বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান মজবুত ও শক্তিশালী করতে নগরীর বুকে নান্দনিক রপ্তানি উন্নয়ন ভবন নির্মাণ করবে সরকার। রপ্তানি বৃদ্ধি, পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, পণ্য বহুমুখীকরণ ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যৌক্তিকভাবে বাণিজ্য ভারসাম্য উন্নয়নে বহুমুখী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নগরীতে দৃষ্টিনন্দন এ ভবন নির্মাণ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)।
ইপিবি সূত্র জানায়, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত করতে প্রেক্ষিত পরিকল্পনার আলোকে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের স্থান সুদৃঢ়করণসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- বিকশিত করা হবে। রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, রপ্তানি পণ্যের গুণগতমান ও প্রতিযোগীমূল্য নিশ্চিত করা, পণ্য বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণসহ সম্ভাবনায় তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য এবং সেবা রপ্তানির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
জানা যায়, ‘রপ্তানি উন্নয়ন ভবন’ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চলতি সময় থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ২৩৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর উদ্যোগ ও নিজস্ব অর্থায়নে এ ভবন নির্মাণ শেষ করা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ২০০৪ সালে ব্যুরোর নিজস্ব ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্পটির মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, বিদেশি ক্রেতা ও দেশি উৎপাদনকারকদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সভার আয়োজন এবং ভবনটি বিদেশি নতুন ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর প্রশাসনিক এলাকায় দৃষ্টিনন্দন এ ভবন হবে ১২তলা। বেজমেন্টে থাকবে তিনতলা। ভবনটি নির্মিত হলে মোট ১৫টি ফ্লোরে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৫২ বর্গফুট আয়তনের ব্যবহারযোগ্য জায়গা পাওয়া যাবে। রপ্তারি উন্নয়ন ব্যুরোর দপ্তরের জন্য ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৭৬ বর্গফুট বিশিষ্ট ছয়টি ফ্লোর ও দুটি বেজমেন্ট ব্যবহার করা হবে। অবশিষ্ট ছয়টি ফ্লোর ও একটি বেজমেন্টসহ মোট ১ লাখ ৪৯ হাজার ২৯৩ বর্গফুট এলাকা বাণিজ্যিকভিত্তিতে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা-প্রতিষ্ঠানকে দাপ্তরিক ব্যবহারের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে। তিনটি বেজমেন্টে থাকবে ১৭১টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বর্তমান ভাড়াবাবদ ব্যয় সাশ্রয় ছাড়াও অতিরিক্ত ফ্লোর স্পেস ভাড়া দিয়ে আয় বাড়বে ইপিবির।
ইপিবি জানায়, সরকারঘোষিত নীতি অনুযায়ী দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধিকল্পে রপ্তানি বহুমুখীকরণের উদ্যোগ চলমান। বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নারী উদ্যোক্তা কম। অর্থনীতিতে মাত্র ৭ শতাংশ নারী উদ্যোক্তা, এর মধ্যে খুব কমই রপ্তানিতে নিয়োজিত। অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য কর্মসূচি গ্রহণ করা যাচ্ছে না। ইপিবির নিজস্ব ভবন নির্মিত হলে নারী উদ্যোক্তা থেকে অধিক হারে রপ্তানিতে অংশগ্রহণের বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
সরকার দেশের রপ্তানি বাণিজ্য প্রসারে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম শ্রমনির্ভর রপ্তানিশিল্প স্থাপন, শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক ও সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ, রপ্তানিকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, সহজ শর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রপ্তানিমুখী শিল্পে আন্তর্জাতিকমানের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করা।
এছাড়া রপ্তানিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ভূমিকা রাখা, পণ্যভিত্তিক শিল্প এলাকা বা ক্লাস্টার গড়ে তোলায় সহয়তা, রপ্তানিমুখী শিল্পে সহায়তা, বাজার সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করবে সরকার। রপ্তানিকারকদের তাদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির তথ্য ও বিভিন্ন বাজার সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য নিয়মিত সরবরাহ ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করে রপ্তানি সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলমান। মূলত এ ভবন থেকে এসব কাজের সমন্বয় করা হবে। সরকারের বাণিজ্য সম্প্রসারণের সব পদক্ষেপ বেগবান করবে প্রকল্পটি।
রপ্তানিপণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রতি বছর একটি পণ্যকে ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণার বিশেষ উদ্যোগ চলমান। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন, রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বাড়াতে কার্যক্রম চলছে। বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ও দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেসরকারিখাতের উন্নয়ন তথা রপ্তানিমুখী শিল্পের আয় প্রধান মাধ্যম হিসেবে গঠনের পরিকল্পনা অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মূল লক্ষ্য রপ্তানিকারকদের জন্য নীতি প্রণয়ন ও নীতি সহায়তা দেওয়া, রপ্তানি বাজার তৈরি এবং রপ্তানিসহায়ক সেবা দেওয়া। বর্তমানে দাপ্তরিক অবকাঠামোর অভাবে রপ্তানিকারকদের প্রশিক্ষণ, নীতি সহায়তা ও অন্যান্য সেবা অনেকটা ব্যাহত। এসব কারণেই মূলত দেশের প্রধান আয়ের খাত তথা সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান উৎপাদান রপ্তানি উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানো হবে। নিজস্ব ভবন ও রপ্তানিকারকদের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে রপ্তানি উন্নয়ন ভবনের গুরুত্ব জরুরি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে সরাসরি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী রপ্তানি সহায়ক সেবা বাড়ানো গেলে দেশের আমদানি বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয়ে রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় দেশে দরিদ্র কমবে। এ বিষয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান জাগো নিউজকে বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ভাড়া বাড়িতে কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ পেতে ইমেজ সংকটে পড়েছি। নিজস্ব ভবন নির্মিত হলে বিশ্ব বাণিজ্যে দেশের অবস্থান মজবুত হবে। এসব কারণেই নগরীতে ইপিবির নান্দনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এখানে আলাদা মিটিং রুমও থাকবে। যেখানে বিদেশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে সভা-সেমিনার করতে পারবো, যা আমাদের এক্সপোর্টকে আরও সাপোর্ট করবে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে বহুবার ইপিবি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বারবার পিছিয়ে গেছে। আমরা বিজিএমইএ’র পাশে জমি পেয়েছিলাম, যা হাতিরঝিল প্রকল্পে গেছে। তবে আশা করছি এবার আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই আগারগাঁও এলাকায় নিজস্ব নান্দনিক ভবন নির্মিত হবে।-জাগোনিউজ২৪.কম