বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

সিলেটে আশ্রয়কেন্দ্রে এক লাখ মানুষ, দুজনের মৃত্যু

খবরপত্র ডেস্ক
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ জুন, ২০২২

নতুন করে বন্যা হতে পারে যেসব এলাকায়
সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এক লাখ পাঁচ হাজারের মতো মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এখন পর্যন্ত বন্যায় মারা গেছেন দুজন। গতকাল রোববার (১৯ জুন) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সিলেটের ৬০ এবং সুনামগঞ্জের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। এদের উদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে। সবশেষ খবর অনুযায়ী সেনাবাহিনীর ৩২, নৌবাহিনীর ১২ এবং ফায়ার সার্ভিসের চারটি বোট কাজ করছে দু-জায়গায়। এরই মধ্যে তারা এক লাখ মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, এরমধ্যে সুনামগঞ্জে ৭৫ হাজার, আর সিলেটে ৩০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে। নিখোঁজের কোনো তথ্য এখনও আমরা পাইনি। গতকালের পর থেকে কোনো ক্যাজুয়ালটিও হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় মানুষ আটকে পড়ে আছে। সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হয়েছে, কিন্তু সুনামগঞ্জে পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত আছে। একই সঙ্গে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যায় প্রাণহানির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা দুজনের প্রাণহানির খবর পেয়েছি। একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী, সে স্রোতে ভেসে গেছে। আরেকজন বয়স্ক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পর্শে মারা গেছেন। আবহাওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তর ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকবে। মঙ্গলবার থেকে পানি কমতে থাকবে এবং টানা তিনদিন কমবে। এসময় উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিন্তু দক্ষিণাঞ্চল বা ভাটির দিকে অবনতি হবে। এরই মধ্যে দেশের আরও বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। সেগুলো হলো রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, শেরপুর, জামালপুর, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ। তিনি বলেন, এখন ১২টি জেলা বন্যা কবলিত। প্রায় ৭০টি উপজেলায় বন্যা রয়েছে। এটা বাড়ছে। মো. এনামুর রহমান বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা কমবে, কিন্তু উত্তরাঞ্চলে বন্যা বাড়বে, কারণ ব্রহ্মপুত্র, ধরলা তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। বন্যার্তদের সহায়তার বিষয়ে তিনি বলেন, গতকাল পর্যন্ত আমরা একেকটি জেলায় ৮০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম, আজ আরও ৫০ লাখ করে দিয়েছি। মোট এক কোটি ৩০ করে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা দুটি জেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যে জেলাগুলো নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সেগুলোতে আমরা ১০ লাখ টাকা, ১০০ টন চাল আর চার হাজার প্যাকেট করে শুকনা খাবার এরই মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছি। যেভাবে বন্যা হয়েছে আরও ত্রাণ দরকার জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা যেটা দিচ্ছি বিতরণ করে পারছে না। এ কারণে সাপ্লাইয়ের একটি কনটিনিউয়াস চেইন মেইনটেইন করা হচ্ছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী আমাদের আরও ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জিআর চাল আছে, শুকনা খাবারও আছে। যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে আমরা দেবো। নতুন করে বন্যা হতে পারে যেসব এলাকায়: উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে দেশের সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। আর এর ফলে নতুন করে আরও কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গতকাল রবিবার (১৯ জুন) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনাসহ লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। আর নতুন করে প্লাবিত হতে পারে টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চল। