শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ অপরাহ্ন

সালাম

মাওলানা আবুল হাসান
  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ইসলাম ধর্মের অতুল সৌন্দর্যময় দিকগুলোর একটি সালাম। ইসলামপূর্ব জাহেলী যুগের কথা, যাযাবর আরব বেদুঈনরা ছিল কলহ প্রিয়। লুট, হত্যা তাদের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ধারালো তলোয়ার, ধারালো অস্ত্র সদা তাদের কাঁধে ঝুলত। ঘর থেকে বের হয়ে অক্ষত ফিরে আসার নিশ্চয়তা ছিল না। এমনই ধূরন্ধর অন্ধকারচ্ছন্ন সময়ে ইসলাম এসেছে মহাশান্তির বাণী নিয়ে। ইসলামের বিধান পরস্পর সাক্ষাতে তলোয়ার নয় ; হবে সালামের ব্যবহার। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মু’মিন না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না৷ আর মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না পরস্পর স¤প্রীতি না হবে। আমি কি তোমাদের এমন পথ দেখাব যার দ্বারা তোমাদের পরস্পর স¤প্রীতি তৈরি হবে ? (তবে) একে অপরে সালামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার করো। (সহীহ মুসলিম, ১৯৪)
অপর হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে লোক সকল ! সালাম প্রসার করো, লোকজনকে খাবার দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো, নামাজ পড়ো তখন যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (এসবের ফলে) শান্তিতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে তিরমিযি, ২৬৫৩)
বুখারী মুসলিমের বর্ণনা, জনৈক ব্যক্তি একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলো, ইসলামের কোন বিষয়টি সর্বোত্তম ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর করলেন, খাবার খাওয়াবে, পরিচিত অপরিচিত নির্বিশেষে সালাম দিবে।
মানবেতিহাসের নানা প্রেক্ষিতে সালাম : সালাম অর্থ শান্তি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একটি গুণবাচক নাম ‘আসসালাম’। বায়হাকী ও বাজ্জার রাহিমাহুল্লাহ হযরত ইবনে মাসউদ রা. এর সূত্রে বর্ণনা করেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আস-সালাম”আল্লাহ তাআ’লার নাম সমূহের একটি। পৃথিবীবাসীর জন্য এটা নির্বাচন করেছেন। সুতরাং তোমরা নিজেদের মধ্যে তা প্রসার করো। মানবসৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই রয়েছে সালামের ব্যবহার। হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআ’লা আদম আ. কে সৃষ্টির পর ফেরেশতাদের একটি দলের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘যাও তাদেরকে সালাম দাও, এবং লক্ষ করো তারা কী প্রতিউত্তর করে, কেননা এটা তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির অভিবাদন।’ তখন আদম আ. বললেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’। উত্তরে ফেরেশতারা বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। (বুখারী, মুসলিম) আল কোরআনুল কারীমে বহু আয়াতে আল্লাহ তাআ’লার পক্ষ থেকে নবীদের ওপর সালামের কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন, -ইবরাহীমের ওপর সালাম (সুরা সাফফাত, ১০৯)। -মুসা ও হারুনের ওপর সালাম (সুরা সাফফাত ১২০)। -নূহের ওপর উভয় জগতে সালাম (সূরা সাফফাত ৭৯)। -রাসূলগনের ওপর সালাম (সুরা সাফফাত ১৮১)।
আমাদের ধর্মের নাম” ইসলাম”। ইসলাম শব্দের মূল ধাতুতে রয়েছে সালাম। ইসলামের ঐশী গ্রন্থ আল কোরআন মানুষকে আহ্বান করে সালামের পথে, শান্তির পথে। আল্লাহ তাআ’লা বলেন: ‘এসেছে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে নূর ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ অনুসরণ করে তাদেরকে এই কিতাব সালাম তথা শান্তির পথ প্রদর্শন করে।’ (সুরা মায়িদাহ, ১৫-১৬)
