ওয়ালটন কোম্পানির দেওয়া নতুন দোকান আর গাড়ি পেয়ে সুন্দর ভাবে জীবন-যাপন করছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কুন্দনহাটের পঙ্গু মেইল মোজাম্মেল। ভাঙা গাড়ি আর অন্যের ভাড়া দোকানে এখন থাকেন না তিনি। ওয়ালটনের দোকান ও গাড়ির চাকা যেন ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে সেই অসহায় পঙ্গু মোজাম্মেলের। গত বছরের ২৫ জুন মাসে ‘দৈনিক খবরপত্র’ পত্রিকায় সেই সাহসী পঙ্গু মেইল মোজাম্মেলকে নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি নজরে পড়ে ওয়ালটন কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। পরে ২৫ অক্টোবর ওয়ালটন কোম্পানির কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোম্পানির ডিএমডি হুমায়ুন কবির পঙ্গু মোজাম্মেলের জীবন সাজাতে শুরু করেন এবং বিরামপুর ওয়ালটন শোরুম ম্যানেজারকে পঙ্গু মোজাম্মেলের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও একটি চলাচলের জন্য গাড়ি তৈরির নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) উপজেলার কুন্দনহাট গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার পাশে মোজাম্মেলের জন্য একটি দোকান নির্মাণ করে দিয়েছে ওয়ালটন কোম্পানি। দোকানটি রাস্তার পাশে হওয়ায় তিনগুণ বেশি এখানে কাজ পাচ্ছেন তিনি। পূর্বের ভাড়া দোকানের চেয়ে এই দোকানে লোকজন বেশি আসছেন তাদের ভ্যান-রিকশা ও সাইলকেল মেরামত করতে। বর্তমান কোন চিন্তা-ভাবনা নেই মোজাম্মেলের। হয়েছে নিজের দোকান ও বিদ্যুৎ, কোন ব্যয় হয় না তার। শুরু হয় সকাল ৮ টা থেকে রাত ১১ পর্যন্ত তার কর্মকা-। পঙ্গু মেইল মোজাম্মেল এখন আর আগের সেই নক্কড়ছক্কড় গাড়িতে চড়ে না। বর্তমান ওয়ালটন কোম্পানির দেওয়া উন্নতমানের বড় এবং মজবুত অটোগাড়িতে ঘুরে বেড়ান। সকালে বাড়ি থেকে গাড়িতে চড়ে দোকানে আসেন তিনি। এছাড়াও প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে বিরামপুর শহরে মালামাল নিতে প্রতিনিয়ত যান এই গাড়িতে চড়ে। পঙ্গু মেইল মোজাম্মেল একজন ভ্যান-রিকশা আর সাইকেলের মেকার। দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ এই পেশায় আছেন তিনি। এক সময় তিনি একজন সুস্থ সবল এবং সুঠোম দেহের অধিকারী ছিলেন। এলাকার মানুষ তাকে মেইল বলে ডাকতেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১০ থেকে ১২ বছর আগে ডাম পায়ে তার একটা ছোট ক্ষত হয়। আর সেই ক্ষতই যেন তার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ায়। একের পর এক চার বার অপারেশন করে তার কোমর পর্যন্ত পা দুটো কেটে ফেলতে হয়। শেষের অপারেশনে তিনি সম্পূর্ণ ভাবে শ্রবণ শক্তিও হারিয়ে ফেলেন। তার চিকিৎসায় সব শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু মনোবল হারান্নি তিনি। পঙ্গু অবস্থায় অন্যের দোকান ভাড়া নিয়ে জীবনযুদ্ধ শুরু করেন। বর্তমান অন্যের ভাড়া দোকান বাদ দিয়ে ওয়ালটন কোম্পানির দেওয়া দোকানেই তার কাজ। আর চলাফেরা করছেন ওয়ালটনের দেওয়া মজবুত অটোগাড়ি। কয়েক জন স্থানীয়রা বলেন, মোজাম্মেল আমাদের এলাকার মানুষ, সে একজন অসহায় পঙ্গু মানুষ। মানুষের দোকান ভাড়া দিয়ে থাকতে তার অনেকটা অসুবিধা হতো। তবে আমরা ওয়ালটন কোম্পানিকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানায়। এমন এক পঙ্গু মানুষটা দোকান তৈরি সহ একটা গাড়ি বানিয়ে দিয়েছে। আজ তিনি অনেক ভাল আছেন, আমরা আবারও ওয়ালটন কোম্পানিকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানায়। পঙ্গু মোজাম্মেলের ছেলে আতাউর রহমান বলেন, আমি খুবি খুশি বাবার মুখে হাসি দেখে। এসব কিছু হয়েছে ওয়ালটন কোম্পানির জন্য। আমি এই কোম্পানিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়। পঙ্গু মেইল মোজাম্মেল অশ্রু ঝড়া কন্ঠে বলেন, আল্লাহর নিকট আমার আর কিছুই চাওয়ার নাই। আমি ওয়ালটন কোম্পানির কাছে চির ঋণি। প্রতিদিন রাতে দোকান বন্ধ করার আগে আমি আল্লাহর দরবারে দোয়া করি। এছাড়াও আমি যতদিন বাঁচবো, ততদিন ওয়ালটন কোম্পানির জন্য দোয়া করবো। এবিষয়ে বিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু বলেন, ধন্যবাদ জানায় দৈনিক খবরপত্রকে, কেননা অনেক অসহায় ও হতদরিদ্র এবং সমাজের বিভিন্ন সমস্যা কথা তুলে ধরে এই পত্রিকা। কুন্দনহাটের একজন অসহায় পঙ্গু ব্যক্তি মোজাম্মেলকে নিয়ে নিউজ করার পর ওয়ালটন কোম্পানি তাকে দোকান এবং গাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। আমি ওয়ালটন কোম্পানিকে ধন্যবাদ জানায়। এছাড়াও মোজাম্মেলের বসতবাড়িতে ভাল তেমন কোন ঘর নেই। আগামীতে জায়গা আছে ঘর নেই, প্রকল্প আসলে অবশ্যই তাকে একটি ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে।