‘দোহাই লাগে, অযথা ঝগড়া করবেন না। লাইন সোজা করে দাঁড়ান। সয়াবিন তেল, চিনি, পিয়াজ ও মশুরের ডালসহ সব মালামালের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কমপক্ষে ৩৫০ জনকে দেওয়ার মতো মাল আছে।’ গতকাল সোমবার (৩ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আজিমপুর বাসস্ট্যান্ডের অদূরে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ’র (টিসিবি) পণ্যবাহী ট্রাকের ডিলার উচ্চস্বরে এসব কথা বলছিলেন। এসময় টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কেনার জন্য নারীদের লাইনের সিরিয়াল নিয়ে ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি ও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় চলছিল। সে তুলনায় পুরুষদের লাইন সুশৃঙ্খল দেখা যায়।
টিসিবি’র ডিলার বলেন, এভাবে বলার পরও নারীরা ঝগড়া থামাচ্ছেন না। হট্টগোলের মধ্যেই ট্রাক থেকে তেল, চিনি, পেঁয়াজ ও মশুরের ডাল বিক্রি শুরু হয়।
প্রায় সপ্তাহ খানেক বন্ধ থাকার পর (২৯ নভেম্বর বন্ধ হয়) রোববার (২ জানুয়ারি) থেকে নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য আবারও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ষষ্ঠবারের মতো এ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে টিসিবি।
দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলার ডিলার পয়েন্টে টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি ও সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন এ কার্যক্রম চলবে।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে টিসিবির ট্রাক সেখানেই অসংখ্য মানুষের ভিড়। অধিকাংশ স্পটে দুপুর ১২টার আগে টিসিবির পণ্যবাহী ট্রাক না আসলেও অসংখ্য মানুষ সকাল থেকে সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। নি¤œ আয়ের মানুষের জন্য টিসিবির পণ্য বিক্রির কথা বলা হলেও তাদের বাইরে অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামে পণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়ান। কোথাও কোথাও সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা টিসিবির পণ্য কিনে বাইরে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
টিসিবির পণ্য বিক্রেতারা জানান, ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকায়, মসুর ডাল ৬০ টাকায়, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকায় এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকায় কিনতে পারেন। একজন ক্রেতা সর্বনি¤œ দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, দুই কেজি মসুর ডাল, দুই কেজি চিনি ও পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারেন। রাজধানীর আজিমপুরে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছেন আনুমানিক ৬০-৬৫ বছরের বৃদ্ধ রহিম মিয়া। তিনি জাগো নিউজকে জানান, বাজারে চড়া মূল্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দামে টিসিবির তেল, চিনি, ডাল ও পেঁয়াজ কিনতে পারা যায় বলে তিনি মাঝে-মধ্যেই লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কেনেন। সরকারের এ উদ্যোগের প্রশংসা করে বৃদ্ধ রহিম মিয়া বলেন, প্রতিটি এলাকাতেই কিছু লোক লাইনে দাঁড়ানোর পরোয়া না করে জোর করে পণ্য কিনে নিয়ে যান। এ ব্যাপারে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সাবিহা আক্তার নামের এক নারী অভিযোগ করে বলেন, সরকার গরীব মানুষের জন্য এ পণ্য দিলেও পুরুষ ও নারীদের কেউ কেউ পণ্য সংগ্রহ করে বাইরে বিক্রি করে দেন। তারা একাধিকবার নিজে লাইনে দাঁড়ান এবং অন্যদের লাইনে দাঁড় করিয়ে পণ্য সংগ্রহ করে থাকেন। এর ফলে অনেকে পণ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। আজিমপুরে পণ্যবাহী ট্রাকে থাকা একজন নিজেকে ডিলার দাবি করে বলেন, পণ্যবাহী ট্রাক থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ কেজি মালামাল বিক্রি হয়। সুষ্ঠুভাবে লাইনে দাঁড়ালে কমপক্ষে ৩৫০ জন মানুষকে পণ্য দেওয়া যায়।