দুনিয়ার জীবনে যারা আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টির পথে চলবে, তাদের জন্য রয়েছে চির শান্তির ঠিকানা জান্নাত। জান্নাতের এক নাম “দারুস সালাম”। আল্লাহ বলেন, ‘এটা তোমার প্রতিপালকের মনোনীত সরল পথ। নিশ্চয়ই আমি আয়াতসমূহ উপদেশ গ্রহণকারী স¤প্রদায়ের জন্য বিশদ বর্ণনা করেছি। তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের কাছে রয়েছে দারুস সালাম তথা শান্তির নিবাস। তিনি তাদের কৃতকর্মের অভিভাবক।’ (সুরা আনআ’ম ১২৬-২৭)
‘যারা কুফর শিরক বর্জন করে এই দুনিয়ার জীবনে খাঁটি ঈমান নিয়ে থাকবে, মৃত্যুকালে ফেরেশতারা তাদেরকে সালাম করবে। অনন্তকালের জন্য জান্নাতের অফুরন্ত সুখের সুসংবাদ দিবে। কোরআনের বর্ণনা, ‘(কুফর-শিরক থেকে) পুতঃপবিত্রাবস্থায় ফেরেশতারা যাদের মৃত্যু ঘটাবে তাদেরকে ফেরেশতাগণ বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম (শান্তি)। জান্নাতে প্রবেশ করো তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ৷ (সুরা নাহাল ৩২)
ঈমানদারগণ জান্নাতে প্রবেশের পরে পরস্পরে সাক্ষাৎ হবে। জান্নাতের সাক্ষাতেও তাদের অভিবাদন হবে সালাম। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা, ‘সেখানে তাদের ধ্বনি হবে হে আল্লাহ, আপনি মহান , পবিত্র। তাদের অভিবাদন হবে সালাম’ (সুরা ইউনুস ,১০)।
জান্নাতবাসীরা জান্নাতে কল্পনাতীত নিয়ামত ভোগ করবে। সেসব নিয়ামতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো মহান প্রতিপালকের দর্শন। যখন মুমিনগণ আল্লাহকে দেখবে তখন আল্লাহ তাআ’লা মুমিনদের অভিবাদন স্বরূপ সালাম দিবেন। কোরআনের বর্ণনা, ‘ সালাম পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হতে সম্ভাষণ।’ (সুরা ইয়াসীন ৫৮)
সালামের গুরুত্ব ও ফযীলত জ্ঞাপক কিছু আয়াত ও হাদীস: আল্লাহ তাআ’লা বলেন, ’যখন আপনার নিকট ঈমানদারগণ আসে আপনি তাদের বলুন, সালাম (তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক)( সুরা আনআ’ম ৫৪)। উপরি-উক্ত আয়াতে আল্লাহ স্বয়ং রাসূলকে সালাম দেওয়ার কথা বলেছেন৷ এতে সালামের মর্যাদা স্পষ্ট প্রতীয়মান। অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘রহমানের বান্দা তারাই যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে, এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ লোকেরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে সালাম।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে নিজের বান্দা বলে উল্লেখ করেছেন যারা অজ্ঞ লোকদের সম্বোধনেও সালাম বাক্য বলে।
সুরা নিসায় আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমাদের অভিবাদন করা হয় তখন তোমরা এরচে’ উত্তম প্রত্যাভিবাদন করবে অথবা তার অনুরূপ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআ’লা সর্ব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। ’
আয়াতে অভিবাদন তথা সালামের জবাব দেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
হাদীস: সাহাবি আবু শুরাইহ রা. একদা রাসূলকে জিজ্ঞেস করেন। হে আল্লাহর রাসূল, এমন আমলের কথা বলে দিন যা আমার জন্য জান্নাত অবধারিত করবে৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, উত্তম কথা বলো, অন্যকে আহার করাও, সালাম দাও। (তাবারানী, সহীহ ইবনে হিব্বান, মুস্তাদরাকে হাকীম)
