সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন

দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে কমছে পাখির সংখ্যা

আব্দুল বাছিত খান কমলগঞ্জ
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

দেশের বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মতো এবারও পাখির সংখ্যা কমেছে। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ২০২০ সাল ছাড়া প্রতিবছর মোট পাখির সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমতে দেখা গেছে। এ বছরের সংখ্যাটি আরো পরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। তবে শুমারিতে অংশ নেওয়া অভিজ্ঞ পাখি পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পাখির সংখ্যা ছিল স্পষ্টতই আগের তুলনায় কম। তাঁরা এ জন্য কিছুটা দেরিতে শুমারি শুরু হওয়া এবং পাখি শিকারসহ বিভিন্ন কারণের কথা বলেছেন। প্রথমবারের মতো সরকারি অর্থায়নে গত ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি হাকালুকি হাওরে দুই দিনের পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয়। আলাপকালে শুমারিতে অংশ নেওয়া পাখি পর্যবেক্ষক ও পরিবেশকর্মীরা পাখির সংখ্যা ও হাওরের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়েছেন। সরকারের বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন (পিওজেএফ) যৌথ উদ্যোগে হাকালুকিতে এবারের শুমারির আয়োজন করে। সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব (বিবিসি)। বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক ইনাম আল হকের নেতৃত্বে তিন সংগঠনের সদস্যরা যৌথভাবে এই শুমারি চালান। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে হাকালুকি হাওর। ১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে ছয় সদস্যের দুটি দল দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে হাওরের ছোট-বড় ৪৫টি বিলে শুমারির কাজ শুরু করেন। এটি বিকেল পর্যন্ত চলে। একইভাবে ১৭ ফেব্রুয়ারিও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত শুমারির কাজ চালানো হয়। শুমারিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক জানান শুমারির কাজ শেষ করে পাখির তথ্য তাঁরা আইইউসিএনকে দিয়েছেন। এটি সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত প্রথম শুমারি। তাই তথ্য প্রকাশের বিষয়টি সরকারি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাবে। পরে পাখির সংখ্যার বিষয়ে আইইউসিএন ও বন বিভাগ তথ্য দেবে। ইনাম আল হক জানান, শুমারিকালে হাওরের ৪৫টি বিলে গত বছরের চেয়ে অনেক কম পাখি দেখা গেছে। গত কয়েক বছর শুমারিকালে হাওর, খাল ও বিলে কয়েকটি মৃত হাঁস পাওয়া গিয়েছিল। এবারও হাওরের নাগোয়া বিলে চখাচখি প্রজাতির একটি পাখি মৃত দেখা গেছে। ২০১৫ সালের ১৮ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি হাকালুকি হাওরে ৩৩ প্রজাতির ৩৭০টি পাখির পায়ে রিং লাগানো হয়েছিল। এর আগে ২০১০ সালের মার্চ মাসে ১৬টি পাখির গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার এবং ৩৪টি পাখির পায়ে রিং লাগানো হয়। সেসব পাখির সন্ধান এবার পেয়েছেন কি না প্রশ্নের জবাবে বার্ড ক্লাবের সদস্যরা জানান, রিং লাগানো একটি পাখিরও সন্ধান এবার পাওয়া যায়নি। ২০১০ সালে যে ১৬টি পাখির গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছিল, তা ২০১১ সাল পর্যন্ত মনিটরিংয়ে ছিল। এর পর থেকে আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। হাকালুকি হাওরকে সরকার ১৯৯৯ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া বা ইসিএ) ঘোষণা করে। তবে এর উন্নয়ন বা জীববৈচিত্র সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ না গৃহীত হওয়ায় পাখির জন্য এলাকাটি প্রকৃত অভয়াশ্রম হয়ে উঠতে পারছে না। অরক্ষিত হাওরে বিষটোপ আর ফাঁদ পেতে পাখি শিকার অব্যাহত থাকায় দিন দিন অতিথি পাখির সমাগম কমছে। পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার কয়েকটি কারণ তুলে ধরেন ইনাম আল হক। তিনি বলেন, হাওরের বেশির ভাগ বিলে এখন পানি অনেকটা কমে গেছে। তাই পাখির সংখ্যাও কমেছে। এবার শুমারি করতে কিছুটা দেরি হয়েছে। এবার শুধু কম পানিতে থাকা পাখির দেখা মিলেছে। তিনি আরো বলেন, সদ্যঃসমাপ্ত শীত মৌসুমে দুর্বৃত্তরা হাওরে বিষটোপ দিয়ে পাখি নিধন করেছে। পাখিরা কোথাও তাদের জীবন বিপন্ন মনে করলে আর সেখানে ভিড় করে না। ইনাম আল হকের অভিমত, পাখির সংখ্যা বাড়াতে হলে বিষটোপ ও অন্যান্যভাবে চলা শিকার বন্ধ করতে হবে। পাখির অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করে তা সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বন বিভাগের সুফল প্রকল্পের পরিচালক গোবিন্দ রায় মুঠোফোনে বলেন, ‘সরকারি অর্থে পরিচালিত শুমারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আইইউসিএনকে। হাকালুকিতে পাখিশুমারি শেষ হলেও অন্য জায়গায় শুমারির কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত রিপোর্ট পাইনি। রিপোর্ট পাওয়ার পর পাখির সংখ্যার বিষয়ে জানতে পারবেন। এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো হাকালুকি হাওরকেও আন্তর্জাতিক চুক্তির অন্তর্ভুক্ত রামসার সাইট ঘোষণার জন্য পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে রামসার সচিবালয় সুইজারল্যান্ডে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, মন্ত্রী বলেন, ‘সুইজারল্যান্ড থেকে এখনো রামসার সাইট ঘোষণার কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। রামসার সাইটের স্বীকৃতি পেলে হাকালুকি হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা হবে। এতে সুরক্ষিত থাকবে হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও পাখি। পরিবেশমন্ত্রী জানান, মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হাকালুকির বড়লেখা-জুড়ীর ছয়টি ইউনিয়নে এবং কুলাউড়া অংশে ভরাট হওয়া ২৮টি পুকুর, তিনটি বিল ও একটি ছড়া খনন করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com