আল্লাহর ওপর ঈমানের দৃষ্টান্ত হতে পারে চাঁদে পাঠানো একটি রকেটের মতো। রকেটের প্রতিটি কোণ এবং হিসাবকে নিখুঁত হতে হয়। পৃথিবী থেকে প্রেরণকৃত একটি রকেটের কোণে যদি মিলিমিটার পরিমাণ কোনো খুঁত থাকে তাহলে এর কোণ আস্তে আস্তে বড় হয়ে চাঁদে তো নয়ই বরং হয়তো অন্য গ্রহে ধাক্কা লেগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। একইভাবে মানুষের ঈমান-আকিদায় যদি বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ থাকে তাহলে মানুষকে আস্তে আস্তে তা ইসলাম থেকে দূরে নিয়ে যেতে যেতে জান্নাতে নয় বরং জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে।
মানুষ যখন বিপদে পড়ে, যখন সে নিজেকে বিপন্ন দেখতে পায় তখন তার অসহায়ত্ব বুঝতে পারে। বিপদ-মুসিবতে বিশ্বাসের পরীক্ষা হয়। মানব মনের কথা আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে বিবৃত্ত করেছেন চমৎকারভাবেÑ ‘তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের জলে ও স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা নৌকায় আরোহণ করে অনুকূল হাওয়ার তালে আমোদ-আহ্লাদে ভ্রমণ করতে থাকো, তখন ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে আর চার দিক থেকে তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা মনে করে, তারা তরঙ্গমালায় পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে। তখন তারা বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহকে ডেকে বলে, তুমি যদি এ থেকে আমাদের পরিত্রাণ দাও তাহলে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত : ২২)
এ জন্য মানব মনে এই বিশ্বাসই পাকাপোক্ত হবে যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোনো পৃষ্ঠপোষক, কার্য সম্পাদনকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী, ফরিয়াদ শ্রবণ ও গ্রহণকারী এবং সাহায্যদাতা ও রক্ষাকর্তা নেই। কেননা তিনি ছাড়া আর কারো কাছে কোনো ক্ষমতা নেই। তিনি ছাড়া আর কাউকে কল্যাণকারী মনে করবে না, কারো সম্পর্কে অন্তরে ভীতি অনুভব করবে না, কারো ওপর নির্ভর করবে না, কারো প্রতি কোনো আশা পোষণ করবে না। আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া কারো ওপর কোনো বিপদ-মুসিবত আপতিত হতে পারে না। সব ধরনের ক্ষমতা ও ইখতিয়ার একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই। মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে দোয়া বা প্রার্থনা করবে না, কারো কাছে আশ্রয় খুঁজবে না, কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকবে না এবং আল্লাহর ব্যবস্থাপনায় কাউকেও এতখানি প্রভাবশালী বা শক্তিমান মনে করবে না যে, তাঁর সুপারিশে আল্লাহ তায়ালা ফায়সালা পরিবর্তন করতে বাধ্য হবেন। কেননা তাঁর রাজ্যে সবাই ক্ষমতাহীন প্রজা মাত্র।
আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারো সামনে মানুষ মাথা নত করবে না এবং কারো উদ্দেশ্যে মানত মানবে না। কেননা এক আল্লাহ ছাড়া ইবাদত (দাসত্ব, আনুগত্য ও উপাসনা) পাওয়ার অধিকারী আর কেউই নেই। আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে রাজাধিরাজ ও সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মেনে নেবে না, কাউকে নিজস্বভাবে আদেশ ও নিষেধ করার অধিকারী মনে করবে না, কেননা স্বীয় রাজ্যের নিরঙ্কুশ মালিকানা ও সৃষ্টিলোকের সার্বভৌমত্বের অধিকার আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নেই।
আল্লাহর জন্য মানুষ স্বীয় স্বাধীন ইচ্ছা ও আজাদী কোরবানি করবে, নফসের ইচ্ছাবাসনার দাসত্ব পরিত্যাগ করবে এবং যে আল্লাহ তায়ালাকে ইলাহ মেনে নিয়েছে একনিষ্ঠভাবে একমাত্র তাঁরই বান্দাহ ও অনুগত হয়ে জীবনযাপন করবে।
নিজেকে কোনো কিছুরই স্বাধীন ইচ্ছাসম্পন্ন মালিক মনে করবে না বরং স্বীয় জীবন, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মানসিক ও দৈহিক শক্তি তথা সবকিছুকে আল্লাহ তায়ালার মালিকানাধীন ও তাঁর কাছ থেকে প্রাপ্ত আমানত মনে করবে। নিজেকে আল্লাহর কাছে দায়ী ও জবাবদিহি করতে বাধ্য মনে করবে, শক্তি-সামর্থ্যরে ব্যবহার এবং স্বীয় আচরণ ও ক্ষমতা প্রয়োগে সব সময় সত্যের প্রতি লক্ষ্য রাখবে যে, পরকালে আল্লাহর সামনে এসব বিষয়ের হিসাব অবশ্যই দিতে হবে। আল্লাহর যা পছন্দ তাকেই নিজের পছন্দ এবং যা তাঁর অপছন্দ তাকেই নিজের অপছন্দরূপে গ্রহণ করবে। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও তাঁর নৈকট্য লাভকেই নিজের যাবতীয় চেষ্টা সাধনার চূড়ান্ত লক্ষ্য এবং নিজের সমগ্র তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গ্রহণ করবে। স্বীয় নৈতিক চরিত্র, আচার-ব্যবহার এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাÐ, এক কথায় জীবনের সর্ববিষয়ে কেবল আল্লাহর বিধানকেই একমাত্র হিদায়াত হিসেবে মেনে নেবে এবং আল্লাহর দেয়া শরিয়তের বিপরীত যাবতীয় নিয়মনীতি ও পন্থা-পদ্ধতিকে আমরা প্রত্যাখ্যান করব। বর্তমান অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন আমাদের আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে হবে। মুসলমানদের এই পরিস্থিতিতে দৃঢ় থাকতে হবে। তাহলে শুধু অবিশ্বাসীরা মহান মাবুদের ওপর ঈমান আনবে। তখনই সে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। আমার বিশ্বাস এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পর গোটা পৃথিবীর মানুষ আবার ইসলামের দিকে ফিরে আসবে। নতুন এক জাগরণ সৃষ্টি হবে বিশ্বময়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের এটাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেনÑ ‘ভয় পেওনা দুঃখিত হয়ো না, তোমরাই জয়ী হবে। যদি তোমরা আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারো।’ (আলে-ইমরান ১৩৯) আল কুরআনে আরো বলা হয়েছেÑ ‘তিনিই যথাযথভাবে আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, হাশর হয়ে যাও, সে দিনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথা যথার্থ অকাট্য সত্য। (আনয়াম-৭০) ‘তিনি আসমান ও জমিনের মাঝখানের প্রতিটি জিনিসের রব, যদি তোমরা সত্যিই দৃঢ় বিশ্বাস পোষণকারী হও। (দোখান-৭)
আমরা অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। সম্ভবত এটা এ শতাব্দীর সবচেয়ে কঠিন সময়। আমাদের বাস্তবতা উপলব্ধি করে প্রস্তুত হতে হবে। শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাতে হবে আল্লাহ যেন এ অবস্থার সমাধান করে দেন। কারণ এই পরিস্থিতি ভয়ানক খারাপ হতে পারে গোটা বিশ্বের জন্য। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। ই-মেইল: mrkarim_80@yahoo.com