টাঙ্গাইলের মধুপুরে সড়কের পুনর্র্নিমাণকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্ন মানের ইটের গুঁড়া খুব অল্প সময়েই সড়কনষ্ট হয়ে যাবে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা। জানা যায়, মধুপুর উপজেলা হেডকোয়ার্টার থেকে চাপড়ী হাট জিসি রাস্তা পর্যন্ত সড়কের পুনর্র্নিমাণকাজ চলমান রয়েছে। এই কাজের চুক্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয় ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক প্রশস্তকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প’র আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলিফ ট্রেডার্স কাজ পেলেও বাস্তবায়ন করছে সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারের কর্মী মিন্টু মিয়া জানান, ৪ হাজার ১০০ মিটার রাস্তার দুই কিলোমিটার ব্যতীত পুরো অংশ ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। এর জন্য আগের পাকা সড়কে পিচ ঢালাইয়ের অংশ ট্রাক্টর দিয়ে ভেঙে আলগা করা হয়েছে। এর ওপরে ছয় ইঞ্চি মেকাডাম (সড়কে পিচের নিচের স্তর) করা হয়েছে। মেকাডামে ব্যবহার করা হচ্ছে ইটের সুরকি ও ইট ভাঙানোর পর বের হওয়া ডাস্ট। যেগুলো খোলা মাঠে স্তূপ করে ভিজিয়ে রেখে রাস্তায় ব্যবহার করা হচ্ছে। ডাস্ট ও সুরকি রাস্তায় ফেলার পর আবার পুরো রাস্তায় ডাস্ট ছিটানোর পর মেশিন দিয়ে রাস্তা সমান করা হয়েছে। এর ওপর দেড় ইঞ্চি পাথর ও বিটুমিন দিয়ে ঢালাই দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে মধুপুর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ইটের খোয়ার সঙ্গে ডাস্ট ব্যবহার একটি নতুন প্রযুক্তি। প্রযুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ ৩৮ ও ১৯ মিলিমিটারের নিচের সাইজের খোয়া এবং ২০ ভাগ ডাস্ট (ধুলাতুল্য ইটের মিহি গুঁড়া) পানি দিয়ে ৩ থেকে ৪ দিন ভিজিয়ে রেখে ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে তৈরি রাস্তা আরও বেশি শক্তিশালী ও টেকসই হবে।’ মধুপুরের নির্মাণ প্রকৌশল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আব্দুল হাকিম বলেন, ‘জলছাদে ইটের সুরকির সঙ্গে ডাস্ট ছাড়াও পাথর চুন, আঠা তৈরির জন্য নালীসহ বিভিন্ন উপকরণ মেশানো হয়। তারপর দুই বা তিন দিন পরপর ৫-৬ বার মিশ্রণগুলোকে পুনরায় উলটপালট করে মেশানো হয়। মিশ্রণগুলো আঠালো হয়ে গেলে ছাদে বিছিয়ে পিটিয়ে দেওয়া হয়। তবে এই রাস্তা নির্মাণে তেমনটা না করে শুধু ইটের খোয়া ও ডাস্ট ব্যবহার হচ্ছে। আঠালো হবে কীভাবে, আমরা বুঝি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সাদা চোখে এই রাস্তার কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের। তবে বিশেষজ্ঞরা কোন পদ্ধতি অবলম্বন করে টেকসই হওয়ার দাবি করছেন, সে বিষয়ে তাঁরাই ভালো জানেন।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ঠিকাদার বলেন, নিম্নমানের উপাদান ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে ডাস্ট ব্যবহার পদ্ধতিটিই। এতে করে রাস্তাটি আগের চেয়েও নিম্নমানের হবে। এই মেকাডামের ওপর দেড় ইঞ্চির কার্পেটিং কদিন পরই উঠে যাবে। টেকসই হওয়ার প্রশ্নই আসে না। মধুপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার বলেন, ‘আগে ডব্লিউবিএম বা ওয়াটার বাউন্ড মেকাডাম পদ্ধতি ছিল। এই প্রকল্পে নতুন পদ্ধতি ডব্লিউএমএম বা ওয়াটার মিক্সড মেকাডাম করা হচ্ছে। এতে করে রাস্তার গুণগত মান আরও ভালো হবে। টেকসই হবে।’ তবে ডব্লিউএমএম পদ্ধতিটি কোন দেশের কোন প্রকল্পের অনুসরণে করা হয়েছে, এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলেনি মধুপুর এলজিইডির পক্ষ থেকে। প্রকল্পের টিম লিডার প্রকৌশলী মো. লোকমান হোসেন বলেছেন, ‘এই পদ্ধতি কোনো দেশ বা কোনো প্রকল্পে অনুসরণ করা করা হয়নি। আমাদের দেশের প্রকৌশলীগণ গবেষণার পর ডব্লিউএমএম পদ্ধতিতে সড়ক নির্মাণ করছেন। মেকাডামে ব্যবহৃত হওয়া ডাস্টগুলো ফিলার হিসেবে কাজ করবে। প্রকল্পটির অধীন সব রাস্তার কাজ এই পদ্ধতিতেই হবে।