বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বলেছেন, চলমান শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষিত মানুষ তৈরি হলেও দক্ষ ও নৈতিকতাসম্পন্ন জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না। জাতি যার ভয়াবহ কুফল ভোগ করছে। এর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাব্যবস্থায় ভয়াবহ সঙ্কট চলছে, যা এখন আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। সোমবার রাজধানীর এক মিলনায়তনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখা আয়োজিত ইসলামী শিক্ষা দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে রাসূল সা: যে পরিপূর্ণ দ্বীন মানুষের কাছে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করেছেন তার প্রথম কথাই ছিল ইক্বরা বা পড়। কোনো জাতি তার পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবে না যদি তাদের শিক্ষা না থাকে। কথা ছিল মুসলিম উম্মাহ কোরআন থেকে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে নিজেরা ও অন্যদের আলোকিত করবে। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে বৃটিশদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করেই পাঠ্যক্রম চলছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, এমনকি মাদরাসার মধ্যে আবার কওমি, আলিয়াসহ নানাভাবে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে কোরআনের মূল মেসেজ সবার কাছে সমানভাবে পৌঁছানো যাচ্ছে না।
শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য যেন সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ হয় সেদিকেই এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এগুচ্ছে। আর এ দৃষ্টিভঙ্গিকে চিন্তার মধ্যে রেখেই শহীদ আব্দুল মালেক ১৯৬৯ সালে জাতির সামনে বক্তব্য পেশ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘একটি জাতির শিক্ষাব্যবস্থার আদর্শ অন্য জাতি থেকে ধার করে হতে পারে না। মুসলমানদের আদর্শ ইসলাম। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ মুসলিম হিসেবে গড়ে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। পরিপূর্ণ ইসলাম চর্চাও করা যাচ্ছে না।’
শহীদ আব্দুল মালেক এ বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন এবং শাহাদাতের আগ পর্যন্ত এ মতে অটল ছিলেন। এ চেতনা শহীদ আব্দুল মালেকের নয় বরং রাসূল সা:-এর। আর ছাত্রশিবির এ চেতনাকেই ধারণ করে, যা রাসূল সা:-এর আদর্শের সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার চেতনা। আল্লাহ প্রদত্ত আদর্শের জন্য ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে আব্দুল মালেকের মতো শহীদ হবে কিন্তু পিছু হটবে না।
শিবির সভাপতি বলেন, চলমান শিক্ষানীতিতে নৈতিকতা শিক্ষার যে সামান্য সুযোগ ছিল তাও নানা কৌশলে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। আর অনৈতিকতা, অসভ্যতা শিখানোর নানা উপাদান শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ করা হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে আমাদের একেকজনকে আব্দুল মালেক হতে হবে। কেননা শিক্ষাব্যবস্থায় ভয়াবহ সঙ্কট চলছে এখন। তাছাড়া এ শিক্ষাব্যবস্থায় শুধু শিক্ষিত তৈরি হচ্ছে কিন্তু দক্ষ জনশক্তি হিসেবে তাদের গড়ে ওঠানো যাচ্ছে না।
ছাত্রশিবির মনে করে, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরিতে জাতিকে মেধাসম্পন্ন করার কোনো বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, আজকে দেশে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির পেছনে যারা রয়েছে তারাও শিক্ষিত কিন্তু নৈতিকতা বিবর্জিত। অন্যদিকে দেশের শিক্ষিত সমাজও প্রতিবাদী হচ্ছে না। কারণ শুরুতেই তাদের নীতিহীন ও নিস্তেজ করে দেয়া হয়েছে। একজন মুসলিমের চরিত্র এমন হতে পারে না। ছাত্রশিবির চেষ্টা করছে সেই নৈতিকতাসম্পন্ন নাগরিক তৈরি করতে যারা নীতিহীনতার দেয়াল ভেঙ্গে দিবে। ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রসমাজকে সেদিকেই আহ্বান করছে। শহীদ আব্দুল মালেক মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন ছিলেন যিনি বেঁচে থাকলে হয়ত একটি সমৃদ্ধ জীবন গঠন করতে পারতেন। কিন্তু এরপরও তিনি জীবন দিয়েছেন বাতিলের কাছে মাথা নত না করে সত্যের বাণী উচুঁ করে তুলে ধরার জন্য। এ সময় তিনি আব্দুল মালেকের শাহাদাত কবুলিয়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি