পাবনার আটঘরিয়া উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কোরিয়া প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার সকালে এ ঘটনা ঘটলেও প্রভাবশালীদের চাপে বিষয়টি গোপন থাকে। পরবর্তিতে স্থানীয়দের চাপের মুখে আজ সকালে আটঘরিয়া পৌরসভার মেয়র শহিদুল ইসলাম রতন এর নেতৃত্বে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে ঘটনাটি প্রকাশ হয়। কোন সিদ্ধান্ত ছাড়ায় এ শালিস বৈঠক সমাপ্ত হয়।
ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসী ও স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, পাবনা আটঘরিয়া উপজেলার পৌর রোস্তমপুর হাজিপাড়া গ্রামের শেখ মোঃ শাহাজউদ্দিনের ছেলে কোরিয়া প্রবাসী শেখ মোঃ আব্দুর রশিদের বাড়িতে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি মোঃ বুলবুল ফকির ওরফে গাঁজা বুলবুল ও সাধারন সম্পাদক মোঃ কামরুল ইসলামের নেৃতৃত্বে ৭/৮জনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গত ২৩মে শনিবার ভোর ৬টার দিকে জোর পুর্বক প্রবেশ করে। অস্ত্রের মুখে রশিদকে জিম্মি করে ঘরে থাকা ২ হাজার ৫শ ডলার, বাংলাদেশি নগদ টাকা, ২টি আইফোন, ১লাখ টাকার চেকসহ অনেক মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা প্রবাসী রশিদকে বেদম মারপিট করেন এবং ঘটনা কাউকে যেন বলা না হয় সে জন্য ভয়ভীতি দেখান। প্রবাসী রশিদ জানান নগদ ডলার, টাকাসহ তার প্রায় সাড়ে ৫লাখ টাকার লুট হয়েছে। পরবর্তিতে ঘটনাটি আব্দুর রশিদের ছোট চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মোঃ জহিরউদ্দিন জানতে পারেন। পরে জহির উদ্দিন মেয়র রতনকে জানালে পরদিন ২৪মে রোস্তমপুরের একটি বাড়িতে মিমাংসার জন্য বসে। সেখানে শ্রমিকলীগের নেতারা মেয়র রতনের সামনে ক্ষতিগ্রস্থ রশিদকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যান। পরে ঘটনাটি ব্যাপক জানাজানি হলে মেয়র রতন বাধ্য হয়ে আজ বুধবার সকালে প্রকাশ্যে শালিস বৈঠকের আয়োজন করে। শালিস বৈঠকে মেয়র রতন শ্রমিকলীগ নেতাদের দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন। সেখানে উপস্থিত শত শত এলাকাবাসী এ রায়ের তীব্র প্রতিবাদ করেন। উপস্থিত এলাকাবাসী মেয়রের কাছে দাবী জানান, ডলার, নগদ টাকা, মোবাইলসহ সকল মালামাল ফেরত দিতে হবে, সেই সাথে এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবী করেন। মেয়র রতন এ শালিস করতে পারবেন না বলে উঠে যেতে চাইলে উপস্থিত এলাকাবাসী মেয়রকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন। মেয়র পরবর্তিতে বিচার করার ও তাদেরকে দল থেকে বহিস্কারের অঙ্গিকার দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় রোস্তমপুরসহ আটঘরিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সরকার দলীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন কর্মকান্ডে খোদ আওয়ামীলীগের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ফুরকান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। এই মাত্র আপনার কাছ থেকে শুনলাম। ঘটনা যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আমি আমার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ঘটনার বিষয়ে পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতনের কাছে মোবাইলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুলবুল ও কামরুল যে ন্যাক্কারজনক কাজ করেছে, তার দায়ভার দল নিতে পারে না। আমি জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের কাছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে দলীয় বব্যস্থা নিতে অবগত করবো। তিনি আরো জানান, সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই।
এদিকে জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ফোরকান আলী আরো জানান, আটঘরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতনের পরামর্শে আমরা বুলবুল ফকির ও কামরুলকে উপজেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছি। কমিটি গঠন নিয়ে বুলবুল ফকির ও কামরুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এলে আমরা কমিটি আটকে দেয়। পরে পৌর মেয়র রতন কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টুকে দিয়ে আমাদের ফোন দিলে আমরা কমিটি পাশ করে দেই। বুলবুল ফকির ও কামরুল শহিদুল ইসলাম রতনের কাছের লোক তার তদবীরে আমরা তাদের কমিটি পাশ করি।
প্রবাসী রশিদ আরো জানান, তাকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বুলবুল ফকির ও কামরুল আটঘরিয়া উপজেলার আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতনের কাছের লোকজন। রতন পৌর মেয়র ও তার ছেলে তানভীর ইসলাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আমি আতংকে দিন যাপন করছি। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় আছি। আপনি মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে ক্ষতিগ্রস্থ রশিদ জানান, সন্ত্রাসীরা মেয়র সাহেবের লোকজন। তাদের কথায় থানা চলে। আমি মামলা করলে কোন প্রতিকার কি পাবো, বলতে পারেন উল্টো প্রশ্ন করেন। ঘটনার বিষয়ে আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিব মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম জানান, ঘটনা লোকমুখে শুনেছি, ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা-কর্র্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে জেলা নেতৃবৃন্দদের কাছে আহবান জানিয়েছেন।
এমআইপি/প্রিন্স/খবরপত্র