অনেকের ধারণা, আমেরিকা বিশ্বযুদ্ধ বাধানোর পায়তারা করছে। একক পরাশক্তিত্ব বহাল ও অস্ত্র ব্যবসা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এটা করছে। এতদিন দেশটি চীনকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে দেশটিকে পঙ্গু করার জন্য বহু নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। চীনের আপত্তি উপেক্ষা করে আমেরিকা তাইওয়ানকে ব্যাপক সামরিক সুবিধা দিচ্ছে। চীন বিরোধী এসব কর্মে মার্কিন মিত্ররাও সংশ্লিষ্ট হয়েছে।কিন্তু তাতে এ পর্যন্ত চীনের তেমন ক্ষতি হয়নি। আমেরিকা রাশিয়াকেও প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে দেশটিকে কাবু করার লক্ষ্যে অনেক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। রাশিয়াও তার পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এতেও মার্কিন মিত্ররাও সংশ্লিষ্ট হয়েছে। এটা শুরু হয়েছে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকেই। উপরন্তু তারা ইউক্রেনকে ব্যাপক সামরিক ও আর্থিক সাহায্য করছে। এমনকি তাদের অনেকেই ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধও করছে। অর্থাৎ তারা ইউক্রেনের পক্ষে ছায়া যুদ্ধ করছে। সরাসরি যুদ্ধে স¤পৃক্ত হচ্ছে না রাশিয়ার ভয়ে। ইউক্রেনকে এ সহায়তা করার লক্ষ্য হচ্ছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করে রাশিয়াকে পরাস্থ ও আর্থিকভাবে পঙ্গু করা, প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করা। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এখনো চলছে।তাতে এ পর্যন্ত বহু হতাহত হয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনের দনবাসের অধিকাংশ অঞ্চলসহ সমগ্র দেশের বেশিরভাগ এলাকা দখল করেছে। দেশটি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। পুতিন গত ৭ জুলাই বলেছেন, পশ্চিমারা যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে পরাজিত করতে চায়। তারা চেষ্টা করে দেখতে পারে। রাশিয়ার শক্তি অনেক বেশি। ইউক্রেনে বিশেষ অভিযানে খুব সামান্য শক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। উপরন্তু তিনি সম্প্রতি এক ডিক্রিতে সই করেছেন, যাতে বলা হয়েছে, ‘সহজ উপায়ে ইউক্রেনের সকল নাগরিককে রুশ ফেডারেশনের নাগরিক হতে আবেদন করার অধিকার’ দেয়া হলো। ইকোনমিস্ট বলছে, এ যুদ্ধে রাশিয়ার দিকেই পাল্লা ভারী। অপরদিকে, রাশিয়ার উপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞার পরও দেশটির রফতানি ও রুবলের মান বেড়েছে। পুতিনের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তিনি কিছুদিন আগে তুর্কমেনিস্তান সফর করেছেন এবং বলেছেন, নর্ডিক অঞ্চলে ন্যাটোর সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি রাশিয়া কখনোই মেনে নেবে না। গত ১৭ জুন সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক ফোরামের বক্তব্যে বলেছেন, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা মোড়লগিরির দিন শেষ হয়ে গেছে। সর্বোপরি তিনি গত জুনের শেষপ্রান্তে চীনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস’র শীর্ষ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। চীন, রাশিয়া, ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ব্রিকস গঠিত। ইরান ও আর্জেন্টিনাও এর সদস্য হওয়ার আবেদন করেছে, যা অচিরেই মঞ্জুর হবে বলে অনুমেয়। রাশিয়ার মুখপাত্র পেসকোভ জানিয়েছেন, আগামী ১৯ জুলাই পুতিন ইরানে যাবেন এবং সেখানে ইরান, তুরস্ক ও রাশিয়ার শীর্ষ বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন। পুতিন ও এরদোগান আলাদা একটি বৈঠক করবেন। বালিতে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ এর শীর্ষ সম্মেলনেও পুতিনের অংশগ্রহণে ইউরোপের কোন আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে তারা। অন্যদিকে,গত ৭-৮ জুলাই বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যোগদান করেন। অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে পরাজিত ও একঘরে করার এবং পুতিনকে ক্ষমতাচ্যুত করার মার্কিন বলয়ের চেষ্টা সফল হয়নি। সর্বোপরি ইউক্রেনে আক্রমণ করতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিন্দা ও প্রতিবাদ হওয়ার কথা থাকলেও হয়নি। আমেরিকাবলয় ইউক্রেনের পক্ষ নেওয়ার কারণেই এটা হয়েছে। কারণ, এরাও একদা ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও লিবিয়ায় ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে দেশগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। অসংখ্য নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। ২০১০-১১ সালে আফগানিস্তানের নিরস্ত্র ও গ্রেফতারকৃত ৫৪ জনকে হত্যা করেছেন ব্রিটিশ ¯েপশাল ফোর্সের সদস্যর। তাই বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ তাদেরকে যুদ্ধবাজ বলে মনে করে। জাতিসংঘের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেছেন, ন্যাটোর পূর্বাঞ্চলে সম্প্রসারণ ও ইউক্রেনকে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টার কারণেই রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত তৈরি হয়েছে। অপরদিকে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে বিশ্বের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কারণ, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং রাশিয়া-আমেরিকা বলয়ের অর্থনৈতিক যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেনের খাদ্য ও জ্বালানি বন্ধ এবং বিশ্ব বাণিজ্য সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানিসহ সব পণ্যের মূল্য বেড়েছে। অনেক দেশে খাদ্য সংকটে পড়েছে। বিশ্বে নতুন করে ৭ কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে, যা আগামীতে আরো বেড়ে পরিস্থিতি ভয়ংকর হতে পারে। পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির বাজারে বিপর্যয় নেমে আসবে। ফলে করোনা সৃষ্ট মহামন্দা আরো তীব্রতর হবে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, যা থেকে পশ্চিমারাও রক্ষা পায়নি। সেখানে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮.৬% হয়েছে। উপরন্তু ইউরোপের দেশগুলোতে জ্বালানি সংকট আতংক সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, তারা রাশিয়ার জ্বালানির উপর নির্ভরশীল, যা যে কোন সময়ে রাশিয়া বন্ধ করতে পারে। এ পর্যন্ত ১২টি দেশে তা করেছে।বাকী দেশেও তা করতে পারে বলে ইসির চেয়ারম্যান বলেছেন। ইতোমধ্যেই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাশিয়া নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ স্থগিত করেছে গত ১১ জুলাই থেকে। ফলে মহাসংকটে পড়েছে তারা। এছাড়া, ইউরোর রেকর্ড পতন হয়ে মার্কিন ডলারের সমান হয়েছে! তাই ইউরোপে ব্যাপক মন্দা দেখা দেবে বলে জানিয়েছে নোমুরার। সংস্থাটির মতে, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই ইউরোপের অর্থনীতিতে সংকোচন দেখা দেবে এবং ২০২৩ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত মন্দা অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে অঞ্চলটির মোট জিডিপি ১.৭% সংকুচিত হবে। আমেরিকার অবস্থাও তথৈবচ। আইএমএফ বলেছে, মন্দা এড়ানোর পথ মার্কিন অর্থনীতির জন্য ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে এবং দেশটির অর্থনীতি চলতি বছর ও পরের বছর গুরুতর নি¤œমুখী ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। এদিকে, গত ফেব্রুয়ারির পর্যন্ত আমেরিকার জাতীয় ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ ট্রিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, আমেরিকার হুশিয়ারি অমান্য করে মূল্য ছাড়ে রাশিয়ার বিপুল জ্বালানি নিচ্ছে চীন ও ভারত। ফলে দেশ দুটি ব্যাপক লাভবান হচ্ছে।
