প্রকৃতিতে অনাবৃষ্টি আর তীব্র খড়া শেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর শ্রাবণের আকাশে ঘটে মেঘের ঘনঘটনা। গত কয়েকদিন থেকে বইতে শুরু করেছে শ্রাবণের ধারা। এতে দেশের অন্যতম ধান উৎপাদনকারী নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চাষিদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। আউশ ক্ষেত পরিচর্যা, সার-কীটনাশক প্রয়োগ, আমনের জমি চাষ, বীজতলা থেকে চারা তোলা ও রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। যেন দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের। ধানের রাজ্য বলে খ্যাত বরেন্দ্র অঞ্চলের জেলা নওগাঁয় এবার ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির বীজতলা তৈরি হয়েছে। ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আউশের চাষাবাদ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) একেএম মনজুরে মাওলা। জেলার মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ২৮ হাজার ৬১৫ হেক্টরে আমন চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ করেছেন চাষিরা। উফশী ও হাইব্রিড জাতের ১৩ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আউশের চাষাবাদ হয়েছে। হেক্টরে আউশ উৎপাদন লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৫০ মেট্রিকটন। কৃষি তথ্য সার্ভিস এর তথ্যমতে, শ্রাবন মাসে আউশ ধান পাকে। কিন্তু এবার তীব্র খড়া ও বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় কাটা-মাড়াই শুরু হতে দেরি হবে। আগামী ৩৫-৪০ দিনের মধ্যে এ অঞ্চলে আউশ কাটা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ধান চাষিরা। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার উত্তরগ্রাম গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টি নেই। কৃষকেরা এটা ভাবতেই পারছে না। এ রকম বৈরী আবহাওয়া আগে কখনই দেখেননি। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আউশ খেত পরিচর্যা ও আমনের চারা রোপণে ব্যবস্ত সময় পার করছেন তিনি। একই কথা বলেন আরও ২০-২৫ জন কৃষক। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৪০-৪৫ জন কৃষক জানান, আউশ ও আমন ধানে সেচ দিয়ে চাষ করলে তেমন একটা লাভ হয় না। এ সময় ধান রোপণ করতে প্রকৃতির বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এবার বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় সেচ দিয়ে জমি চাষ করা শুরু করেছিলেন তারা। এখন বৃষ্টি হওয়ায় আর সেচ দিয়ে জমি চাষ করতে হচ্ছে না। এই বৃষ্টি তাদের জন্য আশির্বাদ বয়ে এনেছে। তারা আরও জানান, এতদিন বৃষ্টি না থাকায় ধান রোপণ করতে পারেননি। এখন বৃষ্টি হওয়ায় আমন রোপণে ব্যস্ত। বৃষ্টি দেরিতে আসায় আমন ধান রোপেণ অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। ধান উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃতির এমন বিরুপ আচরণে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বলেও জানান চাষিরা। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অরুন চন্দ্র রায় জানান, উপজেলার প্রতিটি মাঠে ধান চাষিদের পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বৃষ্টির অভাবে আমনের চারা রোপণে বিলম্ব হলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। কৃষকদের দ্রুত আমনের চারা রোপণের পরামর্শ দেন এই কৃষি কর্মকর্তা। এছাড়া আউশ উৎপাদনে লক্ষ্য অতিক্রমের প্রত্যাশা করছেন তিনি। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান, সেচযন্ত্রগুলো প্রস্তুত রয়েছে এবং প্রয়োজন মতো তারা সেচকার্য পরিচালনা করছেন।