শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
চিতলমারীতে জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রাণ নাশের হুমকি : থানায় জিডি গজারিয়ায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে চমক দেখালেন মীনা খাগড়াছড়িতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান আজিজ উদ্দিন বগুড়া ও জয়পুরহাটে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন জামালপুর সদর উপজেলা পরিষদে বিজন কুমার চন্দরকে বিজয়ী ঘোষণা ডিমলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মেলান্দহে দুগ্ধ সমবায় প্রকল্পের সদস্যদের মাঝে ঋণের চেক বিতরণ গলাচিপায় জেলেদের মাঝে বকনা বাছুর বিতরণ তারাকান্দায় অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে বিএনপির ত্রাণ নুরে আলম সিদ্দিকী শাহীন নাজিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত

বিদ্যুতের দাম বাড়ার আগেই বাড়ানো হলো আলু রাখার খরচ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০২২

বৃহত্তর বগুড়ার হিমাগারগুলোতে ধারণক্ষমতা অনুযায়ী এ মৌসুমে আলু সংরক্ষণে কৃষককে গুনতে হবে বাড়তি ৭৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আলু সংরক্ষণ রেট প্রতি কেজি পাঁচ টাকা দর বেঁধে দেওয়ায় এ বাড়তি খরচ হবে, যা আগের চুক্তিতে ছিল সাড়ে তিন থেকে চার টাকা। প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আলু ১৭৫-২০০ টাকায় রাখা যেতো। এখন সেটি বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হয়েছে।
বৃহত্তর বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক জরুরি নির্দেশনায় এ মূল্য বাড়ানো হয়। যদিও এ বছর হিমাগারের সবচেয়ে বড় খরচ বিদ্যুৎ বিল এখনো এক পয়সাও বাড়ানো হয়নি বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের। পূর্বনির্ধারিত রেটেই তারা বিল পরিশোধ করছে।
হিমাগারের মালিকরা জানান, বগুড়া জেলায় হিমাগার আছে ৩৬টি ও জয়পুরহাটে ২০টি। এর মধ্যে বগুড়ার ৩৬টি হিমাগারে তিন লাখ ১৭ হাজার টন এবং জয়পুরহাটের ২০টি হিমাগারে এক লাখ ৮৫ হাজার টন আলু সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
কৃষকরা জানান, আগে এসব হিমাগারে ৫০ থেকে ৮০ কেজি আলু প্রতি বস্তায় রাখা যেতো। এবার ২০২২ সালে বৈঠক করে কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন দুটি শর্ত আরোপ করে। একটি হলো ৫০ কেজির বেশি আলু বস্তায় রাখা যাবে না, আরেকটি হিমাগার ভাড়া প্রতি কেজি ৫ টাকা হারে দিতে হবে।
মার্চ থেকে নভেম্বর হিমাগারে আলু সংরক্ষণের মৌসুম। মৌসুম শেষে হিমাগার থেকে আলু বের করার সময় ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। চলতি মৌসুম শেষে বাড়তি দামে হিমাগার ভাড়া পরিশোধ করা নিয়ে উদ্বেগে আছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কারণ, গত বছর আলুর দরপতনের কারণে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এ কারণে গত মৌসুমে আলুতে ধস পোষাতে এবার কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন কৃষক ও ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা, দেউলী, কিচক, শিবগঞ্জ, পিরব এলাকার বেশ কয়েকটি হিমাগার ঘুরে দেখা যায়, আলু রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পরিবহনে আলু নিয়ে ভিড় করতে দেখা গেছে কৃষকদের।
হিমাগার মালিকরাও বলছেন, গতবারের তুলনায় আলু হিমাগারে রাখতে কৃষকদের আগ্রহ এবার বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আলু নেওয়া শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যেই স্টোরেজ প্রায় ৯০ শতাংশ ভরে গেছে।
মোকামতলা আরঅ্যান্ডআর পটেটো কোল্ড স্টোরের সামনে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে আলুবোঝাই ট্রাকের বিশাল লাইন চোখে পড়ে। আলুর বস্তা ভর্তি ট্রাক, পিকআপ, ভটভটি ও অটোভ্যানে ভরে গেছে হিমাগারের আঙিনা।
হিমাগারের ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার বস্তা আলু ঢুকছে। হিমাগারে আলু ঢুকাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও থেকে অতিরিক্ত শ্রমিক আনতে হয়েছে। চাপ সামলাতে না পেরে মাঝে মধ্যে দু-একদিন করে বুকিং নেওয়া বন্ধ রাখার ঘোষণাও দেওয়া হচ্ছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আলু নেওয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা শেষ প্রায়। চার-পাঁচদিন পরই আলু রাখা বন্ধ ঘোষণা করা হবে।
একই রকম অবস্থা দেখা গেছে দেউলী ইউনিয়নের এ এইচ জেড কোল্ড স্টোরেজেও। হিমাগারের ভেতরে ঢুকতে না পেরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে আলু ভর্তি ট্রাক, পিকআপ, ভ্যান ও ভটভটি দাঁড়িয়ে আছে।
