রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন

রোজার জরুরি মাসায়েল

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১১ এপ্রিল, ২০২২

রোজা ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। একজন রোজাদারকে রোজার মাসলা-মাসায়েল জানা অপরিহার্য। কেননা, মাসলা-মাসায়েল জানা না থাকলে রোজা যথাযথভাবে পালন করা সম্ভব হবে না।

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ হয় : ১. কানে ওষুধ বা তেল ঢাললে, নাকে ওষুধ ঢাললে বা নস্য টানলে, অথবা পায়খানার জন্য ডুস নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়। পরে কাজা করতে হবে (জাওহারা প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-১৪৫)।

২. রোজা অবস্থায় প্রস্রাবের রাস্তায় ওষুধ বা তেল ইত্যাদি প্রবেশ করালে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাজা করতে হবে (প্রাগুক্ত)। ৩. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হওয়ার পর থুথুর সাথে সে রক্ত গিলে ফেললে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে কাজা করতে হবে। কিন্তু রক্ত যদি থুথুর চেয়ে কমÑ অর্থাৎ এতে রক্তের স্বাদ পাওয়া না যায়, তবে রোজা ভঙ্গ হবে না (কাজিখান প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-২৯৮)।

৪. ভুলেক্রমে কোনো কিছু খেলে রোজা ভঙ্গ হয় না কিন্তু এরূপ করার পর রোজা ভঙ্গ হয়ে গেছে মনে করে যদি কিছু খায়, তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাজা করতে হবে (কুদুরি, পৃষ্ঠা-৮০)।

৫. ‘রাত আছে, সুবহে সাদিক হয়নি’ মনে করে যদি সাহরি খায়; পরে জানতে পারে যে, ওই সময় রাত ছিল না, তবে ওই রোজা হবে না। এমনিভাবে ‘সূর্য ডুবে গেছে মনে করে কেউ যদি ইফতার করে; পরে জানতে পারে যে, সূর্য ডুবেনি, তবে ওই রোজা হবে না। উভয় অবস্থাতেই রোজা কাজা করতে হবে (আলমগীরী)। ৬. সুরমা অথবা তেল লাগিয়ে অজ্ঞতাবশত যদি কেউ মনে করে যে, তার রোজা ভেঙে গেছে এবং এ কারণে ইচ্ছা করে কিছু খাওয়া দাওয়া করে, তবে কাজা ও কাফফারা উভয় ওয়াজিব হবে (আলমগীরী)।

৭. লোবান বা আগরবাতি জ্বালিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলোর ধোঁয়া গ্রহণ করলে রোজা ভেঙে যাবে। বিড়ি-সিগারেট বা হুঁকার ধোঁয়া পান করলে রোজা ভেঙে যাবে। আতর ইত্যাদির সুঘ্রাণে রোজা ভঙ্গ হবে না (শামি)।

৮. দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাদ্যদ্রব্য খেলাল বা জিহ্বার দ্বারা বের করে মুখ থেকে বাইরে না ফেলে গিলে ফেললে যদি ওই খাদ্যদ্রব্য একটি বুটের পরিমাণ অথবা তার চেয়ে বেশি হয়, তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে, তা কাজা করতে হবে। আর যদি একটি বুট অপেক্ষা কম হয় তবে রোজা ভঙ্গ হবে না। আর যদি মুখ থেকে বাইরে এনে তারপর গিলে ফেলে তবে তাএকটি বুটের পরিমাণের চেয়ে কম হলেও রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে; কাজা করতে হবে (আলমগীরী প্রথম খ-, পৃষ্ঠা-২০৮)। ৯. কুলি করার সময় গলার ভেতরে পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে রোজার কথা স্মরণ থাকুক বা না থাকুক। এই রোজা কাজা করতে হবে (শামি, দুররে মুখতার, পৃষ্ঠা-১৫০)।

১০. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখভরে বমি করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর অল্প বমি করলে রোজা ভঙ্গ হবে না (প্রাগুক্ত, শামি)।

