সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে খাস কালেকশনের নামে দুর্নীতি: জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ নতজানু নীতির কারণে হাসিনা সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ করেননি খেলাধুলা শরীরিক ওমানসিক বিকাশ ঘটায় : রেজওয়ানুল হক পাটগ্রামের দহগ্রামে বন্যা কবলিত পরিবারের মাঝে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ত্রাণ সহায়তা প্রদান কালীগঞ্জে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপন ফটিকছড়িতে হামলার পর উল্টো মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ! লাকসামে ১৬৫ পরিবারকে স্পেন-বাংলাদেশ সোসাইটির নগদ অর্থ সহায়তা শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে নড়াইলে হরিলীলামৃত স্কুলের শিক্ষকদের সম্মানী প্রদান ফুলপুরে বন্যার মারাত্মক অবনতি রায়গঞ্জে জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস পালিত

আদর্শ রাষ্ট্রনায়ক কেমন হবেন?

মাওলানা আসলাম শেখোপুরি রহ
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০২২

রাষ্ট্রনায়কদের জন্য অপরিহার্য হলো নিজের প্রজাসাধারণের প্রতি ভালোবাসা, দয়া ও করুণার আচরণ করা। তাদের সাথে কঠোরতার আচরণ বর্জন করা। মহানবী সা: একদিন প্রার্থনা করে বলেছেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তিকে আমার উম্মতের কোনো শাখার শাসক বানানো হয়, এরপর সে লোকদের ওপর কঠোরতা আরোপ করে আপনিও তার ওপর কঠোরতা আরোপ করুন। আর যে ব্যক্তি শাসনভার গ্রহণ করার পর লোকদের সাথে নম্রতা অবলম্বন করে আপনিও তার প্রতি নম্রতা অবলম্বন করুন।
শাসকদের জন্য অপরিহার্য হলো প্রজাসাধারণের সুখ-দুঃখে অংশগ্রহণ করা। তাদের হেফাজত ও তত্ত্বাবধান করা। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তিকে জনগণের সেবার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়, এরপর সে জনসাধারণের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনা সেভাবে করে না যেভাবে নিজের পরিবার পরিজনের দেখাশোনা করে; এমন ব্যক্তি জান্নাতের সুবাসও পাবে না। খোলাফায়ে রাশেদিন এর ওপর আমল করে দেখিয়েছেন। আজকের শাসকদের জন্য উচিত হলো খোলাফায়ে রাশেদিনকে নিজেদের শাসনের আদর্শ বানানো।
হজরত ওমর ফারুক রা: রাতের বেলা একজন পঙ্গু ও অন্ধ বৃদ্ধার দেখাশোনা করতেন। তার প্রয়োজনীয় কাজ করে দিতেন। সেই মহিলা মদিনার আশপাশেই থাকতেন। কিন্তু কিছু দিন পর হজরত ওমর রা: দেখলেন, অন্য কোনো ব্যক্তি এসে তার আগেই কাজ করে চলে যায়। তিনি নিতান্ত হয়রান হলেন, কে সেই ব্যক্তি? সেই ব্যক্তিকে দেখার জন্য একদিন রাতের বেলা দাঁড়িয়ে থাকেন। এক সময় দেখতে পান হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: এসেছেন। হজরত ওমর রা: বললেন, আপনি ছাড়া এমন ব্যক্তি আর কে হতে পারে?
হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: হজরত আয়েশা রা:-কে বললেন, যখন থেকে আমি খলিফা হয়েছি তখন থেকে আমি মোটা খাবার খেয়েছি। মোটা কাপড় পরিধান করেছি। মুসলমানদের গণিমতের সম্পদ থেকে আমার কাছে এই ইথিওপীয় ভৃত্য, উট ও পুরনো চাদরটি ছাড়া আর কিছুই নেই। আমার মৃত্যুর পর তুমি এ বস্তুগুলো হজরত ওমর রা:-এর কাছে পাঠিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। হজরত আয়েশা রা: তার মৃত্যুর পর এমনটিই করেন।
হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রহ: গ্রীষ্মকালের এক দুপুরে আরাম করছিলেন। এ সময় এক দাসী তাকে পাখা দিয়ে বাতাস করছিল। পাখা দোলাতে দোলাতে তারও ঘুম এসে যায়। এ সময় হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজিজ রহ: পাখা নিয়ে তাকে বাতাস করতে থাকেন! দাসীর চোখ খুললে ঘাবড়ে গিয়ে বলতে থাকে, আমিরুল মুমিনিন! আপনি একি করছেন? আমিরুল মুমিনিন দাসীকে সান্ত¡না দিয়ে বললেন, আমার মতো তুমিও মানুষ। তোমারও গরম লাগে। যেভাবে তুমি আমাকে পাখা দিয়ে বাতাস করেছ, আমিও যদি তোমাকে সেভাবে পাখা দিয়ে বাতাস করি, তা হলে সমস্যা কোথায়?
শাসকের জন্য অপরিহার্য হলো জনসাধারণের মধ্যে সমতা ও ন্যয়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা। এমন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া যে টাকার বিনিময়ে ইনসাফ ও সমতাকে বিক্রি করবে না। যার দৃষ্টিতে ধনী ও দরিদ্র সমান হবে। এ ব্যাপারে হজরত আলী রা:-এর ঘটনা প্রসিদ্ধ আছে। তার লৌহবর্ম এক ইহুদি ছিনিয়ে নিয়েছিল। হজরত আলী রা:-এর শাসনামল চলছিল। তিনি বাদি হয়ে তারই কর্মচারী বিচারপতি শুরাইহের আদালতে মামলা করেন। তিনি সাক্ষী হিসেবে নিজের ছেলে হজরত হাসান ও নিজের ভৃত্য কুম্বারকে পেশ করেন। বিচারপতি শুরাইহ তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বলেন, পুত্রের সাক্ষ্য পিতার জন্য ও ভৃত্যের সাক্ষ্য মনিবের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। এতে হজরত আলী রা: বলেন, আপনি হাসানের সাক্ষ্য গ্রহণ করতে অস্বীকার করছেন! অথচ আমি আল্লাহর রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, হাসান ও হুসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার। জান্নাতি যুবকদের সর্দারের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করা যায়? বিচারপতি শুরাইহ বলেন, আমরা পৃথিবীতে অবস্থান করছি। আর আপনি জান্নাতের আলোচনা করছেন। আপনি নিজের দাবির সপক্ষে অন্য কোনো সাক্ষ্য পেশ করুন। ইহুদি দৃশ্যটি প্রত্যক্ষ করে হয়রান হয়ে যায় যে, ইসলামের সামাজিক সাম্য, সমতা ও ইনসাফ এতটা নির্ভেজাল? যখন আদালত থেকে তার দাবি খারিজ হয়ে যায় তখন ইহুদি বাইরে বের হয়ে আরজ করে, আপনার সত্যবাদিতায় কোনো সন্দেহ নেই। এই লৌহবর্ম আপনার। এরপর সে হৃষ্টচিত্তে মুসলমান হয়ে যায়!
রাষ্ট্রনায়কের জন্য অপরিহার্য হলো রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও কোষাগারের যথাযথ হিফাজত করা এবং জনগণের সম্পদ কুক্ষিগত করে আত্মসাৎ না করা। প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা:-এর আদর্শিক শাসনামল এ ব্যাপারে উত্তম মাইলফলক। তিনি হজরত ওমর ফারুক রা:-এর মতো মহান সাহাবির অনুরোধে নিজের জন্য যে ভাতা নির্ধারণ করেন তা এত কম ছিল যার মাধ্যমে ভালো কোনো খাবার রান্নার ব্যবস্থা করা যেত না। একবার স্ত্রী মিষ্টি খাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন, আমি এর চেয়ে বেশি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিতে পারি না। এরপর স্ত্রী কম খেয়ে খেয়ে যখন মিষ্টির জন্য কিছু পয়সা সঞ্চয় করেন তখন এই ফরমান লিখে পাঠান, এই পরিমাণ টাকা আমার ভাতা থেকে কমিয়ে দেবেন। কেননা, এ পরিমাণ টাকা ছাড়াও আমার দিন চলে যায়! শুধু তাই নয়, নিজের স্ত্রীর সঞ্চয়কৃত টাকাও তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে দেন!
আজকের শাসকরা ক্ষমতাকে আমানত মনে করেন না, বরং বাপ-দাদার উত্তরাধিকার মনে করেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগারকে আমানত মনে করেন না, বরং গণিমতের সম্পদ মনে করেন। এ কারণেই তারা রাষ্ট্রীয় সম্পদকে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করেন! (নিদায়ে মিম্বার : প্রথম খ-) অনুবাদ : শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা-১২১১




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com