে
নানান বর্ণিল আয়োজনে বরণ করা হলো নতুন বছর। স্বাগত জানানো হলো ২০২২ ঈসায়ী বা খ্রিষ্টাব্দ সালকে। গত শুক্রবার থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন ঘিরে পটকা বা আতশবাজি ফোটানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু তা অমান্য করেই পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে দেখা গেছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা বাজতেই রাজধানী ঢাকার প্রতিটি এলাকায় ফানুস ওড়ানো শুরু হয়। একযোগে ফোটানো হয় পটকা বা আতশবাজি। আর তাতে বিকট শব্দে কেঁপে কেঁপে ওঠে গোটা মহানগরী। ফানুসের আগুন ছিটকে পড়ে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে।
গতকাল শনিবার সকালে যে সূর্য উঠেছে তা নতুন বছরের। নতুন বছরে নতুনভাবেই শুরু হলো পথচলা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে এক অস্থির সময়কালে নতুন বছরের আগমন ঘটল। সময়ের স্রোতকে কখনোই ফ্রেমে আটকে রাখা যায় না। সময়কে বলা হয় কালস্রোত। মানুষ এই স্রোতে এগিয়ে চলে। কখনো এই এগিয়ে চলা হয়ে ওঠে বর্ণময়। কখনো বা বিবর্ণ ধূসর। কিন্তু যেভাবেই হোক না কেন সে থামতে পারে না। সময় তাকে থামতে দেয় না। এই কর্মময় জীবনে সময়ের স্রোত একমাত্র থামে জীবনের যবনিকাপাতের মধ্য দিয়ে। মানুষ যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন যাত্রায় শামিল হয়েছে তখনই সময়ের প্রশ্ন উঠেছে। সময়ই জীবনকে এক কঠিন বাস্তবের মুখে নিয়ে যায়। সময় জীবনের সবচেয়ে বড় নিয়ামক। বড় পুঁজি। বড় শক্তি। প্রতিটি সেকেন্ড প্রতিটি মুহূর্ত জানান দেয় যে নির্ধারিত সময়কাল বুঝি শেষ হয়ে যাচ্ছে।
আমরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ হিসাব করি। কিন্তু এর কোনো স্থিতি নেই। এই মুহূর্তে যেটা বর্তমান কিছুক্ষণ পরই তা ধূসর বিবর্ণ অতীত। আবার ভবিষ্যৎ যা তারও কোনো স্থায়িত্ব নেই। ক্ষণে ক্ষণে ভবিষ্যৎ ঠাঁই নিচ্ছে বর্তমানে। আবার মুহূর্তেই তা হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের মাঝে। এ এক বিস্ময়কর বিষয়। মানুষ নিজেকে জ্ঞান-বিজ্ঞান কিংবা আবিষ্কারের যেখানেই নিয়ে গেছে সীমাবদ্ধতাও তাকে আটকে রেখেছে। এই সীমাবদ্ধতাকে কখনোই সে অতিক্রম করতে পারেনি।
উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, এখন আমরা যে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ পালন করি এরও রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। আরব দেশগুলোতে হিজরি নববর্ষ এবং মুসলিম জাহানেও তা পালনের রেওয়াজ রয়েছে। গ্লোবালাইজেশন বা বৈশ্বিক কারণে ইংরেজি নববর্ষ বিশ্বব্যাপী নতুন উদ্যমে পালিত হয়। এর পেছনে ব্যবসায়িক স্বার্থও রয়েছে। প্রকৃত অর্থে আমরা যে ইংরেজি সাল বা খ্রিষ্টাব্দ মেনে চলি তা হলো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়। এই ক্যালেন্ডার নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। এখনকার মতো শুরুতে সার্বজনীনভাবে ১ জানুয়ারি নববর্ষের প্রচলন ছিল না।
গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রকৃতপক্ষে একটি সৌর বছর। ধাপে ধাপে মানুষ সৌর বছরের বর্তমান ধারায় উপনীত হয়েছে। প্রথম দিকে মানুষ চাঁদের হিসাবেই নতুন বর্ষ গণনা শুরু করেছিল। চাঁদের হিসাবে ১০ মাসে বছর হতো। সেখানে ঋতুর সাথে কোনো সম্পর্ক ছিল না। সূর্যের হিসাবে বা সৌর গণনার হিসাব আসে অনেক পরে। সৌর এবং চন্দ্র গণনায় আবার পার্থক্য রয়েছে। সৌর গণনায় ঋতুর সাথে সম্পর্ক থাকে। প্রায় চার হাজার বছর আগে, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে মেসোপটেমীয় (ইরাক) সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ উৎসব চালু হয়েছিল। মেসোপটেমীয় সভ্যতার আবার চারটি আলাদা ভাগ আছে, সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, আসিরীয় সভ্যতা ও ক্যালডীয় সভ্যতা। এর মধ্যে বর্ষবরণ উৎসব পালন শুরু হয় ব্যাবিলনীয় সভ্যতায়। সে সময় বেশ জাঁকজমকের সাথেই করা হতো এই বর্ষবরণ। তবে সেটা কিন্তু এখনকার মতো জানুয়ারির ১ তারিখে হতো না। তখন নববর্ষ পালন করা হতো বসন্তের প্রথম দিনে। বসন্তকালে প্রকৃতির নতুন করে জেগে ওঠাকেই তারা নতুন বছরের শুরু বলে চিহ্নিত করত। তখন চাঁদ দেখেই বছর গণনা করা হতো। যে দিন বসন্তের প্রথম চাঁদ উঠত, শুরু হতো বর্ষবরণ উৎসব, চলত টানা ১১ দিন। এই ১১ দিনের আবার আলাদা আলাদা তাৎপর্যও ছিল।
ব্যাবিলনীয় সভ্যতার পর জাঁকজমক করে নববর্ষ পালন শুরু করে রোমানরা। প্রথম সম্রাট রোমুলাসই ৭৩৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। অবশ্য এই ক্যালেন্ডারও রোমানরা চাঁদ দেখেই বানিয়েছিলেন। আর সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ ছিল ১ মার্চ। সেই ক্যালেন্ডারে মাস ছিল মাত্র ১০টা। পরে সম্রাট নুমা পন্টিলাস জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিকে ক্যালেন্ডারে যোগ করেন। সমস্যা ছিল আরো, রোমানদের ক্যালেন্ডারে তারিখও ছিল না। ধীরে ধীরে চাঁদের বেড়ে ওঠার ছবি দিয়ে তারা মাসের বিভিন্ন সময় চিহ্নিত করত।
সম্রাট জুলিয়াস সিজার এই ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন ঘটান। তিনি ক্যালেন্ডস, ইডেস, নুনেসের ঝামেলা শেষ করে বসিয়ে দেন তারিখ। ফলে বছরে মোট ৩৫৫ দিন হয়। যেহেতু চাঁদের হিসাবে প্রতি মাসে দিন হয় সাড়ে ২৯। আর তাই চাঁদের হিসাব করায় তাদের বছরে ১০ দিন কম থাকত। এইভাবে বছর হিসাবের ফলে চাষিরা সমস্যায় পড়ে যায়। সম্রাট সিজার চাঁদের হিসাব না করে, সূর্য দিয়ে হিসাব করে বছরকে ৩৬৫ দিনে এনে এই সমস্যার সমাধান করেন। অনেকে বলেন, সেই সময়ে সূর্য দেখে প্রথমে ৩৬৫ দিনের নয়, ৪৪৫ দিনের ক্যালেন্ডার বানিয়েছিলেন! রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার লিপইয়ার বছরেরও প্রচলন করেন। জুলিয়াস সিজার আলেকজান্দ্রিয়া থেকে গ্রিক জ্যোতির্বিদ মোসাজিনিসকে নিয়ে আসেন ক্যালেন্ডার সংস্কারের জন্য। মোসাজিনিস দেখতে পান পৃথিবী সূর্যের চার দিকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ৩৬৫ দিনে ৬ ঘণ্টা। ৩৬৫ দিন বছর হিসাব করা হলে এবং প্রতি চতুর্থ বছরে ৩৬৬ দিনে বছর হিসাব করলে হিসাবের কোনো গরমিল হয় না। আর তাই মোসাজিনিস অতিরিক্ত এক দিন যুক্ত করে এ বছরটির নাম করেন ‘লিপইয়ার’।
যিশু খ্রিষ্টের (হজরত ঈসা আ:) জন্মের ৬০০ বছর আগে, অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ অব্দে ঠিক করা হয়েছিল বর্ষবরণ হিসেবে পালন করা হবে ২৬ মার্চ তারিখটি। কিন্তু সেটা ঠিকভাবে মানা হচ্ছিল না। পরে সম্রাট নুমা পন্টিলাস জানুয়ারি আর ফেব্রুয়ারিকে ক্যালেন্ডারে স্থান দেন, তখন তিনি ঠিক করে দেন জানুয়ারির ১ তারিখ হলো বছরের প্রথম দিন। ওই দিনই হবে বর্ষবরণ। কিন্তু সে কথাও মানা হলো না। রোমানরা সেই আগের মতো মার্চের ১ তারিখেই বর্ষবরণ উৎসব করতে থাকে। পরে জুলিয়াস সিজার যখন ৩৬৫ দিনে বছরের ঘোষণা দেন, তখন আবার বলে দেন মার্চে নয়, বছর শুরু হবে জানুয়ারির ১ তারিখে। উৎসবও সেই দিনই হবে। এরপরই বর্ষবরণ উৎসব মার্চ মাস থেকে চলে এলো জানুয়ারিতে। সিজারের ক্যালেন্ডারেও বেশ কিছু সমস্যা ছিল। এই সমস্যার সমাধানে মাত্র ৪০০ বছর আগে ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরামর্শ নিয়ে ক্যালেন্ডারটি সংস্কার করেন। তারই নাম অনুসারে ক্যালেন্ডারটির নামকরণ করা হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। একই দিনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হলেও বিভিন্ন দেশে নববর্ষ পালনের রীতিনীতিও ভিন্ন ভিন্ন। কিছু কিছু মিল থাকলেও নববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ হয় দেশীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। গ্রেট ব্রিটেনে এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রচলিত হয় ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। আর এই ক্যালেন্ডার আমাদের দেশে নিয়ে আসে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে।
বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে চলছে এক নিদারুণ মন্দা। এ সময়ের সাথে অতীতের কোনো মিল নেই। যে মূল্যবোধগুলো রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে সেখানে আচড় লেগেছে। অবক্ষয় সবখানেই। দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ উপেক্ষিত। ভোটের অধিকারের জন্য এখনো রাজপথে স্লোগান দিতে হয়। অর্থনৈতিক ব না থেকে মুক্তি মেলেনি। আজো জনগণের মৌলিক অধিকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে সীমিত করে দিয়েছে। ইনসাফ ও সাম্য অধরাই রয়ে গেছে। বিগত বছরে অনেকগুলো ঘটনা দেশে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে। কিংবা বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার হত্যাকা- জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে ছাত্রদের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে বারবার রক্তাক্ত করা হয়েছে। পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। করোনার প্রাদুর্ভাব বিগত বছরে ছিল ভয়াবহ। এককথায় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো মৌলিক সমস্যাগুলো আজো নিশ্চিত হয়নি সর্বস্তরে। মানুষে মানুষে ব্যবধান বেড়েছে বহুগুণ। অথচ এসব মৌলিক বিষয়ে ব না থেকেই শুরু হয়েছিল আমাদের মুক্তি সংগ্রাম। নতুন বছরে আমাদের কামনা এই ব্যবধান ঘুচে যাক। শুরু হোক নতুন অধ্যায়। নতুন পথচলা। যেখানে অর্থনৈতিক ব না যেমন থাকবে না ঠিক তেমনি প্রয়োজন হবে না গণতন্ত্রের জন্য কোনো লড়াই সংগ্রামের। বিদ্যাপীঠে শিক্ষার জন্য পাঠিয়ে লাশ হাতে পাবে না কোনো পিতা-মাতা। সমাজে থাকবে ইনসাফ সাম্য ও সুবিচার। বিভেদের রাজনীতির পরিবর্তে ঐক্য গড়ে উঠবে সব দল মত ও পথের মানুষের মধ্যে। দেশপ্রেমই হবে যার মূলমন্ত্র। নতুন বছরে হোক সেই প্রত্যয়, সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন।
নিষেধাজ্ঞা ভেঙে পটকা-আতশবাজি, ফানুসের আগুন বাসাবাড়িতে: থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন ঘিরে পটকা বা আতশবাজি ফোটানোয় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু তা অমান্য করেই পুরোনো বছর বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করতে দেখা গেছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা বাজতেই রাজধানী ঢাকার প্রতিটি এলাকায় ফানুস ওড়ানো শুরু হয়। একযোগে ফোটানো হয় পটকা বা আতশবাজি। আর তাতে বিকট শব্দে কেঁপে কেঁপে ওঠে গোটা মহানগরী। ফানুসের আগুন ছিটকে পড়ে বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে। পটকা বা আতশবাজি ফোটানো বন্ধ করতে না পারার বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন খোদ ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। গত শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর চত্বরে তিনি যখন নিরাপত্তা ব্রিফিং করছিলেন, তখনও আশপাশের এলাকায় আতশবাজি ফোটানো চলতে থাকে। এদিন সন্ধ্যার পর থেকেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় আতশবাজি ফোটানো শুরু হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতশবাজির বিকট শব্দও বাড়তে থাকে। রাত ১২টায় গোটা নগরীতে একযোগ আতশবাজি শুরু হলে বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো নগরী। ফানুস থেকে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে বিভিন্ন এলাকায়।