নিজেদের স্বাবলম্বী করতে আপান শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে দিনাজপুরের হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরামের নারী সদস্যরা। ৩৬ জন এফোরামে সদস্য তারা। নিজ ঘরে বসে বিভিন্ন প্রসাধনী সহ বিভিন্ন আইটেমের খাবার তৈরি করছেন এবং অনলাইন অপলাইনে ব্যবসা করছেন তারা। বর্তমানে তাদের সহযোগীতা করছেন হাকিমপুর উপজেলা প্রশাসন। ৩৬ নারী উদ্যোক্তারা ঘরে বসে শাড়ি, থ্রীপিচ, ব্যাগ, তাপস, বিভিন্ন প্রকার আঁচার, উন্নতমানের খাবার সহ চানিজ খাবার তৈরি করছেন। উদ্যোক্তাদের রয়েছে প্রত্যেকের নিজ নিজ ফেসবুক পেজ। তাদের ফেসবুক পেজে তাদের তৈরি পণ্যসামগ্রী প্রচার করেন এবং অনলাইনের মাধ্যমে তারা বিক্রি করেন। যতদিন যাচ্ছে তাদের পরিচিতি বাড়ছে ও অনলাইনে অর্ডারও পাচ্ছে বেশি। প্রত্যেক নারী উদ্যোক্তারাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত, নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করায় তাদের উদ্দেশ্য। প্রায় নারী উদ্যোক্তারা তাদের কাজের জন্য আরও ৮ থেকে ১০ জন নারী শ্রমিকও কাজে লাগান। একদিকে নিজেরা লাভবান হচ্ছে অন্যদিকে আরও বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও তারা করছেন। এদিকে হাকিমপুর উপজেলা প্রশাসন তাদের উৎসাহ ও সহযোগীতা করতে উপজেলা চত্ত্বরে ৬ দিন ব্যাপি এক মেলার আয়োজন করেছেন। এই মেলায় উপজেলার সব দপ্তরের পাশাপাশি হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরামকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বেশি। ২২ টি স্টলের মধ্যে ১১ টি স্টল রয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের। মেলাতে তাদের বানানো সব পণ্যগুলো প্রচুর বিক্রি করতে পারছেন এবং আরও পরিচিতি লাভ করছেন তারা। মেলায় একজন ক্রেতা হাকিমপুর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পারুল নাহার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মেলা দেখতে এসেছি, মেলাতে এসে খুবি ভাল লাগছে। তবে খুবি ভাল লাগছে এখানে হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তারা তাদের বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর স্টল দিয়েছে। আমি আরও অবাক এবং গর্বিত আমাদের হাকিমপুরের মেয়েরা এতো সুন্দর জিনিস তৈরি করেছে। তাদের সাধুবাদ জানায় ও তারা আরও এগিয়ে যাবে। আমি আশাবাদী তাদের সকল পণ্য হাকিমপুর সহ দিনাজপুর জেলাকে ছাড়িয়ে সারাদেশে চলবে। নারী উদ্যোক্তা জাকিয়া ডলি বলেন, আমি শাড়ি, থ্রীপিচ সহ মহিলাদের বিভিন্ন পোশাক সংগ্রহ করি। এসব পোশাক বাড়িতে বসে তাতে হাতের কাজ করি। আমি কিছু বেকার নারীদের নিয়েও কাজ করে থাকি। নিজেকে স্বাবলম্বী করেও অন্য বেকার নারীদের সহযোগীতা করতে পারছি। আমি এগুলো মুলত অনলাইন অপলাইনে বিক্রি করি। আজ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মেলায় আমরা সুযোগ পেয়েছি এবং আমাদের ব্যবসায় অনেক শাঁড়া পাচ্ছি। কয়েকজন হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তারা বলেন, আমরা স্বযতেœ নিঃখুত ভাবে সকল পণ্যসামগ্রী বানিয়ে থাকি। অনলাইনে খাবারের অর্ডার পেয়ে থাকি। চাইনিজ জাতীয় সব খাবার তৈরি করি এবং তা ডেলিভারি দিয়ে থাকি। আমরা এমেলায় অনেক শাঁড়া পাচ্ছি, আমরা আরও এগিয়ে যাবো আশা করছি। হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তা ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রোমেনা আক্তার মনি বলেন, আমি ২০০৫ সাল থেকে নিজে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করে আসছি। বর্তমান আমার এই নারী উদ্যোক্তা ফোরামে সদস্য ৩৬ জন। আমাদের সাবার উদ্দেশ্য এক, কিভাবে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলবো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমান উপজেলা প্রশাসন আমাদের সার্বিক সহযোগীতা করেছেন। হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ-আলম বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৬ দিন ব্যাপি সুবর্ণ জয়ন্তী মেলার আয়োজন করেছি। মেলায় উপজেলা প্রশাসনের সকল দপ্তর স্টল দিয়ে অংশগ্রহণ করেছে। মেলাটিকে জাঁকজমক করতে যাদের পণ্য হাকিমপুরে বেশি পরিচিত তাদের স্টল দেওয়ার অনুমিত দেওয়া হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের সকল পণ্য উপজেলায় অনেক পরিচিত এবং চাহিদা রয়েছে। মুলত তাদের জন্যই মেলাতে লোকজনের আগমন বেশি এবং তাদের পণ্যও বিক্রি হচ্ছে অনেক। এবিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, বর্তমান পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এগিয়ে। সরকারি নির্দেশক্রমে উপজেলায় ৬ দিনের মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এমেলায় হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তারা তাদের নিজের তৈরি বিভির পণ্যসামগ্রী দিয়ে স্টল দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তারা ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছেন। আমরাও তাদের সহযোগীতা করছি। তিনি আরও বলেন, হাকিমপুর নারী উদ্যোক্তার প্রায় মেয়েরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। তারা চাকরি না করেও বাড়িতে বসে নিজ নিজ উদ্যোগে পণ্যসামগ্রী তৈরি করে বাজার জাত করছেন এবং নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন। আমি আশা করি আগামীতে তারা তাদের লক্ষ্যকে জয় করবেন।