তবুও মার্কিনবলয় চীন ও রাশিয়া বিরোধী তৎপরতা বন্ধ করেনি। বরং ব্যাপক বৃদ্ধি করছে। মাদ্রিদে গত ২৬-২৮ জুন অনুষ্ঠিত জি-৭ এর শীর্ষ সম্মেলন শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে চীনের কর্মকা- অস্বচ্ছ এবং তা বাজারকে বিকৃত করে। তাই তাঁরা চীনের ওপর কৌশলগত নির্ভরতা কমিয়ে আনবে। উপরন্তু চীনের বিআরআই-এর বিপরীতে নতুন প্রকল্প দাঁড় করাতে ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের তহবিল গড়ার ঘোষণা দিয়েছে।তন্মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ হাজার কোটি ও ইইউ ৩০ হাজার কোটি ডলারের যোগান দেবে বলে জানিয়েছে। এ বিপুল অর্থ বিশ্বের মধ্য ও নি¤œ আয়ের দেশগুলোয় বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা হবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে তাঁরা কোনোভাবেই রাশিয়াকে জয়ী হতে দেবেন না বলে নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। সর্বোপরি ৩০টি দেশ নিয়ে গঠিত ন্যাটোর মহাসচিব বলেছেন, এ জোটের দ্রুত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত সৈন্যের সংখ্যা ৪০ হাজার থেকে প্রায় দশগুণ বাড়িয়ে তিন লক্ষাধিকে উন্নীত করছে। কারণ, ন্যাটোর নিরাপত্তার প্রতি সবচেয়ে বড় ও প্রত্যক্ষ হুমকি হচ্ছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্টও বলেছেন, ইউরোপের স্থল, আকাশ এবং সমুদ্র জুড়ে আমেরিকান সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হবে। রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউরোপের শান্তি ধ্বংস করে দিয়েছেন বলেই আমেরিকার এই সিদ্ধান্ত। এছাড়া, রাশিয়া আপত্তি উপেক্ষা করে ইইউ’র সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে সদস্য করা হচ্ছে। ইউক্রেনকেও সদস্য করার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোপূর্বে চীনকে মোকাবেলা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানকে নিয়ে কোয়াড এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে অকাস গঠিত হয়েছে। উপরন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক করার ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা প্রধানরা যৌথভাবে গত ৬ জুলাই বলেছেন, আমাদের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সবচেয়ে বড় হুমকি চীন।সর্বোপরি ইরানকে মোকাবেলা করার জন্য ইসরাইলসহ কয়েকটি মুসলিম দেশ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ন্যাটো গঠনের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ আমেরিকা ও তার মিত্ররা চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে চতুর্মুখী তৎপরতা চালাচ্ছে।
অপরদিকে, চীন ও রাশিয়া স্বীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য আমেরিকাবলয়ের সব অপকর্ম মোকাবেলা করার ঘোষণা করেছে। গত ৪ঠা জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসে দেশটির প্রেসিডেন্ট ও জনগণকে অভিনন্দন জানায়নি রাশিয়া। ক্রেমলিন বলেছে, অভিনন্দন না জানানোর কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের অবন্ধু সুলভ নীতি। চীনও বলেছে, আমাদের দিকে বাঁকা চোখে তাকালে সে চোখ উপড়ে ফেলা হবে। উপরন্তু রাশিয়া ইইউ ও ন্যাটোর সম্প্রসারণের কঠোর সমালোচনা করেছে। চীনও বলেছে, ন্যাটোকে ইচ্ছেমতও সংঘাত তৈরি এবং ইউরোপে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার অপচেষ্টা বাদ দিতে হবে। সর্বোপরি চীন ও রাশিয়া জাপান সাগর ও পূর্ব চীন সাগর সহ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত মহড়া এবং যৌথ টহল দিয়ে তাদের সামরিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে চুক্তি করেছে গত ২৮ নভেম্বর, যা সামরিক চুক্তি বলে খ্যাত হয়েছে।চীনের এক মুখপাত্র গত ১৬ ডিসেম্বর বলেছেন, বিআরআই এর আওতায় চীন এখন পর্যন্ত ১৪৫টি দেশ ও ৩২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করেছে। এই দেশগুলো থেকে চীনকে সরিয়ে মার্কিন বলয়ের অবকাঠোমো উন্নয়নের সহায়তা করা কঠিন।