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, আতশবাজি থামানোর বিষয় না। হাত দিয়ে আটকে রাখা যায় না। আতশবাজি না ফোটাতে গতকালও (বৃহস্পতিবার) আমি নগরবাসীকে অনুরোধ করেছি। মূলত এসব আতশবাজি ফোটায় একেবারে টিনেজ ছেলেমেয়েরা। বাড়িতে গিয়ে দেখেন, আপনার ছোটভাই কিংবা বোন অথবা সন্তান হয়তো দুটো আতশবাজি কিনে ফোটাচ্ছে। এত বেশি বিধিনিষেধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করাটাও ডিফিকাল্ট। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে তো নিষেধ করতে পারবো না। তিনি বলেন, নগরবাসীকে অনুরোধ করেছিলাম- অন্তত বয়স্ক মানুষ ও অসুস্থ মানুষের কথা বিবেচনা করে হলেও যেন এটি সীমিত রাখা হয়। আমি আশা করবো, যারা এই আতশবাজি ফোটাচ্ছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষে রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজ অনিরাপত্তার কিছু নেই। রাস্তায় সাংবাদিক ও পুলিশ ছাড়া কেউ নেই। সব জায়গায় নিরাপত্তা আছে, কোথাও কোনো সমস্যা নেই। তিনি বলেন, মানুষ বাড়িতেই তার পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ উদযাপন করছে। পুরোনো বছরকে বিদায় দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে। নতুন বছর সবার ভালো কাটুক এ দোয়া করি। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে আরেকটু ব্যাটার নগর, নিরাপদ নগর। মানুষ যেন আরও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে সামনের বছরটি কাটাতে পারে। কোভিডের এই অভিশাপ থেকে যেন আমরা মুক্ত হতে পারি। উন্নয়নের যে প্রকল্পগুলি চলছে সেগুলো কমপ্লিট হলে ট্রাফিক নিয়ে মানুষ যে বিড়ম্বনায় আছে তা কিছুটা হলেও সুরাহা হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি বলেন, আমরা সবসময় চেষ্টা করি মানুষের পাশে থাকার জন্য। মানুষকে ভালোবেসে তার বিপদের দিনে পাশে থাকার জন্য আমরা চেষ্টা করি। সামনের দিনেও তা অব্যাহত থাকবে। আমরা নগরবাসীর সহযোগিতা চাই, সহমর্মিতা চাই। তাদের সাথে নিয়ে আমরা একটি নিরাপদ নগর গড়ে তুলতে চাই।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে বিধিনিষেধের কারণে যানজট তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, যানজট হবে- এই আশঙ্কা থেকেই আমরা রাত আটটার মধ্যে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছিলাম। আজকে ছুটির দিন, বাইরে বিশেষ কাজ থাকার কথা নয়। রাত আটটার মধ্যে ফিরে আসার সব রাস্তায় খোলা ছিল। এত বেশি রাস্তা চেক করে নিয়ন্ত্রণ করাটা আমাদের জন্য খুব কঠিন হয়ে যায়। ডিএমপি কমিশনার বলেন, কোভিড সিচুয়েশন চলছে, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখতে হয়। আমার ফোর্সের নিরাপত্তাও দেখতে হয়। সব জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে চেক করাটা এ কোভিড সিচুয়েশনে বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করি না। এদিকে থার্টি ফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে ফানুস ওড়াতে গিয়ে রাজধানীর অন্তত ১০টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে মাতুয়াইল স্কুল রোডের একটি বাড়িতে ফানুস থেকে বড় ধরনের আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, রাজধানীর মাতুয়াইল, তেজগাঁও, যাত্রাবাড়ী, ধানম-ি, রায়েরবাগসহ মোট ১০টি বাসার ছাদ ও সড়কের তারে ফানুস থেকে আগুন লাগার সংবাদ পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আগুন লাগার স্থানগুলো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। তালিকা সম্পন্ন হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। আগুনে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।