রোজার তৃতীয় দিনে চকরিয়া পৌরশহরের পুরাতন কাঁচাবাজার এলাকায় ইফতারির আগে লেবু কেনার জন্য দরদাম করছিলেন আকবর সাহেব। বড় আকারে এলাচি লেবুর দরদাম করছিলেন তিনি। বিক্রেতা চটজলদি বলে দেন এক দাম ২১০ টাকা ডজন। দুই ডজন নেবেন শুনে বিক্রেতা কিছুটা নমনীয় হলেন। ৪০০ টাকায় বিক্রি করলেন দুই ডজন লেবু। তাতে প্রতিটি লেবুর দাম পড়েছে ১৬ টাকা ৬৬ পয়সা। তবে এক ডজন নিলে সে ক্ষেত্রে প্রতিটির দাম সাড়ে ১৭ টাকা।লেবু ব্যাগে ভরার সময় আকবর সাহেব বলেন, মাত্রাতিরিক্ত গরমে ইফতারির মেন্যুতে লেবুর শরবত চান পরিবারের সবাই। এ জন্য দাম বেশি হলেও লেবু নিতেই হলো। কয়েক দিন আগেও লেবুর দাম এত বেশি ছিল না। রোজা আসাতেই হঠাৎ দাম বেড়ে গেল। আকবর সাহেবের কাছে ২০০ টাকা ডজন দরে লেবু বিক্রি করেও অসন্তুষ্ট বিক্রেতা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, যে দামে আমি লেবু কিনেছি তাতে ২০০ টাকায় ডজন বিক্রি করেও খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। এদিকে চকরিয়া পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজারে গতকাল মঙ্গলবার বড় আকারের এক হালি এলাচি লেবু বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। সেই হিসাবে একটা লেবুর দাম ১৭ দশমিক ৫০ টাকা। এই টাকায় অনায়াসেই যেকোনো ক্রেতা এক কেজি আলু কিনতে পারবেন। কারণ, চকরিয়ার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকায়। সরেজমিনে চকরিয়া পৌরশহরের পুরাতন কাঁচা বাজার, ভেন্ডিবাজার, মৌলভীরকুম, ভাঙ্গারমুখ, মগবাজার ও থানা সেন্টারস্থ কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আকারভেদে খুচরা বাজারে এলাচি লেবুর হালি ৪০, ৫০ ও ৭০ টাকা। পাইকারি দামও প্রায় একই। শহীদ আবদুল হামিদ পৌর বাসটার্মিনাল সংলগ্ন কাঁচা তরকারির বাজারে পাইকারি বিক্রেতারাও প্রতি হালি এলাচি লেবু বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ ৬০ টাকায়। তবে মানভেদে ৩০ টাকা হালিতেও লেবু বিক্রি হচ্ছে এ বাজারে। এলাচি লেবুর বাইরে বাজারে সাধারণত কলম্বো, কাগজি ও লামা-আলীকদমের বিচিহীন লেবু পাওয়া যায়। তবে বাজারে এখন এলাচি লেবুর সরবরাহই বেশি। সুগন্ধি লেবু হিসেবে খ্যাত কলম্বো লেবুর সরবরাহও মন্দ নয়। এক হালি লেবুর দাম ৫০ টাকা, অর্থাৎ প্রতিটির দাম সাড়ে ১২ টাকা। পৌর কিচেন মার্কেটের পাইকারি লেবু ব্যবসায়ী ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘লেবুর দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ বেড়েছে। বিশেষ করে রোজা শুরুর পর এ দাম হু হু করে বেড়ে গেছে। কারণ, বাজারে চাহিদা বেশি, জোগান কম। এক সপ্তাহ আগেও আমরা যে লেবু প্রতি বস্তা ৩-৪ হাজার টাকায় কিনেছি, এখন তা ৮-১০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্য দাম কমে যাবে বলে মনে করেন ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘রোজার শুরুতে দাম একটু বেশি থাকে। এটা মূলত সরবরাহের ঘাটতির কারণে হয়। আমরা যে অনেক লাভ করছি এমন না। উৎপাদক পর্যায়েই এখন দাম বাড়তি।’এদিকে বিভিন্ন আড়তের ২ টাকার দামের লেবু হাতবদলেই খুচরা পর্যায়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকায়। চকরিয়ায় এসে সেই লেবুর দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে। চকরিয়া ও পার্শ্ববর্তী কয়েকটি উপজেলার মানুষের লেবুর চাহিদা মেটায় পার্বত্য বান্দরবানের লামা, আলীকদমের লেবু চাষীরা। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এসব এলাকায় লেবু চাষের উপযোগী। তবে এখন সমতলেও লেবুর ভালো ফলন হয়। তবুও রমজানে লেবুর চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় মূল্যের লাগাম টেনে ধরে রাখা যাচ্ছে না।