রংপুর থেকে আসা সাইফুল নামের এক ট্রাকচালক বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে হিমাগারে ঢোকার জন্য অপেক্ষা করছি। ভেতরে প্রচ- চাপ থাকায় ঢুকতে পারছি না।
ওই কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আতিয়ার রহমান অ্যাপোলো জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে আলু রাখার খুব চাপ। দুই লাখ ৩০ হাজার বস্তা ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এ হিমাগারে এরই মধ্যে ৯৫ শতাংশ আলু রাখা হয়েছে।
এদিকে প্রতিটি হিমাগারেই বৃহত্তর বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নোটিশ টাঙানো দেখা গেছে। প্রতিটি নোটিশেই স্টোর ভাড়া হিসাবে প্রতি কেজি পাঁচ টাকা হারে কৃষকদের থেকে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বস্তা প্রতি ৫০ কেজির বেশি আলু না রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার কাশিপুর এলাকার আলু চাষি শামসুল আলম নাজিম উদ্দীন বলে, গত বছর আলু আবাদ করে লোকসান হয়েছে। এ বছর ফসল তোলার ১৫ দিন আগে বৃষ্টিতে ফলন কম হয়েছে। তাই লাভের আশায় হিমাগারে আলু রাখতে আসছি।
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা গ্রামের আরিফুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, ৭৫ বস্তা আলু রাখতে আরঅ্যান্ডআর কোল্ড স্টোরে এসেছি। মৌসুমের শুরুতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা মণ আলু বিক্রি করতে হয়েছে। ইদানিং দাম কিছুটা বাড়লেও আবার তা কমে যাচ্ছে। তাই আগের বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে হিমাগারে আলু রাখছি।
কালাই উপজেলার নান্দাইল দিঘি এলাকার আলু চাষি আব্দুল্লাহ বলেন, কৃষকদের কষ্ট কেউ দেখে না। বারবার আলু আবাদ করে লস হচ্ছে। সবাই বলছে এবার আলু হিমাগারে রাখলে দাম পাওয়া যাবে। তাই হিমাগারে আলু রাখতে এসেছি। কিন্তু এবার বস্তার ভাড়া বেশি। আবার মাপ কম রাখতে বলা হচ্ছে। তাহলে আমরা টিকবো কীভাবে?
কৃষিকল হিমাগারের কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর, রংপুর, জয়পুরহাট থেকে আলুবোঝাই ট্রাক আসছে। ৫ টাকা কেজি দরে আলু রাখার ভাড়া নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু আলু সংরক্ষণের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন হিমাগার মালিকারা। কার আগে কে হিমাগার ভরাবে এখন সেই প্রতিযোগিতা চলছে।
বগুড়া ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারী তোফাজ্জল হোসন জাগো নিউজকে বলেন, আলুর বস্তার ভাড়া অ্যাসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত কেউ মানছে না। অনেক হিমাগার মালিক ৩-৪ টাকা কেজিতে ভাড়া রাখছেন।
তিনি আরও বলেন, সিদ্ধান্ত মানলে আমাদের হিমাগার ভর্তি হবে না। আর হিমাগার ভর্তি না হলে বিদ্যুৎ বিলের অতিরিক্ত বোঝা বইতে হবে। তাই আমিসহ অনেকে বেঁধে দেওয়া রেটের বাইরে আলু ভাড়া রাখছি।
নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মোন্নাফ জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের নির্দেশনা মতো বাণিজ্যিক রেটে কয়েকটি স্ল্যাবে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া হয়। এ বছর খুচরা বিদ্যুৎ মূল্যহার অপরিবর্তিত রয়েছে। আর হিমাগারগুলোও শিল্প রেটে তাদের স্ল্যাব অনুসারে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে থাকে। সে হিসেবে উচ্চচাপ (এইচটি) ৩৩.৫ মেগাওয়াট থেকে ৩০ মেগাওয়াট পর্যন্ত তিনটি ধাপে সর্বোচ্চ ১০ টাকা ৬ পয়সা হারে প্রতি ইউনিটে বিল করা হয়ে থাকে। এখন যারা যেভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে, তাদের বিলও সেভাবেই আসবে।
বৃহত্তর বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, সেন্ট্রাল থেকে প্রতি কেজি আলুর রেট করা হয়েছে ৫ টাকা ২০ পয়সা। আর বগুড়া অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রতি কেজি আলুর রেট করেছি ৫ টাকা। কোথাও কোথাও ৪ টাকা থেকে সাড়ে ৪ টাকাও নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমার কোল্ড স্টোরেজটা যখন শুরু করি তখন বাৎসরিক বিদ্যুৎবিল ছিল ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। সেটা এখন তিনগুণ বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকা হয়েছে। সে অনুযায়ী ভাড়া কম, কিন্তু লেবার বিল বেড়েছে।
বগুড়া জেলা কৃষি বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এনামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, শুধু জেলায় ১২ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। জেলার ৩৬টি হিমাগারের আলু সংরক্ষণ করা যাবে পৌনে ৩ লাখ টন। খাওয়ার জন্য আলু ছাড়াও অতিরিক্ত আলু বাইরের জেলার হিমাগারে রাখবে ব্যবসায়ীরা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com