শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

মোবাইল ছিনতাই-চুরির মামলা থানা না নিলে ব্যবস্থা : ডিএমপি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২২

যদি কোনো বিশেষ অভিযোগ পাওয়া যায় যে ছিনতাই বা ডাকাতি হওয়ার পরও কোনো থানা মামলা নিচ্ছে না বা মামলা নিতে গড়িমসি করছে, অভিযোগ করুন। ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং সেটা আমরা নিচ্ছি। গতকাল শনিবার (৯ এপ্রিল) বেলা ১১টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অ্যাডমিন অ্যান্ড ডিবি-দক্ষিণ) মো. মাহবুব আলম। এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা রমনা ও লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দেশীয় অস্ত্রসহ ছিনতাইচক্রের ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। গত ৬ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল রাজধানীর হাজারীবাগ, চকবাজার, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর ও শাহবাগ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেনÍ আব্দুর রহমান শুভ (২২), ইয়াছিন আরাফাত জয় (১৯), বাবু মিয়া (২৮), ফরহাদ (২১), হৃদয় সরকার (২৪), আকাশ (২০), জনি খান (২২), রোকন (১৮), মেহেদী হাসান ওরফে ইমরান (২৭), মনির হোসেন (৪১), জুয়েল (২২), জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে মাইকেল (৩৬), আজিম ওরফে গালকাটা আজিম (৩৫), শাকিল ওরফে লাদেন (২৪), ইমন (২২), রাজিব (২৫), রাসেল (৩২), মিন্টু মিয়া ওরফে বিদ্যুৎ (৩৯), মাসুদ (৩০), তাজুল ইসলাম মামুন (৩০), সবুজ (৩০), জীবন (২৫), রিয়াজুল ইসলাম (২৫), মুন্না হাওলাদার (১৯), শাকিল হাওলাদার (২০), ফেরদৌস (২২) ও আবুল কালাম আজাদ (৩৪)। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে লোহার রড, দা, ছোরা, চাকু, চেতনানাশক ট্যাবলেট ও মলম জব্দ করা হয়।
ডিবি দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, রোজা ও ঈদকে কেন্দ্র করে ছিনতাই, মলম ও টানা পার্টির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। ডিবি পুলিশও বিশেষ করে ঢাকায় দস্যুতা, ছিনতাই-ডাকাতি চুরির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান পরিচালনা করে থাকে।
ডিএমপি কমিশনারের দিকনির্দেশনায় রমজান ও আসন্ন ঈদুল ফিতরের নিরাপত্তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি ও অজ্ঞান-মলম পার্টির দৌরাত্ম্য প্রতিরোধে গোয়েন্দা রমনা ও লালবাগ বিভাগ বিশেষ অভিযানে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাকাতি ও দস্যুতার প্রস্তুতিকালে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ২৭ জনই পেশাদার ছিনতাইকারী, ডাকাতদলের সদস্য ও অপরাধী। আজ তাদের মধ্যে ২২ জনকে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার ২৭ জনের বিরুদ্ধেই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, তারা দলবদ্ধভাবে ঢাকা শহরের ব্যস্ততম বাস স্টপেজে অবস্থান করে কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে। পরে যাত্রীবেশে বাসে উঠে সুযোগ বুঝে টার্গেট করা ব্যক্তিকে সুকৌশলে চেতনা নাশক উপাদান প্রয়োগের মাধ্যমে অচেতন করে তাদের সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে পালিয়ে যায়।
এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুব আলম বলেন, ঢাকায় ডিজিটাল ডিভাইস বেশি চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাস্তায় যারা ছিঁচকে চোর-ছিনতাইকারী আছে, তারা রাস্তায় মোবাইল, স্বর্ণালঙ্কার টান দিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়, তাদের অধিকাংশই মাদকসেবী।
