কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নজর মামুদ গ্রামের অসহায় বৃদ্ধা সৌধা বালা(৭৮)। স্বামী অভিরাম দাশ গত হয়েছেন প্রায় ৩২ বছর আগে। পৃথিবীতে আপন বলতে এখন আর কেউ নাই তার। এভাবে সহায়-সম্বলহীন ভাবে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তার। শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০২০) সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই এলাকার সুধীর বিশ্বাস এর বাড়ির একটি টিনের ছাপড়ায় শুয়ে আছেন সৌধা বালা। চেহারার দিকে তাকিয়েই মনে হয় কত রোগের বাসা যেন এই শরীরে। কাদামাটি ভরা শরীর নিয়ে শুয়ে আছেন একটি কাঠের চৌকির উপরে। সেখানে নেই কোন লাইটিং ব্যবস্থা। ছাপড়ার সামনের দিকে পুরনো টিনের বেড়া থাকলেও পেছনে রয়েছে পাটকাঠির তৈরি ভাঙাচোরা একটি বেড়া। সামনে শীতকাল ঘনিয়ে আসছে। কি খেয়ে বেঁচে থাকবেন এই চিন্তায় শীতকাল এলে কিভাবে সময় কাটবে সেটাও ভুলে গেছেন তিনি। কথা বলে জানা যায়, একসময় জমিজমা, ঘরবাড়ি সবকিছুই ছিল তাদের। স্বামী অভিরাম দাশের স্ত্রী ছিল দুইজন। সৌধা বালার কোন ছেলে মেয়ে না হলেও অপর স্ত্রীর তিনজন ছেলে সন্তান ছিল। স্বামী মারা যাবার পর সেই ছেলেরা (মানিক, রবীন ও বীরেন) কৌশলে সব সম্পত্তি নিয়ে বিক্রি করে সৌধা বালা কে সাথে নিয়ে চলে যান ভারতে। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে নানান নির্যাতন চালিয়েছেন। এমনকি সৌধা বালাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনাও করেন সৎ ছেলেরা। পরে এক ছেলের বউয়ের সহযোগিতায় সেই মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে আবার দেশে আসতে সক্ষম হন সৌধা বালা। একদম নিঃস্ব ভাবে দেশে ফিরে আসার পরে ওই এলাকারই মৃত গড়িয়া বিশ্বাসের ছেলে সুধীর বিশ্বাসের বাড়িতে ঠাঁই নেন সৌধা বালা। ঘটনাটি প্রায় ৩০ বছর আগের। সেই থেকে সুধীর বিশ্বাসের বাড়িতেই আছেন তিনি। যখন শরীর সুস্থ ছিল তখন বিভিন্ন জনের বাড়িতে কাজ কাম করে দিন যাপন করত। বয়স বৃদ্ধি পেতে থাকলো কাজ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। তখন বিভিন্ন জনের কাছে হাত পাতা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। এভাবে বিভিন্ন জনের সাহায্য সহযোগিতায় দিনযাপন করছেন বেশ। কিন্তু দুই বছর ধরে বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে তেমন একটা হাঁটাচলা করতে পারছেন না। ঘরে কোনো খাবার না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে পড়ে দিন রাত কাটাতে হচ্ছে বৃদ্ধা সৌধা বালাকে। সৌধা বালার সাথে কথা হলে তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, দুই কুলে আমার আপন বলতে কেউ নাই। জমিজমা, ঘরবাড়ি, ছেলে-মেয়ে নিজের বলতে কিছুই নাই আমার। প্রায় ৩০ বছর ধরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আছি। বয়স বেশি হওয়ার কারণে নানান রোগ হয়েই থাকে। যারা আশ্রয় দিয়েছে তারাও অভাবী মানুষ। তাদের কাছে তো আর কোনো জোর করতে পারি না। খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বলেন, কেউ খাবার দিয়ে গেলে খাই, না দিলে না খেয়েই থাকতে হয়। সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আমার ভালোমন্দ দেখার কেউ নেই। সুধীর বিশ্বাস এর স্ত্রী কল্পনা রানী জানালেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি আমাদের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছেন। যখন হাঁটাচলা করতে পারতেন তখন বিভিন্নজনের বাড়ি থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে এসে খেতেন। এখন তেমন একটা হাঁটাচলাও করতে পারেন না। তিনি আমাদের পরিবারের কেউ না হলেও আমরা নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবেই দেখি। কিন্তু আমরাও তো গরিব মানুষ। আমার স্বামী মাছের ব্যবসা করে কোনরকমে সংসার চালান। আমাদের এই অভাবের সংসারে থেকে যতটুকু সহায়তা করার আমরা করতেছি। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু মুছা বলেন, ওই বৃদ্ধা আসলেই খুব অসহায়। ছেলে মেয়ে না থাকায় উনার অসহায়তার শেষ নেই। প্রায় বছর খানিক আগে উনার থাকার জন্য টিনের ছাপড়াটি করে দিয়েছি। একজন ইউপি সদস্য হিসেবে ও মানবিক দিক থেকে যতটুকু সহায়তা করা যায় আমি সাধ্যমত চেষ্টা করব।