সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
দিল্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশী গার্মেন্টসের রফতানি বাড়ায় ভারতীয়দের আপত্তি নকলায় বিএনপির ৪ নেতানেত্রীকে বহিষ্কার পালিয়ে বাংলাদেশে এলেন আরও ৮৮ বিজিপি সদস্য ১২ দিনে পানিতে ডুবে ১২ শিশুর মৃত্যু অর্থবছরের ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে: অর্থমন্ত্রী চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের অভিযোগ বরিশালে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার বাস চলাচল শুরু : অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আপনাদের সহায়তায় সুস্থ জীবন চাই শ্রীমঙ্গলে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত নূরে মদিনা মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা ফুলপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবের মিছিল

দেশে করোনা সংক্রমণ পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী

শামছুল আরিফ:
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২২

দেশে করোনা সংক্রমণ পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী। গত এক সপ্তাহে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনাতে রোগী শনাক্তের হার প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল রবিবার (২ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন এ তথ্য জানান।
বুলেটিনে তিনি বলেন, সারাবিশ্বে কোভিড পরিস্থিতি বেশ নাজুক অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়নি যেÍএকদিনে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেন। এরকমটা দেখা যায়নিÍযেটা দুই থেকে তিন দিন আগে দেখা গেছে বিশ্বজুড়ে। করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণেই সংক্রমণের মাত্রা এ অবস্থায় গেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
স্থিতিশীল থাকার পর সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে মন্তব্য করে অধ্যাপক রোবেদ আমিন জানান, গত ২০ ডিসেম্বর থেকে দেশে করোনাতে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য খাতে যত চ্যালেঞ্জ: ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ চীনের উহানে শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। এরপর ২০২০ সালের ৮ মার্চে বাংলাদেশে প্রথম তিন জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর করোনায় আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সেই থেকে দেশে করোনা মহামারির শুরু। আশঙ্কা ছিল শীতে এর প্রকোপ বাড়বে। যদিও তখন করোনার প্রকোপ কমে আসে। এরপর সেটি বাড়তে থাকে ২০২১ সালের মার্চ নাগাদ।
এরপর গত বছরের মধ্য জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত ডেল্টার বিধ্বংসী রূপ দেখতে হয়েছে দেশকে। এই সময়ের মধ্যেই করোনা মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ওঠে ৩২ শতাংশে।
সেপ্টেম্বর নাগাদ ধীরে ধীরে ডেল্টার প্রকোপ কমে এলেও এখন আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। স্বাস্থ্যবিধি না মানার চলমান প্রবণতার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। যা কিনা বিশ্বকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপে বাধ্য হয়েছে।
করোনা পরিস্থিতির শুরুতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের এক ভয়াবহ রুগ্ন অবস্থা দেখেছে দেশবাসী। হাসপাতাল তৈরি ছিল না, হাসপাতালে বেড ছিল না, আইসিইউ ছিল না, অক্সিজেন ছিল না। তবে ধীরে ধীরে সেখানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। সেইসঙ্গে করোনাকালে স্বাস্থ্যের দুর্নীতি ছিল পুরো বছর জুড়ে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আগামী বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং সেই বাজেটের যথাযথ প্রয়োগ করাই হবে প্রধান কাজ। কোনও মানুষকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসে ফিরে যেতে না হয়Í সে ব্যবস্থা করতে হবে।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘নতুন বছর স্বাস্থ্যের জন্য, স্বাস্থ্য খাতে ভগ্নচিত্র না দেখতে চাইলে এখানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মহামারি মোকাবিলা। স্বাস্থ্যের কোনদিকে নজর দিতে হবে সেটা আমরা এই মহারিতেই দেখেছি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে আর দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে সবার আগে’।
করোনাকালে আমাদের ভুলগুলো চোখের সামনে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাকে কেন্দ্র করে দেশে অনেক ল্যাব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের মানুষ এখন যেখানে বেসরকারিতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাতে হয়, সেখান থেকে রেহাই পাবে।
ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, দেশের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে হবে। যন্ত্রপাতি কমসহ নানা হয়রানির ভেতর দিয়ে মানুষকে যেতে হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রশাসনিক দুর্বলতার চিত্র দেখা গেছে।
মহামারি মোকাবিলায় আরেকটি বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া দরকার জানিয়ে জাহিদুর রহমান বলেন, টিকা উৎপাদনে যেতে হবে। ভারত যদি টিকা উৎপাদন করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না?
করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে এসেছে, সেইসঙ্গে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করতে যতটা প্রয়োজন ততটা জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে না কবলে মন্তব্য করেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওমিক্রনের শনাক্ত কতজন সেটা সঠিকভাবে রিপোর্টেড হচ্ছে না। প্রকৃত চিত্র বোঝা যাচ্ছে না। তার ফলে চলতি মাসে ওমিক্রনের ব্যাপক বিস্তৃতি দেখা যেতে পারে। এটা নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ।
আবার বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রমে আমরা অনেকখানি সক্ষম হলেও কিন্তু পুরোটা সেফটি নেটওয়ার্কের মধ্যে সেটা আনা যায়নি বা আনতে পারিনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, যার ফলে বাংলাদেশ থেকে যে কোনও নতুন ভ্যারিয়েন্টের উৎপন্ন হবার সম্ভাবনা থেকে যাবে- এটা অনেক বড় সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের ‘সার্ভিস ডেলিভারি সিস্টেম’।
স্বাস্থ্যের এই ডেলিভারি সিস্টেম দেশে এখনও সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অনেক অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, এখানে স্বাস্থ্যসেবা, রেফারেল সিস্টেমকে দাঁড় করাতে পারিনি। রোগীদের ‘হেলথ ইনস্যুরেন্স’ করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটা করা যায়নি। সেইসঙ্গে করোনা সংক্রান্ত আরেকটি সমস্যা হবে, করোনামুক্ত হয়েও পোস্ট কোভিড যে সমস্যাগুলো হচ্ছে সেটাও অনেক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। ‘অটো ইমিউন’ ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে বড় চাপ সৃষ্টি করার আশঙ্কাও থেকে যাবে বলে মনে করছি। স্বাস্থ্যের দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য যে ম্যাকানিজম তৈরি করা উচিত সেই ম্যাকানিজম এখনও তৈরি হয়নি। ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের যখন যোগ্যতা না থাকার পরও ‘চুজ অ্যান্ড পিক’ করা হয় তখন সেটা অনেক বড় ভ্যাকুয়াম তৈরি করে পুরো সিস্টেমের ওপর। এদিকে নজর না দিলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। দুর্নীতি বন্ধ করাটাও স্বাস্থ্যের একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেন অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান। তার মতে, রিওয়ার্ড এবং পানিশমেন্ট-দুটোরই অনেক অভাব দেশে, এই দুটো সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা না থাকলে দুর্নীতির লাগাম টানা যাবে না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com