শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

টিপু হত্যায় স্ট্যান্ডবাই ছিল একাধিক শুটার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২

রাজধানীর শাহজানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার জন্য নিয়োগ করা ছিল একাধিক শুটার। ঘটনা ঘটানোর জন্য প্রথমে যে শুটার দায়িত্ব পায়, সে যদি হত্যাকাণ্ডে ব্যর্থ হয়, তাহলে ঘটনা সফল করার জন্য স্ট্যান্ডবাই ছিল একাধিক শুটার। প্রাথমিক তদন্তে এবং গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
প্রথম শুটার সফল হওয়ায় স্ট্যান্ডবাই শুটারদের আর দরকার পড়েনি। সে দিনের ওই ঘটনায় টিপু ছাড়াও গুলিতে নিহত হন বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া আফনান প্রীতি। এ হত্যাকাণ্ডে একাধিক মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা। র‌্যাবের গোয়েন্দারা বলছেন, টিপুকে হত্যার জন্য প্রথম শুটারের গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছিল ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে। যদি প্রথম শুটার ঘটনা ঘটাতে ব্যর্থ হতো, তাহলে তারা অন্য প্ল্যান করে রেখেছিল। একাধিক শুটার অবস্থান করছিল সেখানে। প্রথম শুটার ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হওয়ায় অন্যরা গা-ঢাকা দেয়। এসব বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।
র‌্যাব জানায়, টিপুকে হত্যার জন্য অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও সমন্বয়কের ভূমিকায় ছিল কিলার মুসা। কাটআউট পদ্ধতিতে হত্যাকা- সংঘটিত করার কারণে কারও সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। মুসা বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। বর্তমানে সে দুবাই রয়েছে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ ঘটনার কারণ সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হবে। শুক্রবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে টিপু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ডসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয় গ্রেফতারকৃত আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক ও নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসিরের নাম। এছাড়া সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশকে (৫১) গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় মোটরসাইকেল।
র‌্যাব বলছে, শুটার যে মোটরসাইকেলে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাচ্ছিল, সেই মোটরসাইকেলটি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সেইসঙ্গে মোটরসাইকেল চালকের বিষয়টিও এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে কাজ চলছে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার বেশকিছু মোটিভ সম্পর্কে জানা গেছে। যুবলীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন খান মিল্কি এবং মতিঝিলের রিজভী হাসান ওরফে বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার কারণেই খুন হতে হলো আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে। মিল্কিকে হত্যার পর গুলশানে বিভিন্নভাবে মানববন্ধন ও রাস্তায় অবস্থান করাসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ছিল ওমর ফারুক, কিলার নাসির ও শুটার সালেহ। তারা এ সময় মিল্কি হত্যাকাণ্ডের জন্য অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে টিপুকে দায়ী করে বিভিন্ন জায়গায় বক্তব্য দেয়। পরে মামলা থেকে যখন টিপু রেহাই পায়। এরপর টিপুর আস্থা ভাজন বোচা বাবুকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। মুসার সহায়তায় বোচা বাবুকে হত্যা করা হলে সেই হত্যা মামলার আসামি করা হয় ওমর ফারুক, কিলার নাসির ও শুটার সালেহকে। বোচা বাবু হত্যাকাণ্ডের সাক্ষী করা হয় কাইল্লা পলাশ এবং কালামকে। মামলাটির বিচার দ্রুত হওয়ায় ও টিপু অ্যাক্টিভ থাকায় অভিযুক্তরা কিছুটা সংশয়ের মধ্যে পড়ে। যদি মামলাটির শেষ হয়ে যায়, তাহলে তারা ফাঁসিতে ঝুলবেন, এমন আশঙ্কায় দেশের বাইরে থাকা বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও মুসার পরিকল্পনায় হত্যা করা হয় টিপুকে।
শাজাহানপুরে রেলগেটে টিপুকে হত্যার উদ্দেশে গুলি করার পর ঘটনাস্থলে থাকা কিলার নাসির দুবাই অবস্থানরত মুসাকে ফোনে জানিয়ে দেয়, কাজ শেষ হয়েছে। এ সময় কথোপকথনে ব্যবহৃত হয় ‘ইট ইজ ডান’। এছাড়া কাইল্লা পলাশ ও দেশের বাইরে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে সত্যতা নিশ্চিতে। এছড়া টিপুকে বিদেশ থেকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে। এ হত্যাকাণ্ডের পর আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সক্রিয়তার একটি বিষয় উঠে এসেছে। ১৫ লাখ টাকা বাজেটে টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ২৪ মার্চ ঘটনার ১২ দিন আগেই ১১ মার্চ দেশ ছেড়ে দুবাই চলে যায় টিপু হত্যার অন্যতম সমন্বয়কারী মুসা। পরে দুবাই থেকেই সে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করে এবং শুটার নিয়োগ করে।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আন্ডারওয়ার্ল্ড কানেকশন ও আন্ডারগ্রাউন্ডের অনেকে জড়িত রয়েছে টিপু হত্যার ঘটনায়। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।’
তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতার মাসুম মো. আকাশ কিছুটা ফাস্ট্রেশনে ছিল, আর সেই ফাস্ট্রেশনকে কাজে লাগিয়েই তার বন্ধু মোল্লা শামীম এ হত্যাকাণ্ডের জন্য তাকে প্রস্তাব দেয়। পরে তার চারটি মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার শর্তে হত্যাকাণ্ড ঘটাতে রাজি হয় সে। এ হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব ছিল বিকাশ প্রকাশের কর্মী মুসা ও ফ্রিডম মানিকের কর্মী দামাল ও মারুফ। মারুফের মাধ্যমেই এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শুটার হিসেবে মাসুমকে নিয়ে আসে মোল্লা শামীম।
টিপু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে ৬ জন। তারা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনার পাশাপাশি সরাসরি ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল এবং হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তারা।-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com