বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

তাড়াশে পাকা ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিচিন্তায় কৃষক

বিশেষ প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১১ মে, ২০২২

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলাতে এ বছর খেতের পাকা বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষক। জলাবদ্ধতা, কৃষি শ্রমিকের সংকট ও প্রতিকুল আবহাওয়ার কারণে তারা রীতিমত দিশেহারা। উপজেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন, তাড়াশের সবগুলো খাল-নালার অধিকাংশ জায়গার দখল নিয়ে ভরাট করেছেন অসচেতন মানুষজন। অনেকে যত্রতত্র পুকুর খনন করেছেন। সেতু ও কালভার্টের মুখে মাটি ফেলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ করেছেন। ফলে জলাবদ্ধতা থেকে কৃষকের মুক্তি মিলছেনা। তাছাড়া চলতি বোরো মৌসুমে রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, সিংড়া, গুরুদাসপুরসহ তাড়াশের আশপাশের আরো বেশ কয়েক উপজেলাতে এক সাথে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এজন্য চাহিদার সংখ্যক কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা। সরজমিনে গতকাল বুধবার তালম ইউনিয়নের বড়ই চড়া ভেংড়ী মৌজার বড়ই চড়া ভেংরি গ্রাম ও রোকনপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠে দেখা যায়, বেশিরভাগ বোরো খেতে পানি জমে আছে। এর মধ্যে কোন খেতের পাকা ধান ঝড় বৃষ্টিতে নুয়ে পড়ে পানিতে তলিয়ে পচে গেছে। কিছু ধান থেকে চারা গজিয়েছে। ঐ এলাকার খেতের যেটুকো ধান তুলনামুলক ভালো রয়েছে কৃষি শ্রমিক দিয়ে কাটার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। বড়ই চড়া ভেংরি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল লতিব, আব্দুস ছাত্তার, ফজলুর রহমান, লুৎফর রহমান, ছবির উদ্দিন, সামছুল হক, হাতেম আলী ও রোকনপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল হান্নান, আব্দুল জাব্বার, আবুল কালাম, আনোয়ার হোসেন, ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা প্রায় ১২ বছর ধরে বোরো ধান ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারিনা জলাবদ্ধতার কারণে। খেতের পানি নামার খাল, নালা ও সেতুগুলো বন্ধ। অন্যান্য বছরের মতো খেতের পাকা ধান পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে। বড়ই চড়া ভেংরি থেকে ভবানীপুর সড়কের রানীহাট জাঙ্গাল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ মাঠের মধ্যে সোয়া কিলোমিটার গ্রামীন সড়ক রয়েছে। সেই সড়কের দুই পাশে অনন্ত নালা খনন করা প্রয়োজন। তাহলে খেতের পানি ভদ্রাবতী নদী হয়ে চলনবিলে নেমে যাবে। দীর্ঘ কয়েক বছর বোরো আবাদে লোকসান গুনে অনেক কৃষক বিভিন্ন সমিতি ও ব্যাংকের ঋণে জড়িয়ে পড়েছেন। বড়ই চড়া ভেংরি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আব্দুল লতিব আরো বলেন, ব্রাক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছি। সেই টাকা দিয়ে বোরো আবাদ করেছিলাম। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এখন চক্রবৃদ্ধি সুদ মওকুফ করা না হলে পথে বসে যাব। মাধাইনগর ইউনিয়নের সেরাজপুর গ্রামের কৃষক আলি বক্স, শফিকুল ইসলাম, মালশিন গ্রামের কৃষক আতাউর রহমান, রিপন সরকার, কাস্তা গ্রামের কৃষক এরশাদ আলী, আইয়ুব আলী ও গুড়মা গ্রামের কৃষক আলতাব হোসেন, রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সেরাজপুর মৌজার কয়েকশ বিঘা পাকা বোরো ধানের খেতে পানি জমে আছে। মালশিন থেকে সেরাজপুর গ্রামীণ সড়কের মাঝে একটি সেতু ও একটি কালভার্ট রয়েছে। সেরাজপুর গ্রামের রুহুল আমীন নামে এক ব্যক্তি পুকুর খনন করে ঐ সেতুর মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। একই গ্রামের শাহালম নামে আরেকজন অনুরূপভাবে কালভার্টের মুখ বন্ধ করেছেন। ফলে উজানের পানি খেতে আটকে আছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেতু ও কালভার্টের মুখের মাটি অপসরণ করা না হলে ধান কাটা সম্ভবনা। তাহলে তিন বেলা ভাত জুটবেনা আমাদের। তাড়াশ সদর ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর গাতী, মাধবপুর, চক গোপিনাথপুর, বিদিমাগুড়া, বোয়ালিয়া, সান্তান, গ্রাম এলাকায় দেখা যায়, বির্স্তীর্ণ মাঠে-মাঠে জলাবদ্ধতা। ঐ এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক শাজাহান আলী, মনছুর রহমান, সুলতান মাহমুদ, ছোহরাব আলী, শামসুল হক, জুরান আলী, মজিবর মল্লিক, রেজাউল করিম, আব্দুল মোতালেব, শাহাদত হোসেন বলেন, আমাদের পাকা ধানের খেতে পানি আটকে আছে। কয়েকজন খেতের মালিক অন্যান্য কৃষকের জীবন জীবিকার কথা না ভেবে পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন। ফলে পানি বেড় হওয়ার কোন উপায়ন্ত নাই। কৃষি শ্রমিকরা ডোবা ধান কাটতে চাননা। এক বিঘা জমির ধান কাটার জন্য ছয় মণ ধান দিতে হচ্ছে তাদের। বোরো আবাদের খরচের টাকাও থাকবেনা আমাদের। এদিকে গুড়মা গ্রামের কৃষি শ্রমিক বাবলু, শফিক, ছইমুদ্দীন, লোবা, মনি ও সোহাগ বলেন, পানির মধ্যে বোরো ধান কাটতে সময় বেশি লাগে। খুব কষ্ট হয়। সেজন্য বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মণ করে ধান নিচ্ছি। খেত থেকে পানি নেমে গেলে আমাদের ধান কাটতে সুবিধা হয়। কৃষকও লাভবান হতেন। ভুক্তভোগী কৃষকরা আরো বলেন, বিগত বছরগুলোয় কৃষি শ্রমিকরা নিজে থেকে ধান কাটার জন্য তাড়াশে আসতেন। এবারে ঐসব গ্রাম-গঞ্জে গিয়ে তাদের পাওয়া যাচ্ছেনা। এরপর পাকা ধানের ওপর প্রায় দিন কম বেশি ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে! উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফুননাহার লুনা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে ২২ হাজার ৩৬০ হেক্টর খেতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। তার মধ্যে ৮ হাজার ৭৯০ হেক্টর খেত কাটা হয়েছে। কৃষি শ্রমিকের সংকট রয়েছে। তাড়াশ থেকে রানীহাট আঞ্চলিক সড়কের সাইট খাল, তাড়াশ থেকে ভূয়াগাঁতী আঞ্চলিক সড়কের সাইট খাল, তাড়াশ থেকে বারুহাস আঞ্চলিক সড়কের সাইট খাল, তাড়াশ থেকে মান্নাননগর ওয়াপদা বাঁধের সাইট খাল, তাড়াশ থেকে মহিষলুটি আঞ্চলিক সড়কের সাইট খাল ও তাড়াশ থেকে খালকুলা আঞ্চলিক সড়কের সাইট খাল দখলমুক্ত করে পূনরায় খনন করা আবশ্যক। একই সাথে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের তিন শতাধিক সেতু ও কালভার্টের মুখের মাটি অপসারণ করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো জলাবদ্ধতার কবল থেকে কৃষক বাঁচানো সম্ভনা। উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার সারোয়ার ধ্রুব বলেন, জনসচেতনতার অভাবে মানুষজন জলাধারগুলো দখল ও ভরাট করে ফেলেছেন। ওসব খাল-নালা খনন ও সেতু-কালভার্ট মুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম দৈনিক খবরপত্রকে বলেন, কৃষকের ধান নির্বিঘেœ ঘরে তোলার জন্য অধিকতর সমস্যার জায়গাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হবে। পরে তাড়াশ উপজেলার জলাবদ্ধতা নিরসনে সমন্বিত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com