কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘যাদের ধান পেকে গেছে তারা ধান কেটে ফেলুন। হাওরের পুরো ধান নষ্ট হলে চালের দাম অবশ্যই বাড়বে। চালের দাম বাড়লে কেউ বলবে না যে বন্যার কারণে চালের দাম বাড়বে। সবাই তখন বলবে ধানের দাম বাড়লো কেন- খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবাব চাইবে। বিরোধীদল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সবাই পেছনে লাগবে। কিন্তু কী কারণে দাম বাড়লো তা কেউ বলবে না। তখন আর আমাদের কাছে জবাব থাকে না। তখন আমরা চার দিক থেকে প্রচ- সমালোচনার শিকার হই।’
গতকাল শনিবার (১৬ এপ্রিল) বেলা ১২টায় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চাপতির হাওরের ভেঙে যাওয়া ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘হাওর এলাকায় একটু আগে বন্যার পানি আসে। হাওরবাসীর একমাত্র ফসল বোরো। সেই বোরো ফসল এলাকার মানুষের আশা ভরসা ও জীবনজীবিকা। সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ নেত্রকোনা কিশোরগঞ্জ সিলেটসহ আরও কয়েকটি জেলায় হাওর এলাকা রয়েছে। হাওরের ফসল আগাম বন্যায় নষ্ট হয়ে যায়। তবে গত কয়েক বছর ভালো ছিল, তাই কৃষক বোরো ফসল ঘরে তুলতে পেরেছেন। ২০১৭ সালে ভয়াবহ আগাম বন্যার কারণে হাওরের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ বছর দিরাইয়ের চাপতির হাওরের বাঁধ ভেঙে চার হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। এতে ৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে কৃষকের। একমাত্র ফসল হারানোর পর এলাকার মানুষের জীবনজীবিকা কীভাবে চলবে?’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকারের দায়িত্ব রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তিনি মানবদরদি একজন মানুষ। তিনি যতদিন থাকবেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে আমরা থাকবো, রাষ্ট্র থাকবে সবাই থাকবে। বিশ্বে করোনা মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের সম্ভাবনা রয়েছে। রাশিয়া এবং ইউক্রেন হলো বৃহত্তর গম উৎপাদনকারী দেশ। তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গম রফতানি করে। হাওর থেকে প্রতিবছর ১২-১৪ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়। তবে হাওরের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য কঠিন হবে।’
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘হাওর এলাকার বন্যার সবশেষ পরিস্থিতি জানতে সুনামগঞ্জে এসেছি। ইতিমধ্যে আবহাওয়ার বার্তায় বলা হয়েছে, হাওর এলাকায় আরও বৃষ্টিপাত হবে এবং আগাম বন্যায় অনেক এলাকা ডুবে যাবে। আবার আগাম বন্যা হলে এটি আমাদের জন্য চরম দুঃখজনক হবে। হাওর এলাকার অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়বে। কৃষক ভাইয়েরা আরও বিপাকে পড়বেন। এ ক্ষতি প্রায় প্রতিবছর হয়। ক্ষয়ক্ষতির কারণ আমরা চিহ্নিত করেছি। যেভাবে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়, এর জন্য আরও কঠিন করে নীতিমালা তৈরি করবো। যাতে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ যথাযথভাবে করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘কৃষি বিভাগ বলেছে, ২৮ জাতের ধান করতে। কৃষক ২৮ জাতের ধান না করে বেশি ফলনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে ২৯ জাতের ধান চাষ করেছেন। হাওর এলাকার মানুষের জন্য আমাদের বিজ্ঞানীরা রাতদিন পরিশ্রম করে গবেষণা করছেন। তারা ১৫ থেকে ২০ দিন আগে আসবে এমন জাতের ধান উদ্ভাবনের চেষ্টা করছেন। এটি হলে আমরা সবাই ঝুঁকিমুক্ত হয়ে পড়বো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সুনামগঞ্জ ৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য শামীমা শাহরীয়ার, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।