জেলার বিস্তির্ণ হাওর এলাকায় এখন নয়নাভিরাম পিউম ফুলের সমারোহ। যে কাউকে এই ফুল মুগ্ধ করছে। সবুজের মাঝে বর্ণিল এই ফুলে হাওরে অন্যরকম সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন- হল্যান্ডে বসন্তকালে টিউলিপ ফুলকে কেন্দ্র করে যেভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। চাইলেই আমাদের এলাকায় পিউম ফুলকে কেন্দ্র করে এভাবে পর্যটনের বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
যদিও এখন হাওরে বোরো ধান আবাদের ধুম পড়েছে। অথচ কিছুদিন পূর্বেও যেখানে ছিল বিশাল জলরাশি। এখন ধান গাছগুলো বড় হয়ে হাওরের বুকে সবুজের ঢেউ বইবে। তবে এর মাঝেও কিছু-কিছু সবুজ চোখে পড়বে। এই সবুজ হল একধরনের আগাছার উপস্থিতি। সেই নিছক আগাতেই আবার ফুটছে নয়নাভিরাম পিউম ফুল।
জেলা শহরের পাশেই অবস্থিত কালারডোবা। যেখান থেকে বর্ষাকালে হাওর এলাকার নৌকা ছাড়ে। এখন শুকনো মৌসুমে স্থানটি যেন বিরানভূমি। সেখানে গেলেই দেখা যায় পিউম গাছের উপস্থিতি। হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের দুই পাশেই চোখে পড়বে এই ফুলের। স্থানীয় লোকজনও এই ফুলকে তেমন গুরুত্ব দেয়না। তবে বাহির থেকে আসা লোকজন এই ফুল দেখে মুগ্ধ হন। গাড়ী থেকে নেমে কেউ-কেউ ছবিও তুলেন। হবিগঞ্জের হাওর এলাকায় এই ফুলকে অনেকেই ঝরণা ফুল বলে থাকেন। হবিগঞ্জসহ সিলেট অঞ্চলের সকল হাওরেই পিউম ফুল দেখা যায়। মূলত শুকনো মৌসুমে চারা গজায় এবং জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পিউল ফুল ফোটে। হাওরে পুরো বর্ষার জল আসার আগেই ফলের বীজ পরিপক্ব হয়ে ভূমিতে পড়ে। সে বীজ জলের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পানি কমলেই সেই বীজ থেকে চাড়া গজায়। অনেক সৌখিন ব্যাক্তি এই গাছ সংগ্রহ করে নিজের বাগানেও লাগান।
হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব বলেন, পিউম একবর্ষজীবী দ্রুতবর্ধনশীল বীরুৎ এবং তিন-ছয় ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। কান্ড সবুজ, কাঁটাযুক্ত ও ঝোপালো। পাতা যৌগিক এবং পত্রফলক পাঁচ থেকে সাতটি চারদিকে সন্নিবেশিত থাকে। শাখার আগায় লম্বা মঞ্জরিতে ফুল ধরে। ফুল বেগুনি-গোলাপি অথবা সাদা রঙের হয়ে থাকে। প্রতিটি ফুলের পাঁচটি পাপড়ি এবং ছয়টি লম্বা পুংকেশর থাকে। বসন্তের প্রাক্কালে এবং শরৎ এর পূর্ব পর্যন্ত ফুল ধরে। প্রজাপতি এ ফুলের মধু পান করতে আসে। ঢাকা শহরের ফুলের বাগানেও মাঝে মাঝে পিউম দেখা যায়। এটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্লেওমি হাসলেরিয়ানা’ ইংরেজি নাম‘স্পাইডার ফ্লাওয়ার, পিংক কুইন’। পিউম আর্দ পতিত জমি, হাওরের কান্দা, বাড়ি ঘরের আশপাশে এবং ছোট-বড় সড়কের পাশে ব্যাপক জন্মায় এবং প্রকৃতিতে ফুলের উজ্জ্বলতা ছড়ায়। পিউম দক্ষিণ আমেরিকার উদ্ভিদ। আদি আবাস আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়ে এবং দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিল। বর্ণিল সৌন্দর্যের জন্য উষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই গাছের রোগ বালাই নাই তেমন। পানি অল্পতে এরা স্বাচ্ছন্দ। এই ফুলের বিকাশের সাথে সাথে প্রজাপতি, হার্মিংবার্ড ও বিভিন্ন পতঙ্গের আনাগোনা দেখা যায়।
তিনি আরও বলেন, হল্যান্ডে বসন্তকালে টিউলিপ ফুলকে কেন্দ্র করে যেভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। চাইলেই আমাদের এলাকায় পিউম ফুলকে কেন্দ্র করে এভাবে পর্যটনের বিকাশ ঘটানো সম্ভব।