ঢাকায় চোরাই মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন হচ্ছে: চোরাই মোবাইল পুনরায় ব্যবহার হচ্ছে। এখন আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে পুনরায় ব্যবহার হচ্ছে চোরাই মোবাইল। আর এগুলো করার জন্য একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে হাতিরপুলের ইস্টার্নপ্লাজা, মোতালেব প্লাজা, গুলিস্তান এলাকায় যে কেউ গিয়ে তাদের মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে নিতে পারে। এসব কাজ যারা করে আমরা বিভিন্ন সময় তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিয়েছি, বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি।
মাহবুব আলম বলেন, এবার আমরা পরিকল্পনা করেছি, যারা এ ধরনের চোরাই মোবাইলের কারবার করেন, আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে পুনরায় বিক্রি করেন, যাদের মাধ্যমে এসব হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। কারণ চক্রটির সদস্যদের বিরুদ্ধে শুধু ছিনতাই মামলা নয়, মাদক মামলাও রয়েছে।
চোরাই-ছিনতাই করা আইফোন যাচ্ছে দেশের বাইরে: ছিনতাই ও চোরাই করা মোবাইল বিভিন্ন মার্কেটে যাচ্ছে, বিক্রি হচ্ছেÍ এমন তথ্য ডিবি পেয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা পেয়েছি শুধু দেশীয় মার্কেট কিংবা শপিংমলগুলোতে নয়, চোরাই মোবাইল পাচার হচ্ছে। যেমনÍ ছিনতাই হওয়া আইফোনগুলো যাচ্ছে দেশের বাইরে।
চোরাই-ছিনতাই করা মোবাইল না কেনার পরামর্শ: অনলাইনে চোরাই ও ছিনতাই করা মোবাইল বিক্রির কোনো ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বা জড়িত এমন কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে যে কেউ বিক্রি করতে পারে। যেমনÍ বিক্রয় ডটকমে যদি কেউ বিজ্ঞাপন দেয় তাহলে সেখানেও ক্রেতা পাবে। আর যারা এ ধরনের মোবাইল কেনেন তারা হয়রানির শিকার হন। তাই উচিত প্রকৃত মোবাইল কোম্পানির কাছ থেকে মোবাইল কেনা।
অভিযোগ রয়েছে রাস্তায় কেউ ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে থানায় গেলে পুলিশ মামলা নিতে চায় নাÍ এমন অভিযোগ সত্য হলে থানার ওপরে যারা আছেন কর্মকর্তা তাদের করণীয় কি? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি দক্ষিণের এ যুগ্ম কমিশনার বলেন, এমন হয়ত হয়ে থাকে। কেউ কেউ মনে করেন কীভাবে মোবাইল চুরি হয়েছে তা জানে না। কারণ তিনি স্পষ্ট নন চুরি হয়েছে নাকি হারিয়ে গেছে। যখন তারা পুলিশের কাছে যায় তখন সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন না। তখন স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ হয়ত চুরির মামলা না নিয়ে হারিয়ে যাওয়ার জিডি নেয়। ক্ষেত্র বিশেষে ছিনতাইয়ের পর মামলা রেকর্ড না হওয়ার প্রবণতা আছে। বিশেষ করে মোবাইলের ক্ষেত্রে। তবে পরে তদন্তে যদি এটা জানা যায় যে মোবাইলটা ছিনতাই হয়েছিল বা টানা পার্টির ঘটনা তখন মামলা হয়।
মাহবুব আলম বলেন, যদি কোনো বিশেষ অভিযোগ পাওয়া যায় যে কোনো থানা মামলা নিচ্ছে না বা নিতে গড়িমসি করছে ডিএমপি কমিশনারের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং সেটা আমরা নিচ্ছি। এ পর্যন্ত কতগুলো মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছেÍ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিয়মিতই অভিযান পরিচালনা করছি, মোবাইল উদ্ধার করছি, থানা পুলিশও উদ্ধার করছে। সংখ্যাটা বলা যাচ্ছে না। এসব ঘটনার সঙ্গে তালিকা করা কিশোর গ্যাং সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে তাদের আমরা অবজারভ করছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com