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এক মুসলমানের ওপর অন্য মুসলমানের পাঁচটি অধিকার: ১ সালামের জবাব দেওয়া ২ অসুস্থকে দেখতে যাওয়া ৩ জানাযায় অংশগ্রহণ করা ৪ দাওয়াতে সাড়া দেওয়া ৫ হাঁচির জবাব দেওয়া (বুখারী, মুসলিম)। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, রহমানের ইবাদত করো, সালামের ব্যাপক প্রসার করো, আহার করাও, (এসবের মাধ্যমে) জান্নাতে প্রবেশ করো। (ইবনে হিব্বান, তারগীব তারহীব ৪/৪২৫)
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, সবচে অক্ষম সে যে দুয়ায় অক্ষম। সর্বাধিক কৃপন সে যে সালাম দিতে কার্পণ্য করে। (তাবারানী, তারগীব তারহীব ৪/৪৩০)।
সালাম দেওয়ার বিধান ও পদ্ধতি: সালাম দেওয়া সুন্নত । সর্বনি¤œ পরিমাণ হল “আসসালামুআলাইকুম “। আর উত্তম হলো পূর্ণ সালাম অর্থাৎ “ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু” বলা। এক্ষেত্রে সবিশেষ লক্ষণীয়,সালাম যাতে স্লামালাইকুম কিংবা এ জাতীয় অন্য কোনো অশুদ্ধ বাক্যে না হয়।এতে সালামের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাতে শৈথিল্য প্রদর্শন হয় । উপরন্তু এর দ্বারা সাওয়াব না পাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
সালাম দেওয়া সুন্নত হলেও সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব।সুতরাং কেউ সালাম দিলে অবহেলা বা উদাসীনতা করে উত্তর না দিলে ওয়াজিব পরিত্যাগের গুনাহ হবে। উত্তরে ওয়ালাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু বলবে।
নিয়ম হলো, সালাম দাতা যে বাক্যে সালাম দিবে তার চেয়ে বাড়িয়ে পূর্ণ বাক্যে উত্তর করবে । আর যদি সালাম দাতা পূর্ণ বাক্যে সালাম দেয় তাহলে এটাই উত্তরে বলবে। সালাম দাতাকে শুনিয়ে উচ্চস্বরে জবাব দেওয়া কর্তব্য। শব্দ না করে ইশারা কিংবা অন্য কোন পদ্ধতিতে সালাম দেওয়া নিষেধ । নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে অন্য স¤প্রদায়ের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করল সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় । তোমরা ইহুদী- খৃস্টানের সদৃশ হয়ো না। ইহুদিদের সালাম আঙ্গুলের ইশারায়, খৃস্টানদের সালাম কব্জির ইশারায় ।(তিরমিজি)
সুতরাং সালাম অবশ্যই সশব্দে হতে হবে । বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে প্রয়োজনবশত শব্দের সাথে হাত উঠানোর অবকাশ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অযথা হাত উঠাবে না। পারস্পরিক সম্ভাষণমূলক বাক্যালাপে মুসলমানদের রয়েছে সালাম । সালাম হল “আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ”,। অর্থাৎ আপনাদের উপর শান্তি, আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে রহমত, বরকত বর্ষিত হোক। আল্লাহর রহমত শান্তির অত্যুজ্জ্বল নিবেদন আর চির কল্যাণ কামনায় দেদীপ্যমান এ শালীন ভদ্রোচিত শব্দমালার বিপরীতে বিধর্মীরা ব্যবহার করে “শুভ সকাল, শুভ রাত্রি”ইত্যাদি। শুভ সকাল , শুভ সন্ধ্যা কিংবা এ জাতীয় অর্থ জ্ঞাপক ভিনদেশী কোন শব্দের তুলনায় “সালাম”অধিক অর্থবহ ও সঙ্গতিপূর্ণ । এসব বাক্যে আছে সময় কাল পাত্রভেদে কল্যাণকামিতা। আর সালামে রয়েছে ব্যাপকতার সঙ্গে আল্লাহর পক্ষ হতে চিরশান্তি রহমত বরকতের কামনা।শান্তি আর রহমতবিনে কোনো নির্দিষ্ট সময় শুভ হওয়া অসম্ভব। সুতরাং এসব মুখরোচক বাহ্যিক চটকদার শব্দমালা সালামের পরিবর্তে ব্যবহার নেহায়েত বোকামি। কেউ চাইলে সালামের পরে এসব বাক্য ব্যবহার করতে পারে। যদিও সালামের অর্থ জানা ব্যক্তিমাত্রই বলবে সালামের পরে এসব বাক্য জ্যোতিহীন , বেমানান।