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর সবগুলোরই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে ৯টি নদীর ১৮ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর গাণিতিক মডেলভিত্তিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের স্থানসমূহে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমারসহ সকল প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারেও বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। একই সময়ে তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপৎসীমার কাছাকাছি অথবা উপরে অবস্থান করতে পারে। এদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এই সময়ে টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, সুরমা, কুশিয়ারা, ঘাঘট এবং সোমেশ্বরী নদীর ১৮ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। তবে সারিগোয়াইন, খোয়াই, পুরতন সুরমা ও কংশ নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। বিভিন্ন-নদীর-পানি: যেসব নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে তার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় দুই পয়েন্টের পানি। কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টের পানি ১৬০ এবং সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতের বিষয়ে কেন্দ্র বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে সিলেটের জাফলং-এ ৩১৭ মিলিমিটার। এছাড়া সিলেট পয়েন্টে ৩১৫, সিলেটের লালাখালে ৩১১, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণবাগ পয়েন্টে ২০৫, লাটুতে ১৭৫, কানাইঘাটে ১১০, জকিগঞ্জে ১৯৩, শেওলায় ১১৫ এবং সুনামগঞ্জে ১২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভারতের আসামের শিলচরে সর্বোচ্চ ২৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া চেরাপুঞ্জিতে ২৫৩ এবং মিজোরামের আইজলে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। সিলেটে দোকান খুলতেই ক্রেতার লাইন, দাম দ্বিগুণ: বন্যার অজুহাতে সিলেটের কিছু ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রি করছেন নিত্যপণ্য। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা যখন ব্যস্ত রয়েছেন- সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করছেন ব্যবসায়ীরা। শনিবার (১৮ জুন) সিলেট নগরীর আম্বরখানা, বন্দরবাজার ও কালিঘাটের ব্যবসায়ীদের দ্বিগুণ দামে চিড়া, মুড়ি ও গুড় বিক্রি করতে দেখা গেছে। রবিবার বাজারে শুকনো খাবার সংকটের অজুহাতে একই দামে পণ্য বিক্রি করছেন তারা। বন্যায় ঘর ছেড়ে আবাসিক হোটেলে আশ্রয় নেওয়া গৃহিণী নাজমিন বেগম দাবি করেন, ‘রবিবার নগরীর আম্বরখানা এলাকা থেকে এক কেজি মুড়ি ১২০, ভাজা চিড়া আধা কেজি ১০০, ২৫০ গ্রাম গুড় ৫০ ও এক প্যাকেট মোমবাতি ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছি।’ তার অভিযোগ, ‘একদিকে বন্যায় মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দ্বিগুণ দামে পণ্য বিক্রি করে যাচ্ছেন।’ এ জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি বলে তিনি মনে করেন। একই অভিযোগ করেন নগরীর জিন্দাবাজারের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের মধ্যে ন্যূনতম সহযোগিতার মানসিকতা নেই। কয়েক ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ চলে গেলে দুই প্যাকেট মোমবাতি কিনেছি ১৮০ টাকা দিয়ে। মুড়ি আধা কেজি কিনেছি ১০০ টাকা দিয়ে।’ কালিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী সুমন আহমদ জানান, বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের দোকানপাট তলিয়ে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি দামেও মিলছে না চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য। বন্যার পানিতে বহু দোকান তলিয়ে যাওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত বলেন, ‘বাজারে নিত্যপণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি হওয়ার খবর শুনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তদারকির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসন বিষয়টি তদারকিতে রেখেছে।’ জানা গেছে, নগরীর আম্বরখানা, মিরাবাজার, মদিনা মার্কেট, কালিঘাট, উপশহর, টিলাগড়, মেজরটিলা ও শহরতীর নয়াবাজার, বাদাঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ডিমের হালি ৫০, আলু ৩০, মোমবাতির প্যাকেট ৮০ ১০০, গুড় ১৫০-২০০ ও কলা প্রতি হালি ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সিলেটে বেড়েছে সবজির দাম। ২০ টাকার ঢেঁড়স ৩০-৩৫, পটল ২৫-৩০, বরবটি ৬০-৭০ ও দেশি মসুর ডাল ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বেড়েছে মাছ ও ব্রয়লার মুরগির দাম। নগরীর মদিনা মার্কেটের পরাগ স্টোরের মালিক শিমুল রঞ্জন ধর দাবি করেন, ‘বৃষ্টি ও বন্যার কারণে সকালে দোকান খুলিনি। দুপুরে বৃষ্টির পরিমাণ কমলে দোকান খোলা মাত্র ক্রেতারা লাইন দিয়ে নিত্যপণ্য ক্রয় করা শুরু করেন।’ তিনি বলেন, ‘যিনি আগে এক কেজি আলু কিনতেন তিনি ১০ কেজি কিনছেন। ফলে নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।’ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যায় সিলেটের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালীঘাট ও কাজিরবাজার পানির নিচে। এতে নিত্যপণ্যের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে দোকানে পণ্যের দাম ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। সুনামগঞ্জের ডিসি অফিসে জন্ম নেওয়া শিশুর নাম রাখলেন প্রধানমন্ত্রী: সুনামগঞ্জে ডিসি অফিসের আশ্রয়কেন্দ্রে জন্ম নেওয়া শিশুর নাম রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত শনিবার (১৮ জুন) সকাল ১০টার সময় জন্ম নেওয়া শিশুটির নাম মোবাইল ফোনে নিজে ‘প্লাবন’ রাখেন প্রধানমন্ত্রী। