শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বগুড়া শেরপুরে আগুনে পুড়লো পঁচিশ বিঘা জমির ভুট্টা ইসলামাবাদে ভোট কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন বীর মুক্তিযোদ্ধার নির্মাণাধীন দোকানে সন্ত্রাসী হামলা বাগেরহাট নানান আয়োজনে মে দিবস পালিত ভালুকা বিশেষায়িত পেঁয়াজ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন বরিশালে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের ৪৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভুট্টা মাড়াইয়ে ব্যস্ত কৃষকেরা, দ্বিগুণ লাভের আশা নগরকান্দায় অগ্নিকান্ডে চারটি দোকান ঘর ভস্মীভূত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে গণতন্ত্রের মুক্তি হবে না-কেন্দ্রীয় বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার গলাচিপায় পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা ও জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ দিবস পালিত

সীতাকুণ্ডে আগুন: তদন্ত শেষ হবে কবে?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ জুন, ২০২২

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে ছয়টি কমিটি গঠন করা হয়। প্রত্যেক কমিটি ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহ করেছে। তবে গতকাল সোমবার (১৩ জুন) দুপুর পর্যন্ত একটি কমিটিও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে ৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে সদস্য সচিব করে গঠন করা এই কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্তের কাজে আরও পাঁচ কর্মদিবস সময় চেয়ে রবিবার (১২ জুন) দুপুরে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি এই সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া যাবে।’
কমিটির সদস্য পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, ‘কমিটির সদস্যরা ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়। জানতে চেষ্টা করছি, ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএম কনটেইনার ডিপো গার্মেন্ট সামগ্রী ও পোলট্রি ফিড রাখার কথা বলে ছাড়পত্র নিয়েছিল। তাদের ছাড়পত্রের ধরন গ্রিন-বি। রাসায়নিক রাখার কথা আবেদনে উল্লেখ করেনি তারা। পরিদর্শনে দেখা গেছে, তারা ডিপোতে রাসায়নিকও রেখেছিল। তবে কী কী রাসায়নিক ডিপোতে রাখা ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’ এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক বদিউল আলম। এই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে সাত দিন সময় দেওয়া হয়েছে। বদিউল আলম জানান, কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কাজ চলমান আছে। তদন্ত কাজ শেষ হলেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের পক্ষ থেকে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার শফিউদ্দিন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির কাজ চলমান রয়েছে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।এদিকে কাস্টমসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইসিডি পরিচালনা করতে হলে আইএসপিএস (ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি কোড), আইএমডিজি (দ্য ইন্টারন্যাশনাল ম্যারিটাইম ডেঞ্জারাস কোড) মেনে এবং ফায়ার সার্ভিস নির্দেশিত সেফটি সিকিউরিটি প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হয়। কিন্তু ওই ডিপোতে এসব কিছুই ছিল না।’ কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, সীতাকু-ের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ৩৩টি কনটেইনারে ৮৫০ মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ছিল। কনটেইনারগুলো ডিপোর ইয়ার্ডে রাখা ছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীন বেসরকারি এই কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ঘটনায় বন্দর কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল ম্যানেজার কুদরত-ই-খুদা, নির্বাহী পরিচালক ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনারকে নিয়ে গঠিত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্তর কাজ চলছে। শেষ করতে আরও সময় লাগবে। তদন্ত প্রতিবেদন কবে জমা দেওয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে গঠিত কমিটির প্রধান পরিচালক (প্রশিক্ষণ,পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেজাউল করিম। কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আনিসুর রহমান। মোট সাত সদস্যের এই কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তবে এখনও প্রতিবেদন জমা দেয়নি। কবে জমা দেওয়া হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না কমিটি সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া ঘটনার পরদিন রবিবার (৫ জুন) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ জানায়, তারাও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। এই কোম্পানির মালিকানা স্মার্ট গ্রুপের। তাদের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মেজর (অব.) শামসুল হায়দার সিদ্দিকীর সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তারা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি কত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে, সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। ঘটনা