আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশ্যে নোয়াখালী-৪ আসনের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী বলেছেন, কাদের সাহেব আমি আপনার কর্মী ছিলাম, এখন নেই। আমি শেখ হাসিনার কর্মী, আমি বঙ্গবন্ধুর কর্মী। অনেক হয়েছে, আপনি আর পদে আসছেন না।
তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) যতই ভুল বুঝানো হোক, হাম বহিষ্কার নেহি হোগা (আমাকে বহিষ্কার করা হবে না), আওয়ামী লীগ বি নেহি ছোড়েগা (আওয়ামী লীগ আমি ছাড়বো না), নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার, আমিও নেত্রীর (শেখ হাসিনা)।
সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কবিরহাটের সুন্দলপুরের নিজ বাড়িতে নোয়াখালীর সুবর্ণচরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এসব কথা বলেন একরাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মির্জা (মেয়র কাদের মির্জা) আর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক খায়রুল আনম সেলিমসহ যুক্তি করে গুটি চেলে সেটা শেষ করে দিয়েছেন। তিনি রসাত্মক করে বলেন, ওবি আর নেহি আয়েগা।
জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে একরাম চৌধুরী বলেন, আমি অজগর সাপ। আর এ সাপের লেজে পা দিবেন না। আমার ছেলেরা (কর্মী বাহিনী) উন্মুখ হয়ে আছে, ইশারা দিলেই সাইজ করে ফেলবে। বাড়ি থেকেও বের হতে পারবেন না। গত দু’মাস কোন কথা বলিনি কিন্তু আর বসে থাকবো না। জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম ও অ্যাডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীনের উদ্দেশে তিনি বলেন, কে কিভাবে বড়লোক হইছেন সব আমার জানা। সময় আসলে সব বলবো। তবে কোনো ডাকাত (প্রতিপক্ষরা) যাতে সুবর্ণচরে ঢুকতে না পারে সেদিকে আপনারা খেয়াল রাখবেন এবং প্রতিহত করবেন। এসব নেতারা কুঁড়ে ঘরে থেকে মোটরসাইকেল, বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে। নিয়োগ বাণিজ্য, লুট-পাট, দখল বাণিজ্য তারা করেছে। একশ টাকার উকিলও এখন ৫ হাজার টাকার কথা বলে। এরা যে সম্পদের মালিক হয়েছে, এসবের উৎস কোথায়। আমি তো ব্যবসা-বাণিজ্য করি, রাজনীতি করে কামাই আমি করি না। আমাকে নিয়ে খেলবেন না। ২০০১ সালে ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ ও ওবায়দুল কাদের বুঝেছে। আমি কি জিনিস এবং কোন ধরনের খেলোয়াড়। আমাকে নাড়াবেন না, আমিও কম গোঁয়ার না।
একরাম চৌধুরী আরও বলেন, অধ্যক্ষ খায়রুল আনম সেলিম আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মাইজদী শহরে ৩টি বাড়ি করেছেন। আমি সদরের এমপি কিন্তু আমার নোয়াখালী শহরে এক খ- জমিও নেই। তিনিও আমাকে উস্কানি এবং সুড়সুড়ি দেন। উনি ভুলে গেছেন, ঢাকা শহরের একটি জায়গা দখল করে দেওয়ার জন্য সেলিম সাহেব আমাকে সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন- তদবির করার জন্য। এখন ওই সব ইতিহাস সেলিম সাহেব সব ভুলে গেছেন। ৪০ বছর যাবত ইউপি চেয়ারম্যান, একাধিক বার উপজেলা চেয়ারম্যান, দলের সভাপতি থাকার পরও সুবর্ণচরের মানুষের জন্য কিছুই করতে পারেননি। তারা আমাকেই নেতা মানে। তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান করার জন্য আমি নেতা-কর্মীদের হাতে পায়ে ধরেছি। নিজের দেড় কোটি টাকা খরচ করে তাকে উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়েছি। তিনি এখন উপ-নির্বাচনে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এমপি হবেন, মার্কা নৌকা আনলেও সুবর্ণচরের মানুষ আমার, আমি আপনাকে ছাড় দেব না। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে একরাম চৌধুরী হিন্দিতে বলেন, হাম বহিষ্কার নেহি হোগা। আমি দলও ছাড়বো না আর দল থেকে বহিষ্কারও হবো না। সবার কাছে ক্ষমা চাই, কারণ ডাকাত বাহিনীর সঙ্গে লড়ছি কখন কী হয়ে যায় জানি না। আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে একরাম চৌধুরীকে সরিয়ে তাকে জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়। পরে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর কথিত বিরোধিতা করার অভিযোগে তাকে পদ থেকে অব্যাহতি ও দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশসহ কেন্দ্রে চিঠি পাঠায় নোয়াখালী জেলা আহ্বায়ক কমিটি।