বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ কালিয়ায় কন্যা শিশু দিবস পালিত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন তারাকান্দায় ১০ গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কালীগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানববন্ধন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিলন সম্পাদক পাভেল কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর মানিকগঞ্জে সাড়ে ৪লাখ ছাগলের বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচী শুরু আন্দোলনে নিহত নয়নকে বীরের মর্যাদা দেয়া হবে-দুলু

এত উৎপাদনের পরও কেন বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২

নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি বাংলাদেশ, ভারতসহ আমদানিকারক দেশগুলোর স্বার্থসংশ্লিষ্ট। মূলত এ বিদ্যুৎ আমদানির জন্য একটি আন্তঃমহাদেশীয় গ্রিড লাইন তৈরি করা হবে। এর মধ্য দিয়ে শুধু বিদ্যুৎ আমদানি নয়, চাইলে বাংলাদেশ রফতানিও করতে পারবে। সে কারণেই আমদানির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বিবেচনায় আমদানির বিষয়টি নিয়ে সচেতনভাবে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিদ্যুৎ খাতের পর্যবেক্ষকরা। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, এমনিতেই দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় বেশি। বসিয়ে রাখতে হচ্ছে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রই। এ অবস্থায় নতুন করে জলবিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। চাহিদা না থাকলে অযথা বিদ্যুৎ আমদানি করা হলে পরিস্থিতি জটিল হবে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট অর্থাৎ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতা চালু হওয়ার কথা। সব মিলিয়ে আগামী বছরের মধ্যেই নতুন করে ১০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনক্ষম হবে। এ সময়ের মধ্যে অবসরে যাবে মাত্র ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নবায়ন হওয়ারও জোর সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে এ বিদ্যুৎ কোথায় ব্যবহার হবে তার সুনির্দিষ্ট কোনো খাত তৈরি হয়নি এখনো। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন ছাড়াই বসে থাকলে বিপুল অংকের ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে বিদ্যুৎ বিভাগকে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, দেশের অনেক জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে নেপাল থেকে আমদানীকৃত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। তবে আমদানির আগে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকায় এরই মধ্যে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রিতে ঘাটতি তৈরি হয়েছে আড়াই টাকার মতো। এ অর্থ সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিয়ে সংস্থাটির ব্যয় সমন্বয় করতে হয়েছে। এ অবস্থায় রাজস্ব ক্ষতি কমাতে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যহার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিপিডিবি। বিদ্যুৎ খাতে গত অর্থবছরে (২০২০-২১) সংস্থাটি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে সংস্থাটির বিদ্যুতের উৎপাদন পর্যায়ে ভর্তুকি দরকার ২৫ হাজার কোটি টাকা। যদিও এ চাহিদার বিপরীতে সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক কী পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের দেয়া ঋণ ফেরত দিতে না পারায় সেটিকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের কথা জানিয়ে অর্থ বিভাগের কাছে আবেদন জানিয়েছে বিপিডিবি।
নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে বিদ্যুতের নীতি ও গবেষণা সংস্থা পাওয়ার সেল। সংস্থাটি বলছে, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি প্রতিবেশী দেশ ভারত ও রফতানিকারক দেশগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া জ্বালানির বাজার বিবেচনায় এ বিদ্যুৎ আমদানি সাশ্রয়ী হবে।
সংস্থাটির মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নেপালের জলবিদ্যুৎ আমদানিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীতে বৈশ্বিক জ্বালানির বাজার বিবেচনায় এ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। সারা বছর বিদ্যুৎপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা রয়েছে এখানে। আগামীতে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র অবসরে যাবে। তখন আমরা এ বিদ্যুৎ কাজে লাগাতে পারব। এছাড়া বিদ্যুতের নতুন নতুন খাত তৈরি হচ্ছে, সেখানেও বিদ্যুতের চাহিদা তৈরি হবে।
দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ২৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সক্ষমতার বিপরীতে বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে অর্ধেক। চাহিদা না থাকায় বসিয়ে রাখতে হচ্ছে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র। এগুলোর জন্য বিপুল অংকের অর্থ গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি)। এমন পরিস্থিতিতেও ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ানো হচ্ছে।
চাহিদা না থাকার পরও নতুন নতুন উৎস থেকে বিদ্যুৎ আমদানি খাতটিকে ভারসাম্যহীন করে তুলবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, বিদ্যুতের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করা না গেলে বিদ্যুৎ খাতে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হবে। ভর্তুকি বাড়িয়েও এ অবস্থা সামাল দেয়া যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে পিডিবি আর্থিক চাপ সামাল দেয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে। দেশে বর্তমানে ভারত থেকে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে। স¤প্রতি আসামে নদী সম্মেলন চলাকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, দেশটি থেকে আমদানির পাইপলাইনে রয়েছে আরো অন্তত ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য সমঝোতা স্মারকের বিষয়টি নিয়েও জোর আলোচনা চলছে। আগামী নভেম্বর নাগাদ নেপালের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে।
স¤প্রতি জাতীয় সংসদের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি জানানো হয়। অগ্রগতির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে নেপালে সানুকশি-৩, খিমতি শিবালয়া নামে দুটি স্থান প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। এ বিদ্যুৎ প্রকল্পে বাংলাদেশ ও নেপাল যৌথভাবে বিনিয়োগ করবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে বাংলাদেশ-নেপাল সঞ্চালন লাইন নির্মাণের বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতের দক্ষতা উন্নয়নে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়টিও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে একটি প্রতিবেদন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরা হয়। নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে ২০১৮ সালে একটি সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) সই হয়। এ চুক্তির আওতায় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) ও জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি (জেএসসি) গঠিত হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নেপালে ভারতের জিএমআর গ্রুপের উদ্যোগে নির্মাণ করা হচ্ছে জিএমআর আপার কর্নালি হাইড্রোপাওয়ার লিমিটেড (জিইউকেএইচএল) নামের এ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে এনভিভিএন ইন্ডিয়ার মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানি করবে বিপিডিবি। এছাড়া ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা সইয়ের কার্যক্রম চলছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব পাওয়া গিয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com