অমুসলিম বিধর্মীদের সালাম দেওয়া নিষেধ। তাদের সঙ্গে আলাপচারিতার প্রয়োজন বশত শুভ সকাল , শুভ রাত্রি এ জাতীয় শব্দ বলার অবকাশ রয়েছে ।
সালামের অপর একটি অনুষঙ্গ “অনুমতি”। কারো বাড়িতে গিয়ে হুট করে প্রবেশ করা শরীয়তে নিষেধ । আল্লাহ তা’আলা বলেন- হে মুমীনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীর অনুমতি না নিয়ে এবং সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না। এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলকর, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। ( সূরা নূর , ২৭)
অনুমতির নিয়ম হলো, কারো বাড়িতে প্রবেশের পূর্বে প্রথমে সালাম দিবে। এরপর বলবে “আমি কি প্রবেশ করতে পারি”? যদি কেউ সাড়া না দেয় দ্বিতীয়বার বলবে। এবারেও সাড়া না পেলে তৃতীয়বারের মতো বলবে। এর পরও কোনো জবাব না পেলে ফিরে আসবে।
যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া নিষেধ:সালাম দেওয়া সুন্নত। তবে কিছু কিছু অবস্থায় সঙ্গত কারণেই সালাম দেওয়া মাকরুহ (অনুচিত)। যেমন নামাজ, তেলাওয়াত,জিকিররত অবস্থায় , খুতবা দেওয়ার সময়। কেউ কারো কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনছে তাকেও সালাম দেওয়া নিষেধ। বিচারক বিচারকার্যে আছেন তাকে সালাম দেওয়া অনুচিত। মাসআলা-মাসায়েল আলোচনাকারীকে ওই অবস্থায় সালাম দেওয়া উচিত নয়।আজান ইকামত দিচ্ছেন অথবা শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন এ অবস্থায় সালাম দিয়ে বিঘœতা সৃষ্টি করা ঠিক নয়। গায়রে মাহরাম বা চিরকালের জন্য যেসব মহিলার সাথে বিবাহ হারাম তারা ব্যতীত অন্য মহিলাদেরকে সালাম দেওয়া নাজায়েজ। অমুসলিমদের সালাম দেওয়া যাবে না । পেসাব, পায়খানারত অবস্থায় অথবা সতর খোলা অবস্থায়, আহাররত অবস্থায় সালাম দেয়া অশোভনীয়।
শেষকথা:উপরি-উক্ত একাধিক হাদিসে সালামের ব্যাপক প্রচার-প্রসারের কথা উল্লেখ রয়েছে। আর এটা তখনই সম্ভব হবে যখন ব্যক্তি ,পরিবার ,সমাজ সর্বত্রই সালামের চল থাকবে।
ব্যক্তির সালাম :পরিবার আর সমাজ মূলত কতগুলো ব্যক্তির সমষ্টি । সুতরাং ব্যক্তির মাঝে যখন সালামের অভ্যাস থাকবে তখন অনায়েসেই পরিবার ও সমাজে সালামের প্রচলন হয়ে যাবে। এজন্য প্রতিটি মুসলমানেরই কর্তব্য নিজের মধ্যে সালামের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা এবং পূর্ণরূপে গুরুত্ব দেওয়া।
পরিবারে সালাম:সালামের ব্যাপক প্রচার প্রসারের অন্যতম ক্ষেত্র হলো পরিবার। প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযিআল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে ছেলে ! যখনই তুমি তোমার ঘরে ঢুকবে সালাম দিবে ।তোমার সালাম তোমার ও তোমার পরিবারের লোকদের জন্য বরকতের কারণ হবে। (সুনানে তিরমিজি, ২৬৯৮)।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়মিত আমল ছিল ,ঘরে ঢুকে স্ত্রীদের সালাম দিতেন। পরিতাপের বিষয়, আমাদের সমাজের চিত্র হলো, গোনা কয়েক পরিবার ছাড়া সমাজে স্বামী-স্ত্রীর সালাম বিনিময় সোনার হরিণ তুল্য।
এর অনিবার্য ফল হল বিবাদমান পারিবারিক ঝগড়া কলহ। সালামের রীতি ফিরে আসুক আমাদের পরিবারে । তাহলে ইনশাল্লাহ ঐতিহাসিক সোনালী সংসারের পুনরাবৃত্তি হবে।
সালাম দেওয়া সুন্নত, শিষ্টাচার। সন্তানের জন্য বাবা- মাকে সালাম দেওয়া দ্বিগুণ শিষ্টাচার। অথচ বাস্তব সত্যি হলো , আমরা আমাদের বাবা-মাকে সালাম দিতে লজ্জাবোধ করি। অথচ সালাম তো শান্তি ,রহমত ও বরকতের কামনা। এ শুভকামনা আমি অপরিচিতের জন্য নির্দ্বিধায় করতে পারি । আর বাবা-মার ক্ষেত্রে লজ্জা।?
