শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪১ পূর্বাহ্ন

মসজিদে এসি বিস্ফোরণ : নিহত ১৮

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

মসজিদ কমিটির অভিযোগ ৫০ হাজার টাকার জন্য লিকেজ মেরামত করেনি তিতাস

নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃত্যের সংখ্যা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৮ জন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরো আশংকা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। ঘটনার প্রাথমিক কারণ গ্যাস লিকেজ বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে। এদিকে মসজিদ কমিটির অভিযোগ, ৯ মাস আগেই গ্যাসলাইনের লিকেজ মেরামতের জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হলেও ৫০ হাজার টাকার জন্য কাজ করেনি তিতাস। নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন- মো. নয়ন (২৭) ও কাঞ্চন হাওলাদার (৫৩)। এ নিয়ে মোট ১৬ জনের মৃত্যু হলো। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। হাসপাতলে এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ২১ জন। শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১২টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
অন্য মৃতরা হলেন- রিফাত (১৮), মোস্তফা কামাল (৩৪), জুবায়ের (১৮), সাব্বির (২১), কুদ্দুস ব্যাপরী (৭২), হুমায়ুন কবির (৭০), ইব্রাহিম (৪৩), মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৮), জুনায়েদ (১৭), জামাল (৪০), জুয়েল (৭), জয়নাল আবেদিন (৪০), মাইনুদ্দিন (১২) ও রাসেল (৩৪)। মৃতের তালিকায় রয়েছেন মসজিদের মুয়াজ্জিনও। এ ঘটনায় শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম মৃত্যু হয় জুয়েল নামের এক শিশুর। এরপর রাতে ও সকালে অন্যদের মৃত্যু হয়। উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়াহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তারা। তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছিলেন, এ পর্যন্ত ৩৭ মুসল্লিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবারই ডিপ বার্ন রয়েছে। তবে শতাংশের হিসেবে কোন রোগীর কতটুকু বার্ন হয়েছে তা তাৎক্ষণিক বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে বলা যায়, কেউ শঙ্কামুক্ত নন। এদিকে প্রাথমিকভাবে এসি নয় গ্যাসলাইন থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ কথা জানান তিনি। এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ফায়ার সার্ভিস একটি, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ একটি ও জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
অভিযোগ ৫০ হাজার টাকা না দেয়ায় লিকেজ মেরামত করেনি তিতাস: গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকেই গ্যাস জমে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তিতাস কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ভয়াবহ এ বিস্ফোরণ হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
মসজিদ কমিটির অভিযোগ, ৯ মাস আগেই গ্যাসলাইনের লিকেজ মেরামতের জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ জানানো হলেও ৫০ হাজার টাকার জন্য কাজ করেনি তিতাস।
মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল গফুর মেম্বার বলেন, ‘গ্যাসলাইন লিকেজ হওয়ার বিষয়টি টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তা মেরামত করার জন্য তিতাসকে জানিয়েছিলাম। তখন তারা আমাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। আমরা টাকাটা জোগাড় করতে পারিনি বলে আর মেরামত করা হয়নি।’ এদিকে মসজিদে বিস্ফোরণের পর শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী মোহাম্মদ আল মামুন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে, কেউ দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিতাসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় যদি কেউ দায়ী থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গ্যাসলাইনের লিকেজ ধরেই তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব নূর হাসান। তিনি বলেন, আমরা আলামত সংগ্রহ করছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। গ্যাস লিকেজ এবং বিদ্যুৎতের বিষয় মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে এশার নামাজ চলাকালে ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে একসঙ্গে ছয়টি এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৪০ জনেরও বেশি মুসল্লি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে দগ্ধ অবস্থায় ৩৭ জনকে উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত ওই মসজিদের মুয়াজ্জিনসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com