মহামারী করোনাভাইরাস সংক্রমণের ওপর ভিত্তি করে রেড, ইয়োলো ও গ্রিন জোন করে এলাকাভেদে লকডাউন ঘোষণা সংক্রান্ত প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা ক্যাবিনেট মিটিংয়ে আলোচনা হয়নি, মন্ত্রী (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) মহোদয়ের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। আমাদের যে সংক্রামক ব্যাধি আইন আছে, এটা সেই আইনের মধ্যে দেয়া আছে। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর অথরাইজড।’
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা অ্যাপ্রিশিয়েট করেছেন যে, আইনটি ব্যবহার করে যেভাবে জোনিং করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে এটা সারা পৃথিবীতে করা হচ্ছে। এটাতে সুবিধা আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য এক্সিকিউটিভ মিনিস্ট্রি, তারা বসেই যদি মনে করে কোনো জায়গাটাকে…. রেড জোন ডিক্লেয়ার করলে সবার জন্যই ভালো, কারণ সবাই তখন সতর্ক হতে পারবে।’
এর আগে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাজধানী ঢাকার ৩৮ এলাকা লকডাউন (রেড জোন) ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
রোববার (৭ মে) সকাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর এই লকডাউন কার্যকরের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছে। এর আগে শনিবার (৬ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা তথ্য সম্পর্কিত ওয়েবসাইট এ তালিকা প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটের তালিকায় ঢাকা শহরের ৩৮টি এলাকাকে আংশিক লকডাউন হিসেবে দেখানো হয়েছে। লকডাউন নয় বলে দেখানো হয়েছে ১১টি এলাকাকে। এখন পর্যন্ত পুরোপুরি লকডাউন হিসেবে ঢাকার কোনো এলাকাকে দেখানো হয়নি।
ঢাকা শহরের আংশিক লকডাউন বলে চিহ্নিত ৩৮টি এলাকা হল- আদাবর, থানা, উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, ওয়ারী, কদমতলী, কলাবাগান, কাফরুল, কামরাঙ্গীরচর, কোতয়ালী, খিলক্ষেত, গুলশান, গেন্ডারিয়া, চকবাজার, ডেমরা, তেজগাঁও, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, দক্ষিণখান, দারুসসালাম, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, পল্টন মডেল, পল্লবী, বংশাল, বাড্ডা, বিমানবন্দর, ভাটারা, মিরপুর মডেল, মুগদা, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী, রমনা মডেল, লালবাগ, শাহআলী, শাহজাহানপুর, শেরেবাংলা নগর, সবুজবাগ, সুত্রাপুর ও হাজারীবাগ থানা এলাকা।
লকডাউন নয় বলে চিহ্নিত ১১টি এলাকা হলো- উত্তরখান থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানা, খিলগাঁও, তুরাগ, বনানী, ভাষানটেক, মতিঝিল, রামপুরা, রূপনগর, শাহবাগ ও শ্যামপুর থানা এলাকা।
এছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের ৫০টি জেলা ও ৪০০ উপজেলা সম্পূর্ণ লকডাউন (রেড জোন) ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
জেলা ও ৪০০টি উপজেলাকে পুরোপুরি লকডাউন (রেড জোন বিবেচিত) দেখানো হচ্ছে। আংশিক লকডাউন (ইয়েলো জোন বিবেচিত) দেখানো হচ্ছে পাঁচটি বিভাগ, ১৩টি জেলা ও ১৯টি উপজেলাকে। আর লকডাউন নয় (গ্রিন জোন বিবেচিত) এমন জেলা দেখানো হচ্ছে একটি এবং উপজেলা দেখানো হচ্ছে ৭৫টি।
তালিকায় ঢাকা বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন দেখানো হয়েছে গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও টাঙ্গাইল জেলাকে। শুধু ঢাকা ও ফরিদপুর জেলাকে আংশিক লকডাউন।
বরিশাল বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন দেখানো হয়েছে বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলাকে। আংশিক লকডাউন ভোলা ও ঝালকাঠি জেলা ।
চট্টগ্রাম বিভাগে পুরোপুরি লকডাউন দেখানো হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ফেনী, খাগড়াছড়ি, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলা। আংশিক লকডাউন বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি জেলা।
খুলনা বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, মেহেরপুর, নড়াইল ও সাতক্ষীরাকে পুরোপুরি লকডাউন জেলাকে দেখানো হয়েছে। আংশিক লকডাউন দেখানো হয়েছে বাগেরহাট, কুষ্টিয়া ও মাগুরা জেলাকে। খুলনা বিভাগেই দেশের একমাত্র গ্রিন জোন চিহ্নিত ঝিনাইদহ জেলা।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে পুরোপুরি লকডাউন দেখানো হয়েছে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর ও রাজশাহী জেলাকে। আংশিক লকডাউন চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা।
রংপুর বিভাগের আটটি জেলাকেই পুরোপুরি লকডাউন দেখানো হয়েছে জেলাগুলো হল- দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও।
সিলেট বিভাগের সব ক’টি জেলাকেই দেখানো হয়েছে পুরোপুরি লকডাউন। জেলাগুলো হল- হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেট।
ময়মনসিংহ বিভাগেরও সব ক’টি জেলাকে পুরোপুরি লকডাউন দেখানো হয়েছে । জেলাগুলো হল- জামালপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও শেরপুর।
এমআইপি/প্রিন্স