শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়া শেরপুরে আগুনে পুড়লো পঁচিশ বিঘা জমির ভুট্টা ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্মাণাধীন দোকানে সন্ত্রাসী হামলা বাগেরহাট নানান আয়োজনে মে দিবস পালিত ভালুকা বিশেষায়িত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন বরিশালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা নগরকান্দায় অগ্নিকান্ডে চারটি দোকান ঘর ভস্মীভূত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না-কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার গলাচিপায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা ও জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালিত

এক দফার আন্দোলন আসছে

খবরপত্র প্রতিবেদন:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২২

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এক দফার আন্দোলনতে বিএনপি শিগগিরই মাঠে নামবে। এই দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপি দেশব্যাপী ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেছি।। কিন্তু দাবি পূরণ না হওয়ায় ওই নির্বাচন বর্জন করে দলটি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনেও বিএনপির দাবি ছিল এটি। দাবি পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। আর মাত্র ৭টি আসন পায় তারা। আগামী বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বছর। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার না হলে, আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা ইতোমধ্যে দিয়েছে বিএনপি। আন্দোলনেই সমাধান দেখছে তারা।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে বৃহৎ একটি রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার উপর জোর দিচ্ছে বিএনপি। গত কয়েক মাস ধরেই দলটি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সেই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। সমমনা দলগুলোর সাথেও আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। জানা গেছে, এক দফা দাবির এই আন্দোলনে এবার বিএনপি ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের ফিগারকে নেতা মেনে নয়, নিজেরাই সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নেতৃত্ব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যু ছাড়া আগামীতে অন্য কোনো ইস্যুতে সরকারের ডাকে সংলাপে না বসারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা আলাপকালে বলেছেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতেই এবার আন্দোলন হবে। একাধিক প্লাটফর্ম থেকেও আন্দোলনের সূচনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃত্বে একটি বৃহৎ প্লাটফর্ম, ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে ভিন্ন একটি প্লাটফর্ম এবং বাম দলগুলো নিয়ে আরেকটি প্লাটফর্ম গড়ে উঠতে পারে। কর্মসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৃহৎত্তর প্লাটফর্মের নেয়া সিদ্ধান্তই অন্য দলগুলো সমর্থন করবে অথবা তারাও স্বাধীনভাবে দলীয় কর্মসূচি নির্ধারণ করে মাঠে থাকবে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সরকারবিরোধী সব পক্ষকে এক টেবিলে বসানোর যে ভাবনা নিয়ে তারা এগোচ্ছেন, তা বিদ্যমান জোটকাঠামোতে সম্ভব না-ও হতে পারে। সরকারবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে পরস্পরের প্রতি আস্থাহীনতার মনোভাব থাকায় আন্দোলনের ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম হতে পারে। এ লক্ষ্যে বিএনপি কয়েক মাস আগে একটি রূপরেখাও তৈরি করেছে, যা জাতির সামনে তুলে ধরে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হবে।
দেশের এ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ভাবনার মধ্যেও পরির্বতন এসেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ করার দাবিতে ২০২২ সালকে আন্দোলনের বছর হিসেবে বেছে নিতে চাইছে বিএনপিসহ অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। চলতি বছর তারা রাজনীতির মাঠ কাঁপানোর লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা করছে। রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মিত্র দলগুলোর বাইরে বামধারার রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্য সরকারবিরোধী ছোট ছোট দলের নেতাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তাভাবনা করছে। ইতোমধ্যে বিএনপির শীর্ষনেতারা জোটের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন। তবে শুরুতেই আন্দোলনের কর্মসূচি কী হবে, সেসব বিষয় নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো আলোচনা হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোও রাজপথে দৃশ্যমান আন্দোলন কর্মসূচি শুরু করতে বেশি সময় নিতে চাইছে না। গণমাধ্যমকে বিএনপি নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। তাই আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য রাজপথে আছি। এসব বিষয় নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করার জন্য সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। বিএনপি মনে করছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এই সরকারের হাতে নিরপদ নয়। তাই দেশ ও জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই রাজপথে সব রাজনৈতিক দল দৃশ্যমান কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে। চলতি বছর হবে আন্দোলনের বছর। এদিকে র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং ১২ বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থার জাতিসংঘের শান্তি মিশনে অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারির আহ্বানের পর বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এ আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ইভান স্টেফানিক। ইইউর পররাষ্ট্র সম্পর্ক ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বরলির কাছে লেখা চিঠিতে তিনি একই সাথে সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন, রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্বের অভিযোগ এনে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ইইউর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নির্বাচন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র পথ। এর কোনো বিকল্প নেই। এই লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি ও জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনতে হবে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, এবারের আন্দোলন সফল হবে। তাদের ভাবনা, সরকারের উপর নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে দেশী-বিদেশী কঠিন চাপ রয়েছে। এই চাপ আগামী দিনে আরো বাড়বে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশে গণতন্ত্রহীনতা, গুম খুনের কারণে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আসতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ নিয়ে বিশ্বে মানবাধিকারকর্মীরা একটি কঠিন অবস্থানে গেছে। জাতিসঙ্ঘও তাদের সঙ্গে একমত হচ্ছে। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশ যারা মানবাধিকারে বিশ্বাস করে, তারাও তাদের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে মত প্রকাশ করছে। সুতরাং তারাও পুরো বাংলাদেশের ভেতরের মানুষ যেমন করে পর্যবেক্ষণ করছে সেভাবে অবস্থান নিচ্ছে। মানুষ অবস্থান নিচ্ছে বলে হাজার হাজার মানুষ এখন রাস্তায় বেরিয়ে আসছে। একইভাবে বিশ্বে আন্তর্জাতিকভাবে যারা আছে তারাও কিন্তু অবস্থান নিয়ে ফেলেছে। তারা পরিষ্কারভাবে বাংলাদেশের কাছে তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করছে। এরকম একটি অগ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা নিয়ে সরকার সামনে এগিয়ে যেতে পারবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একটু কমলে দেখবেন আন্দোলন কাকে বলে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কপাল ভালো। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। জনগণ রাজপথে অলরেডি নেমে গেছে। জনতার স্রোতে ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে যাচ্ছে। সংক্রমণ একটু হ্রাস পেলে দেখবেন আন্দোলন কাকে বলে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাকশাল-গণতন্ত্রহত্যার কালো দিবস’ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপি যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশে আজ নতুন রূপে বাকশাল কায়েম হয়েছে। মানুষ কথা বলতে পারে না। সাংবাদিকরা লিখলে সাগর-রুনির পরিনতি ভোগ করতে হয়, জেলে যেতে হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে টুটি চেপে ধরে রেখেছে। অনেক সাংবাদিক আজ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপি লবিস্ট নিয়োগ করেছে! লবিস্ট কী জিনিস তাই তো আমরা জানতাম না। ২০১৪ সালে রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসে নানা অপকর্ম ঢাকতে আপনারাই অর্থ দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন। আপনারা বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গুম করছেন। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করছেন, ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন তা কি বিশ্ব দেখে না?
রাজনৈতিক বিতর্কের মুখেই জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে নির্বাচন কমিশন গঠন আইন। বিগত দুটি নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে যে নীতি সরকার অনুসরণ করেছে, মূলত তা-ই এবার বিস্তৃত করে আইনি রূপ দেয়া হয়েছে। নতুন এই আইন পাসের আগেই সরকারি দলের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিসহ বিরোধী বহু দল তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, ‘এই আইন অর্থহীন, আরেকটি পাতানো নির্বাচনের নীলনকশা।’ বিরোধী দলগুলো মনে করছে, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
জানা গেছে, বিএনপি তাদের নেতৃত্বাধীন একাধিক জোট ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে এখন নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে ‘এক দফা’ আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে বৃহৎ একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠনের চেষ্টা চলছে। ইসি আইন পাসের একদিন পর গতকাল বিএনপি জরুরি ভিত্তিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেছে। জানা গেছে, বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার দলীয় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। একই সাথে এই দাবি আদায়ে আন্দোলনের কলাকৌশল কী হবে তা নিয়ে শীর্ষ নেতারা মত দিয়েছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com