তদন্তে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত কমিটিকে সহায়তার অঙ্গীকার করেছে স্মার্ট গ্রুপ। তবে ওই কমিটির প্রতিবেদনও এখন পর্যন্ত প্রকাশ হয়নি। প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন রাত সাড়ে ৮টায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৪৮ জন। এর মধ্যে ১০ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৪৮ জনের মধ্যে ১৮টি লাশের পরিচয় শনাক্ত হয়নি। তাদের লাশের দাবিতে নমুনা দিয়েছেন স্বজনরা। ঘটনার চার দিন পর মঙ্গলবার রাতে মামলা করে পুলিশ। এতে আট জনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা সবাই বিএম কনটেইনার ডিপোর কর্মকর্তা। আগুন লাগার ৮৬ ঘণ্টা পর বুধবার সকালে নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সামরিক বাহিনী।
একের পর এক আগুন, অবহেলা নাকি নাশকতা? সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোর অগ্নিকাণ্ডের সপ্তাহ পেরিয়েছে মাত্র। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় ঝরেছে ৪৮টি তাজা প্রাণ। এরপরও অগ্নিকাণ্ড থেমে নেই, গেল সপ্তাহজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই মিলেছে আগুনের খবর। লক্ষণীয় বিষয় হলো, এসব দুর্ঘটনার সবগুলোই ঘটেছে হয় কারখানায়, নয়তো যানবাহনে। বাস থেকে শুরু করে বাদ যায়নি ট্রেন এবং ফেরিও। প্রশ্ন উঠছে— একের পর এক এসব অগ্নিকাণ্ড কি কেবলই অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা, নাকি এতে নাশকতার যোগসূত্র রয়েছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘দুটো দিকই মাথায় রেখে সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’ আর শ্রমিক নেতারা বলছেন, ‘এসব দুর্ঘটনায় ক্ষমতার বিপরীতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শ্রমিকদের মৃত্যুর বিচার না হওয়ায় বছরের পর বছর কারখানাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেই চলছে।’ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সময় পরপর ১৫ থেকে ২০টি কন্টেইনারে বিস্ফোরণ ঘটে। সেসময় প্রতিটি কন্টেইনার একেকটি শক্তিশালী বোমায় পরিণত হয়। ওই ঘটনায় চার শতাধিক মানুষ দগ্ধ হয়েছেন। আর এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ১০ কর্মীও রয়েছেন। কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে ৪ জুন রাত ৯টার দিকে। আগুন তখনও নেভেনি, এরই মধ্যে ৫ জুন (রবিবার) পাবনার বেড়া উপজেলায় পাঠকাঠির কারখানায় আগুনের খবর আসে। পরেরদিন ৬ তারিখ আগুনের কোনও খবর না পাওয়া গেলেও ৭ জুন সোমবার মোহাম্মদপুরের বসিলায় একটি জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ৮ জুন মঙ্গলবার চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় এবং রাজধানীর পোস্তগোলায় চিপসের কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটে। ১০ জুন রাজধানীর নর্দা এলাকায় তুরাগ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসে আগুন লাগে। পরেরদিন ১১ জুন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে চলন্ত ট্রেনে এবং শিমুলিয়া ঘাটে যাত্রী ও যানবাহন ভর্তি একটি ফেরিতে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। সবশেষ গতকাল রবিবার (১২ জুন) আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের খবর পাওয়া যায়।
হঠাৎ করে কেন আগুনের ঘটনা বাড়ছে প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, আগের বড় বড় আগুনের ঘটনায় ‘অবহেলাজনিত’ কারণ বিষয়টি বারবার দেখা যাওয়ার পরেও বিচারের মুখোমুখি করতে দেখা যায়নি। বিচারহীনতার কারণে যারা দায়ী তারা সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। ফলে যেকোনও দুর্ঘটনা এড়াতে তার যেসব প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, তা তারা নেয় না।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান মনে করে ধারাবাহিকভাবে এধরনের অগিকাণ্ডের কারণ হিসেবে নাশকতা একটি কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এসব ক্ষেত্রে দুধরনের বিষয় ঘটে থাকে। এক অবহেলাজনিত ও আরেক নাশকতামূলক। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিটা ক্ষেত্রে দায়িত্বের জায়গায় একধরনের অবহেলা লক্ষ্য করা যায়। কন্টেইনারে কী বস্তু থাকবে এবং সেটা কীভাবে রাখা হবে; তা নিয়ে কোনও মনিটরিং থাকবে না- তা তো হতে পারে না। কেননা সেই অনুযায়ী সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা।’
বিচারহীনতাকে কারখানায় ঘনঘন অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম কারণ উল্লেখ করে শ্রমিক নেতা শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘তাজরীন ফ্যাশন বলেন, পুরান ঢাকার নিমতলী বলেন; সবখানেই আগুনের পেছনে মালিকপক্ষের অবহেলা ছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। পুরান ঢাকা থেকে এখনও কেমিক্যালের গুদাম সরানো সম্ভব হয়নি। একজন মালিককেও তার কাজের (অবহেলা) জন্য বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। ফলে সবচেয়ে দুর্বল হিসেবে শ্রমিকসমাজ বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে, হচ্ছে। নামমাত্র ক্ষতিপূরণেই চুপ থাকতে হচ্ছে তাদের। আর অন্যরা ঝুঁকি নিয়েই আবার নেমে পড়ছেন জীবনযুদ্ধে। আসলে তাদের জন্য কথা বলার কেউ নেই।’ -বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com