নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ ১৬ জন মারা গেছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীনদের সবার অবস্থাই আশঙ্কাজনক, ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
গত ২০ জুলাই রাজধানীর শনির আখড়ার গোয়ালবাড়ি মোড়ে ‘বার্গার’ নামে একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হন দুই কর্মচারী। তাদের দুজনের মধ্যে একজনের ৩০ এবং আরেকজনের ৭০ শতাংশ বার্ন হয় এবং শ্বাসনালি পুড়ে যায়। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল নয়া পল্টনে ‘স্টাইল জোন’ নামে একটি সেলুনে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হন তিন জন। তাদেরকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ শংকর পাল জানান, তাদের একজনের ৭০ শতাংশ, বাকি দুই জনের ৪৯ ও ৩৭ শতাংশ পুড়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, পাঁচ থেকে সাত বছর আগেও এসি বিস্ফোরণ হয়ে এত দগ্ধ হবার ঘটনা ঘটতো না। মূলত ২০১৫-১৬ থেকেই এসিতে বিস্ফোরণ হয়ে রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তবে বিস্ময়কর একটা বিষয় হলো, এসিতে বিস্ফোরণ হয়ে আসা বেশিরভাগ রোগীর অবস্থা অধিকাংশ সময়ই আশঙ্কাজনক হয়। এর কারণ বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ থাকা। এতে করে শ্বাসনালি পুড়ে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, যে কোনও অগ্নিকা-ে কত শতাংশ পুড়েছে, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শ্বাসনালি পুড়েছে কিনা। শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া মানুষটিরও যদি শ্বাসনালি পুড়ে যায় তিনি অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। শ্বাসনালি পুড়ে না যাওয়া ৫০ শতাংশ রোগীর চেয়েও তার অবস্থা বেশি ভালনারেবল হতে পারে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত পাঁচ-ছয় বছরে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ১০০ থেকে ১৫০ জনের কাছাকাছি। তার ভেতরে মারা গেছেন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জনের মতো।’ ডা. সেন বলেন, ‘সেই কবে থেকে পুড়ে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। কিন্তু এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়া রোগী বেশি পাচ্ছি গত পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে। এসিতে দগ্ধ হয়ে যারা হাসপাতালে আসেন তাদের বেশিরভাগেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকে। এর কারণ এসি যখন চলে তখন সেটা ঘর বা অফিস বা দোকান যাই হোক, সেটার দরজা-জানালা আবদ্ধ থাকে। বদ্ধ ঘরে যখন এসি ব্লাস্ট হয় তখন মানুষ বের হতে পারে না। আর খুব কাছাকাছি অবস্থান থাকে বলে এর ভয়াবহতা বেশি হয়। ইনজুরিটা খুব মারাত্মক হয়।’
তিনি বলেন, ‘তবে এখানে কেবল মারা যাওয়াদের কথা বললেই হবে না। যারা বেঁচে যান তাদের অবস্থাও বলতে হবে। খুব অমানবিক এবং কষ্টকর একটা জীবন হয়ে যায় তাদের। তাদের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে খুব কষ্ট করতে হয়, অনেকেই ফিরতে পারেন না।’
তিনি মনে করেন, এখনও মানুষের মধ্যে এসি বিস্ফোরণ নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়নি। যেসব দোকানে এসি রয়েছে সেসব দোকানকে ক্লোজ মনিটরিং এর ভেতরে আনতে হবে, নজরদারি বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বাসা-বাড়িসহ যেসব জায়গায় এসি রয়েছে সেখানেও নির্দিষ্ট সময় পর এসির দিকে নজর দিতে হবে, মনিটরিং করতে হবে। বছরে দুইবার এসি মেরামত করতে হবে জানিয়ে মগবাজার ওয়ারল্যাসে অবস্থিত সানফ্লাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস দোকানের স্বত্বাধিকারী শরীফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসির ভেতরে গ্যাসের সমস্যা, শট সার্কিট, এসি চলা থাকা অবস্থায় ঘরের ভেতরে যে কোনও ধরনের আগুন জ্বালালে এসি বিস্ফোরণ হবে। আবার অনেক সময় কমপ্রেশারের ভেতরে জ্যাম ধরে, সেসময় গ্যাস লিক হয়ে গেলে এসি বিস্ফোরণ হবে।’
এসি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে জানিয়ে শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মিত এসি সার্ভিসিং করতে হবে। বছরে নিদেনপক্ষে দুইবার সার্ভিসিং করা উচিত। কোনও সমস্যা থাকলে তখন সে সময় ধরা পড়বে। এসির ইনডোর-আউটডোর সব খোলা হলো, পরিষ্কার হলো। আমাদের দেশে এসি নষ্ট না হলে কেউ খবর দেয় না। যখনই এসিতে সমস্যা হয় তখনই কেবল আমাদের খবর দেওয়া হয় মেরামতের জন্য। এছাড়া যে ভালো-মন্দ দেখতে হয়, সেটা কেউ করে না।’ এসি একনাগাড়ে আট ঘণ্টার বেশি চালানো উচিত না জানিয়ে তিনি বলেন, আবার যখন এসি ইন্সটল করা হয় তাতে ত্রুটি থাকলেও কিন্তু বিস্ফোরণ হতে পারে।