বড় জোর দেশগুলো দু›পক্ষ থেকেই সহায়তা নিতে পারে। এর অধিক কিছু নয়। আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে চীনের বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও স¤পর্ক খুব গভীর চীনের। সেখান থেকে চীনকে আউট করে মার্কন বলয়ের ইন করা কঠিন। তদ্রƒপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দশটি রাষ্ট্রের আসিয়ানেও। আর ইরান, সিরিয়া ও উত্তর কোরিয়া থেকে চীন-রাশিয়াকে আউট করা অসম্ভব। এছাড়া, চীনেও বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েই চলেছে, যা বন্ধ করা সম্ভব নয়। সর্বোপরি আন্তর্জাতিক সব মহলেরই অভিমত, সামরিক ও আর্থিকভাবে বর্তমানে বিশ্বে দ্বিতীয় চীন, আমেরিকা প্রথম। কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে চীন প্রথম হবে। রাশিয়ার শক্তি কি তা ইউক্রেন যুদ্ধে প্রমাণিত হচ্ছে। তবুও মার্কিনবলয় চীন ও রাশিয়া বিরোধী অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ফলে যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। আর সেটা হলে শেষাবধি তা বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হবে। এছাড়া, এই দুবলয়ের প্রতিদ্বন্ধীতার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে মহাবিশ্বে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। তাতে বিশ্বের শান্তি ও উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু মার্কিনবলয়ের কারণে বিশ্বযুদ্ধ বেধে গেলে তাতে কে জয়ী হবে তা বলা কঠিন। কারণ, মার্কিনবলয় যেমন সামরিক ও আর্থিক শক্তিতে বলিয়ান, তেমনি চীন-রাশিয়াবলয়ও সম শক্তিমান। উপরন্তু সকলেরই কাছে রয়েছে বিপুল সংখ্যক পরমাণু বোমা এবং তা বহনে সক্ষম সর্বাধিক গতির হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধ বিমান। তাই ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধ বাধলে সেটা হবে পরমাণু যুদ্ধ এবং তাতে সমগ্র বিশ্ব ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। আর প্রাতিষ্ঠানিক যুদ্ধ না হয়েও অর্থনৈতিক যুদ্ধ বাধলেও বিশ্বের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তাতে সর্বাধিক ক্ষতি হবে মার্কিন বলয়ের। কারণ, ব্রিকস দেশগুলো যদি জি-৭ এর দেশগুলোর সাথে আর্থিক কর্মকা- বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাদের আর্থিক চাকা বন্ধ হয়ে যাবে।
মার্কিন ডলারের রাজত্বও খতম হবে।কারণ,জি-৭ এর দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬০ কোটি। আর ব্রিকস দেশগুলোর জনসংখ্যা বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এবং উন্নয়নশীল দেশ। এছাড়াও বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশের চীন-রাশিয়ার সাথে সখ্য রয়েছে। তারা এক কেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার বিরোধী।তারা বহুত্ব কেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার পক্ষে। তারা জাতি সংঘকে বিশ্বের সব কর্মের প্রাণকেন্দ্র করতে আগ্রহী। তারা জাতি সংঘের কাঠামোকে সংস্কার করে স্থায়ী পরিষদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি এবং তা অঞ্চল ও জাতিভিত্তিক সমতা আনার এবং ভেটো পাওয়ার বাতিল করার পক্ষে। তাই একক পরাশক্তিত্ব ও স্বীয় বলয়ের শ্রেষ্টত্ব টিকিয়ে রাখার আশা এবং সংঘাতের পথ ত্যাগ করে সব সংকট আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করা, বিশ্বের শান্তি ও উন্নতির জন্য সকলের সম্মিলিতভাবে কাজ করা এবং বিশ্বের কর্তৃত্ব জাতিসংঘের উপর ন্যস্ত করে সব দেশের উচিৎ নিজস্ব দেশের সুখ-শান্তি ও উন্নতি প্রতিষ্ঠার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া। বালিতে ৭-৮ জুলাই জি-২০ এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা এই একমত হয়েছেন যে, বহুপক্ষবাদ হলো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শ্রেষ্ঠ উপায়। তাই বিশ্বকে জরুরিভাবে বহুপাক্ষিকতা শক্তিশালী করতে হবে। জাতিসংঘের মহাসচিবও একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন সন্মেলনে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষেরও আকাক্সক্ষা তাই। মার্কিন কর্তৃপক্ষের উচিৎ-চীন, রাশিয়া ও ইরানকে কাবু করার চেয়ে অভ্যন্তরীণ সংকটগুলো সুরাহা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নতুবা আম-ছালা সবই যাবে। লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।