সীমান্ত ঘেঁষা একটি ছোট জেলার নাম লালমনিরহাট। এ জেলায় নেই কোন বড় বড় মিল-কল কারখানা। কৃষির উপর নির্ভরশীল এ জেলার মানুষজন। সকাল হলে বেড়িয়ে পরে কাজের সন্ধানে। সব সময় অবহেলায় নিমজ্জিত থাকে এ জেলার খেটে খাওয়া মানুষগুলো। যেহারে বাড়ছে নিত্যপণ্যে’র দাম তাথে বিপাকে পড়েছে নিন্মবিত্ত পরিবার থেকে মধ্যে বিত্তপরিবার গুলো। এমন অবস্হায় লালমনিরহাটে মাস ব্যাপি জেঁকে বসেছে পুনাক বাণিজ্যে মেলা। এই মেলার কারণে এলাকায় বাড়ছে চুরিসহ মাদকের চাহিদা। হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা না করে ঝুঁকে পড়েছে মেলার দিকে। মেলায় নভেল করোনা ভাইরাস ওমিক্রন রোধে নেই কোন স্বাস্থ্যবিধি। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারী থেকে লালমনিরহাট রেলওয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ফুটবল খেলার মাঠে পুনাক বাণিজ্যে মেলা শুরু হয়। পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) ব্যানারে মেলাটি পরিচালনা’র দায়িত্বে রয়েছেন রংপুরের প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট নামক একটি প্রতিষ্টান। উক্ত প্রতিষ্টানটি খেলার মাঠ দখল করে চালাচ্ছেন মাস ব্যাপি মেলা। ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড়বৃন্দ। মেলায় কেনাকাটার টাকা জোগান দিতে শহরে বাড়ছে চুরি। মেলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াসহ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা প্রকাশ্যে মাইক বাজিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে পুরো জেলা জুড়ে। মেলায় লোভনীয় অফারে যেসব পন্য বিক্রি করা হচ্ছে তা অতি-নি¤œমানের। দামও অনেক বেশি। মেলার ভিতরে যেসব খাদ্য সামগ্রী রয়েছে তা পচা ও বাসি। হরেক রকমের রং মিশানো খাবারে। যা স্বাস্থ্য সম্মত নয়। মেলায় যেতে টাকা জোগান দিতে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছেন বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে। ১২ জানুয়ারী পুনাক বাণিজ্য মেলা শুরু থেকে সদরে যেসব বাসা-বাড়ি চুরি সংঘটিত হয়েছে। সেসব বাসা-বাড়ি হল, শহরের পৌরসভাধীন ৮নং ওয়ার্ডের উচাটারী এলাকার সেনাবাহিনীর (অবঃ) কর্মকর্তা রতন সরকারের বাসায় দিন-দুপুরে টিন কেটে চুরি করেন চোরের দল। পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের আদর্শপাড়া এলাকার নাপিত রতনের বাসায় দিন দুপুরে চোরের দল ঢুকে সবকিছু চুরি করেন। একই ওয়ার্ডে আরামবাঘ হোটেলের মালিক আজিজুল হকের বাসার সবকিছু চুরি হয়ে যায় এবং ওই ওয়ার্ডের আব্দুল কুদ্দুস মোল্লার বাসাসহ বেশ ক’টি বাসা বাড়ির সবকিছু চুরি হয়। পৌর শহরের ২নং ওয়ার্ডের যমুনা ক্লিনিকের মালিক আলহাজ্ব এর নবনির্মিত ভবনের রড চুরি হয়। একই ওয়ার্ডের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ইউনুছ আলীর ভাড়াটিয়া মেকার সাইফুলের বাসার কোন কিছুই মালামাল রাখেনি চোর। পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের কলেজ বাজারে শিশু ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের পিছনের একটি বাড়িতে চুরি সংঘটিত হয়েছে। সেখানেও তালা ভেঙ্গে তার বাসা বাড়ির সব মালামাল চুরি করেন চোরের দল। অপরদিকে ১৪ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাজারে আজিজুল ষ্টোরের ওয়াল ভেঙ্গে গোডাউন ঘরে ঢুকে প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পৌর কাউন্সিলর জানান, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে পড়ে চোরের দল। বাণিজ্য মেলার কারণে এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ির সুপারিসহ ক্ষেতের আলু চুরি হয়ে যাচ্ছে। মেলাটি বন্ধে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামণা করছি। ক’জন শিক্ষার্থীদের অভিভাবক বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা প্রতিদিনে মেলা যেতে টাকা চায়। টাকা না দিলে বাড়ি মালামাল চুরি করেন। বর্তমান দ্রব্যমুল্যের যে উর্দ্ধগতি সংসার চালানো মুশকিল। তার উপর মেলা। সামনে পরীক্ষা, মেলার কারণে তারা কোন পড়াশোনা করছেন না। মেলাটি বন্ধ জরুরী হয়ে পড়েছে। রেলওয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ফুলবল খেলার মাঠের খেলোয়াড় নিলয় আহমেদ বলেন, আমরা নিয়মিত শহীদ সোহরাওয়ার্দী ফুটবল খেলার মাঠে খেলাধূলা করতাম। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে পুনাক বাণিজ্য মেলা কারণে ওই মাঠে খেলাধূলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এ বিষয়ে পুনাক বাণিজ্য মেলার রংপুরের প্রিন্স ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিচালক আরিফুল ইসলাম আঙ্গুর বলেন, আমরা মেলার নামে কোন অনৈতিক কাজ করছি না। সব রকম নিয়ম মেনে মেলা পরিচালনা করছি। এ বিষয়ে পৌর মেয়র রেজাউল করিম স্বপন বলেন, বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে মাদকের আমদানি বেশি হওয়ার কারণে শহরে বেড়েছে ছিছকা চুরি। এমনকি পৌরসভা পানির লাইনের কিছু যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে।