লালমনিরহাটের প্রায় পানি শূন্য তিস্তার চরাঞ্চলের চারিদিকে এখন সবুজের সমারোহ। জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারি ও সদর উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর চরে বেলে দোআঁশ মাটিতে চাষিরা স্বল্প খরচে ফলিয়েছেন সোনার ফসল। বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ ও এসবের বাজারে চাহিদা ভালো থাকায় লাভবান হবে এমন স্বপ্ন বুনছেন চরাঞ্চলে চাষাবাদ করা কয়েক হাজার কৃষক। লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় তিস্তায় জেগে ওঠা চরের জমির পরিমাণ ১৯ হাজার ৬৩ হেক্টর। এরমধ্যে আবাদি জমির পরিমাণ ১৬ হাজার ৯৪৮ হেক্টর। তবে এ বছর এর মধ্যে ৫ হাজার ৬৬৫ হেক্টর চরের জমিতে নানা জাতের সবজি চাষ হয়েছে। চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, আদিতমারী উপজেলার নদী তীরবর্তী মহিষখোচা ইউনিয়নের বালাপাড়া, কুটিরপাড়, কালমাটি, আনন্দবাজার, কালিগঞ্জের রুদ্রেশ্বর, কাকিনা, মহিষামুরি, ইশোরকুল এসব চরে এবার প্রচুর পরিমানে আলু চাষ হয়েছে। এছাড়াও বেগুন, টমেটো, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শিম, করলা, পুঁইশাক ও লালশাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। চাষ হচ্ছে পিয়াজ ও রসুনও। কৃষকরা বলছেন, ইতোমধ্যে বাজারে কিছু পিয়াজ উঠলেও খুব শীঘ্রই পুরোদমে নতুন পিয়াজ এবং রসুন উঠবে। চর গুলোতে এসব আবাদের পাশাপাশি চাষের প্রস্তুতি চলছে গম, ছোলা, ভুট্টা, মসুর, সরিষা ও বাদাম চাষেরও। কৃষকরা জানান, বেলে দোআঁশ মাটিতে বেশি সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। পোকামাকড়েরও আক্রমণ কম। তাই খুব একটা কীটনাশকের ব্যয় কম।
শুধু পানি পেলেই চরে সব ফসলের আবাদ ভালো হয়। চাষি রমজান আলী বলেন, নদী বড় থাকলে নৌকায় তাদের যোগাযোগ সহজ হয়। কিন্তু ওই সময় পানি ঢুকার কারণে তাদের চাষের জমি কমে যায়। আবার পানি নেমে গেলে যে পলি পড়ে তাতে সবজির চাষ ভালো হয়। কিন্তু বিশাল চর আর নদী পাড়ি দিয়ে সবজি নিয়ে যেতে হয় ফলে দাম বেশি পেলেও ব্যয়ও বৃদ্ধা পায় সবজি বহনে। চাষি ওমর আলী বলেন, নদীর ওপারে যদি টমেটোর কেজি ১০০ টাকা হয়, তাহলে এপারে ৫০ টাকা। এটাই নদীর চরের এপার-ওপার জমিতে উৎপাদিত ফসলের দামের এমন পার্থক্য। তবে গ্রীষ্মকালে পানি কমে নদী ছোট হয়ে আসে। তখন সবজি গরু-মহিষের গাড়ি অথবা ট্রলিতে করে নিয়ে চর পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু চরের মাঝে যদি আবার ছোট নদী থাকে তাহলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। এসব ভোগান্তির কারণেই আমরা ভালো সবজি উৎপাদন করলেও ভালো দাম পাই না। তবে এ বছর সকল সংকট কাটিয়েও ভালো ফলন ও দাম পাবো আশা করছি। চাষিরা জানান, তিস্তা নদীর পাড় থেকে চরের গ্রাম পর্যন্ত পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হলে চাষিদের কষ্ট অনেকটাই কমে যাবে। এতে কৃষকরা সহজে নদীপাড় পর্যন্ত তাদের ফসল নির্বিঘেœ নিয়ে যেতে পারবেন।যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা করা গেলে উৎপাদিত এসব সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে চরের এসব কৃষকের সংসারে বন্যার ক্ষতি পুসিয়ে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আসবে। লালমনিহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, চরের মাটিতে যেকোন ফসলের আবাদ অত্যন্ত ভালো হয়ে থাকে। প্রতিবছর বন্যায় জমি তলিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে পলি জমার কারণে চাষাবাদ ভালো হয়। এ বছর দাম কিছুটা ভালো ফলে বন্যার ক্ষতি পুসিয়ে উঠবে কৃষক।