কথা কি, সালাম মূলত অনুশীলন সাপেক্ষ বিষয়।ছোটবেলা থেকে সালাম চর্চার অনুশীলন করতে হবে। আর অনুশীলন কেন্দ্র হল পরিবার, আত্মীয়-স্বজন। এ অনুশীলন তখনই যথাযথ কার্যকর হবে যখন বড়রা ছোটদের সালাম দিয়ে অভ্যাস করাবে। বহু হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবাগণ ও তাবেয়ী কর্তৃক ছোট বাচ্চাদের সালাম দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সতর্ক দৃষ্টি থাকতে হবে বাবা-মায়ের। স্বামী-স্ত্রী যখন পরস্পরে সালামে অভ্যস্ত হবে এবং সন্তানদের সালাম দিবে তখন সন্তানরা খুব সহজেই সালাম আত্মস্থ করে নিতে পারবে। অন্যথায় যে পরিবারে কখনো সালামের কানাঘোষা হয়নি সে পরিবারের ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে স্বতঃস্ফূর্ত সালাম দিতে লজ্জাবোধ করা নির্জলা স্বাভাবিক।
সমাজে সালামের প্রচলন: সমাজে সালামের প্রচলন, সালামের ব্যাপক প্রচার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে হাদিসে কিছু দিকনির্দেশনা রয়েছে। যেমন , আরোহী পথচারীকে সালাম দিবে। পথচারী বসা ব্যক্তিকে সালাম দেবে। অল্প সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যককে সালাম দিবে। আগন্তুক স্থানীয়কে সালাম দিবে ইত্যাদি।
সালামের ব্যাপারে কুরআন হাদিসে এত গুরুত্বারোপের একটি কারণ, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে স¤প্রীতি-সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া, ব্যক্তি পর্যায়ে মানুষ বিনয়ী হওয়া। আরোহীর যাতে পথচারীর বিপরীতে স্বঅবস্থানের ওপর অহংবোধ না হয় এজন্য তাকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুরূপ উচ্চপদস্থ লোক নি¤œ পেশাজীবীকে সালাম দিবে। মালিক অধীনস্থকে সালাম দিবে। এভাবে সামাজিক বৈষম্য ঘুচে যাবে। মানুষ নানা অবস্থার প্রেক্ষিতে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভাজন হয়। তবে মূল পরিচয় সবাই মানুষ।
হাদিসের ভাষ্য, সকল মানুষ সমান। কোনো আরব অনারবের ওপর মর্যাদাবান নয় । কোনো অনারব আরবের ওপর মর্যাদাবান নয়। হ্যাঁ, মর্যাদা হবে একমাত্র ঈমানের দ্বারা, তাকওয়ার দ্বারা।
সুতরাং যে যেই পদেই সমাসীন হোক বিনয় থাকতে হবে অসামান্য। আর এ বিনয়েরই একটি বহিঃপ্রকাশ হলো সালাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেন, যে সর্বাগ্রে সালাম দেয় সে অহংকার মুক্ত। (শুআবুল ঈমান, বাইহাকী)। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সালামের ব্যাপারে যতœবান হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন। লেখক: শিক্ষার্থী, উলূমুল হাদিস, প্রথম বর্ষ,দারুল ফিকরি ওয়াল ইরশাদ, রসূলবাগ,ঢাকা ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com