১১. যদি কঙ্কর অথবা লোহা বা সিসার টুকরা কিংবা এমন কোনো জিনিস গিলে ফেলে, যা সাধারণত লোকেরা খাদ্যরূপেও খায় না এবং ওষুধরূপেও সেবন করে না, তবে এতে রোজা ভেঙে যাবে এবং একটি রোজা কাজা করতে হবে। আর যদি এমন জিনিস গিলে ফেলে, যা লোকে খাদ্যরূপে সেবন করে, তবে রোজার কাজাও করতে হবে এবং কাফফারাও দিতে হবে (হেদায়া)।

১২. রোজা রেখে দিনের বেলায় স্ত্রী সম্ভোগ করলে এমনকি খতনাস্থান প্রবেশ করালে বীর্যপাত হোক বা না হোক রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাজা ও কাফফারা উভয় ওয়াজিব হবে (শরহু বিদায়াহ)।১৩. স্ত্রীর শরীরে হাত লাগানো কিংবা চুমু দেয়ার দরুন বীর্যপাত হলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং কাজা করতে হবে (শরহুবিদায়া)।

যেসব কারণে রোজা মাকরুহ হয় : ১. জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে কোনো জিনিসের স্বাদ দেখে থুথু ফেলে দিলে রোজা ভঙ্গ হয় না; কিন্তু বিনা প্রয়োজনে এরূপ করা মাকরুহ। অবশ্য কারো স্বামী যদি জালেম ও পাষাণ হৃদয়ের হয় যে, তরকারির লবণ একটু কমবেশি হলে নির্যাতন শুরু করে, সে ক্ষেত্রে স্বাদ দেখে থুথু ফেলে দেয়া মাকরুহ নয়।

২. রোজা অবস্থায় শিশুর খাওয়ার জন্য কিছু চিবিয়ে দেয়া মাকরুহ। অবশ্য শিশুর জীবন ওষ্ঠাগত হলে এবং অন্য কেউ চিবিয়ে দেয়ার মতো না থাকলে চিবিয়ে দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে ফেলা জায়েজ (শামি)।

৩. রোজা রেখে দিনের বেলায় স্বামী-স্ত্রীর একসাথে শোয়া, একে অপরের শরীরে হাত দেয়ায় ও চুমু দেয়ায় যদি কামভাব প্রবল হয়ে সম্ভোগের আশঙ্কা হয়, তবে এরূপ করা মাকরুহ।

৪. রাতে গোসল ফরজ হলে সুবহে সাদিকের আগেই গোসল করে নেয়া উচিত, কিন্তু গোসল করতে দেরি করলে কিংবা সারাদিন গোসল না করলে যদিও রোজা ভঙ্গ হবে না কিন্তু বিনাপ্রয়োজনে নাপাক থাকায় গোনাহ হবে।

৫. রোজা অবস্থায় কয়লা, মাজন, ছাই, বালু ও টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজা মাকরুহ। এর কিছু অংশ যদি কণ্ঠনালীর নিচে চলে যায়, তবে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

৬. সিংগা লাগানো ও রোগীর জন্য নিজের রক্ত দেয়া মাকরুহ। তবে রক্তদানের কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না (জাওয়াহিরুল ফিকহ)।

৭. গিবত অর্থাৎ, পর নিন্দা সর্বাবস্থায় হারাম। রোজা অবস্থায় আরো ভয়াবহ পাপ (জাওয়াহিরুল ফিকহ)।

৮. রোজা অবস্থায় ঝগড়া-বিবাদ করা, কোনো মানুষকে গালি দেয়া কিংবা কোনো প্রাণী বা নিষ্প্রাণ বস্তুকে কষ্ট দেয়ার দ্বারা রোজা মাকরুহ হয় (জাওয়াহিরুল ফিকহ)।

[ অসমাপ্ত] প্রধান ফকিহ আল-জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com