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা জমিলা খাতুনের প্রসব বেদনা শুরু হলে রোববার সকালে স্বামী সুমন মিয়ার সঙ্গে সুনামগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রওনা হন। কিন্তু রাস্তা ডুবে যাওয়ায় তারা আটকা পড়েন। পরে তাদের সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ডিসি অফিসের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। সকাল ১০টায় জমিলার কোল আলো করে জন্ম নেয় দ্বিতীয় পুত্রসন্তান। পরে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানালে তিনি ওই শিশুটির নাম প্লাবন রেখে দেন। একইসঙ্গে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেনের মাধ্যমে শিশুকে উপহার সামগ্রী পাঠিয়ে দেন।
শিশুটির বাবা গাড়িচালক সুমন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বন্যা এসে সুনামগঞ্জের সব মানুষের কষ্ট হয়েছে। আমারও খুব কষ্ট হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আমার ছেলের নাম নিজে রেখে দিলেন এবং উপহার সামগ্রী পাঠালেন আমি নিজেকে ধন্য মনে করেছি। নবজাতকের মা জমিলা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ভেবেছিলাম বন্যার পানির কারণে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই আমি মারা যাবো। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমাকে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে সুন্দরভাবে সন্তান প্রসব করিয়েছে। আমার ছেলের নাম প্রধানমন্ত্রী নিজে রেখেছেন, আমি সত্যি খুব আনন্দিত। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো.জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মল্লিকপুর এলাকার ওই দম্পতির বাড়ি বন্যার পানিতে ডুবে গিয়েছিল। তার মধ্যে জমিলা খাতুনের প্রসব যন্ত্রণা উঠলে তারা সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হয়। কিন্তু রাস্তা ডুবে যাওয়ায় সেখানে যেতে পারেনি। পরে আমি তাদের আমার কার্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এলে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীকে জানালে তিনি শিশুটির নাম প্লাবন রেখে দেন এবং তার জন্য উপহার সামগ্রী পাঠান।
বন্যা কবলিত জেলায় জরুরি টেলিসেবা স্থাপন করছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: বন্যা কবলিত সিলেট ও সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও উত্তরবঙ্গে জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা সচল রাখতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন শুরু হয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নির্দেশে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড ইন্টারনেটসহ নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে ভিস?্যাট যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে গতকাল শনিবার ১২টি ভিস্যাট যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করা হয়। গতকাল রোববার নেত্রকোনা ও উত্তরবঙ্গে ভিস্যাট হাব স্থাপিত হবে।আজ রোববার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক তথ্যবিবরণীতে এসব জানানো হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানায়, সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরকেও আরো ২৩ সেট ভিস্যাট যন্ত্রপাতি হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে। এর ফলে আরো ২৩ টি বন্যা উপদ্রুত এলাকায় জরুরি টেলিযোগাযোগ সেবা স্থাপন করা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি বন্যা কবলিত এলাকায় নিয়োজিত সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের প্রয়োজন অনুযায়ী আরো ভিস্যাট যন্ত্রপাতি সরবরাহ করতে পারবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর প্রয়োজন অনুযায়ী মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সচল করার কাজেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ ব্যবহার করতে পারবে।
ভিস্যাট এর মাধ্যমে দুর্যোগকালীন সময়ে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএসসিএল এরই মধ্যে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছে, যেটি মাঠ প্রশাসনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করবে। বন্যা কবলিত এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় টেলিযোগাযোগ সেবা চালু রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোবাইল অপারেটরসমূহকে বানভাসি মানুষদের জন্য প্রত্যেকে তিনটি করে টোল ফ্রি নাম্বার চালু করার নির্দেশে দিয়েছেন। নির্দেশনার আলোকে মোবাইল অপারেটরসমূহ টোল ফ্রি নাম্বার চালু করেছে । টোল ফ্রি নাম্বারগুলো হচ্ছে: গ্রামীণফোন: ০১৭৬৯১৭৭২৬৬, ০১৭৬৯১৭৭২৬৭, ০১৭৬৯১৭৭২৬৮ রবি: ০১৮৫২৭৮৮০০০, ০১৮৫২৭৯৮৮০০, ০১৮৫২৮০৪৪৭৭ বাংলালিংক: ০১৯৮৭৭৮১১৪৪, ০১৯৯৩৭৮১১৪৪, ০১৯৯৫৭৮১১৪৪ টেলিটক: ০১৫১৩৯১৮০৯৬, ০১৫১৩৯১৮০৯৭, ০১৫১৩৯১৮০৯৮।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com