বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শ্রীমঙ্গলে বৃষ্টি হওয়ায় চা-বাগানগুলোতে নতুন প্রাণের সঞ্চার চিকিৎসা বিজ্ঞানে সাফল্য আনবে বরিশালের প্রীতমের আবিষ্কৃত রোবটিক আর্ম ফরিদপুরে বেশিরভাগ কেন্দ্রই ফাঁকা! ঈশ্বরগঞ্জে মাটির নিচ থেকে প্রাচীন রৌপ্য মুদ্রা উদ্ধার জগন্নাথপুরে কৃষকদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ধান কিনতে লটারি ধামরাইয়ে দপ্তরি দিয়ে চলছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শ্রেষ্ঠ মাদরাসা প্রধান মুফতি মাওলানা বশির আহমদ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত আবদুল জলিল এক অসহায় ভ্যানচালকের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আকুতি কোন প্রার্থী প্রশাসনের নয়, প্রার্থীকে নির্বাচিত করবে দেশের জনগণ-জেলা প্রশাসক

বিবর্তনবাদ সব ধর্মের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক

জাকারিয়া শাহীন:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে মাদরাসার দাখিল ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে মানব সৃৃষ্টির উৎস সম্পর্কে ডারউইনের বিবর্তনবাদের আদলে ধারণামূলক ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে। এই ইতিহাস ইসলাম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের হাজার বছর ধরে লালন করা প্রমাণিত বিশ্বাসের ওপর আঘাত করছে। ইতঃপূর্বে ২০১৩ সাল থেকে স্কুলের নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীসহ অনার্স ও মাস্টার্স স্তর পর্যন্ত বিভিন্ন পাঠ্যবইয়ে বিবর্তনবাদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিবর্তনবাদ মানুষ ও বানরের পূর্বপুরুষ একই সাব্যস্ত করে। যা মুসলমানদের ঈমানবিরোধী একটি কুফরি মতবাদ। এই বিবর্তনবাদ বিশ্বাস করলে ঈমান থাকবে না।
বিবর্তনবাদ শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- সৃষ্টিকর্তার ধারণা থেকে মানুষকে বের করে নিয়ে আসা। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সব ধর্মের অস্তিত্বকে বিনাশ করা। বিবর্তনবাদ শুধু মানব সৃষ্টির উৎসকে অস্বীকার করে না; বরং আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্রসহ সব সৃষ্টিরাজিকে মহান আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন- এই বিশ্বাসকেও অস্বীকার করে। কারণ, ডারউইন বা নব্যডারউইনদের বক্তব্য হলো- ‘সব কিছু প্রকৃতি থেকে সৃষ্টি হয়, কেউ তার স্র্রষ্টা নয়।’
‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় ‘মানুষ ও সমাজ এলো কোথা থেকে?’ শিরোনামে মানব জাতির উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে শুধু কঙ্কাল, ফসিল-নির্ভর করে ধারণামূলকভাবে বিবর্তনের তথ্য ও পদ্ধতি আলোচনা করা হয়েছে। এই আলোচনার মূল কথা হচ্ছে, মানুষ ও বানরের পূর্বপুরুষ একই ছিল। (নাউজুবিল্লাহ) পাঠ্যবইয়ের ২৪ নম্বর পৃষ্ঠায় এভাবে উল্লেখ রয়েছে- ‘ধীরে ধীরে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আধুনিক মানব প্রজাতির উদ্ভব ঘটেছে। এই বিবর্তন পৃথিবীর নানা অ লে নানা সময়ে ঘটেছে। আমাদের প্রথমে মনে রাখতে হবে, আধুনিক মানুষ ও বানর… একটি সাধারণ প্রাইমেট জাতীয় প্রজাতি থেকে যাত্রা শুরু করেছে। প্রাইমেট জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তনের মাধ্যমে একদিকে শিম্পাঞ্জি, গরিলা (বানরের প্রকার)… ধীরে ধীরে পরিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। অন্য দিকে, বানর তৈরি হয়েছে। আর একটি ধারায় মানুষ ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে নানান পর্যায়ে।… মানুষ, শিম্পাঞ্জি আর বানরের বিভিন্ন প্রজাতি একই ধরনের প্রাইমেট প্রজাতির প্রাণী থেকে বিকশিত হয়েছে। এই বিকাশে লাখ লাখ বছর সময় লেগেছে। মানুষের এই বিবর্তনের বা রূপান্তর হতে লাখ লাখ বছর লেগেছে। (নাউজুুবিল্লাহ)
পাঠ্যবইয়ে উল্লিখিত এই থিওরিটি পবিত্র কুরআন ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের ইতিহাসের বিপরীত এবং পৃথিবীর প্রায় সব ধর্মাবলম্বী মানুষের বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। এমন মতবাদ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা নিঃসন্দেহে সব ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর চূড়ান্ত পর্যায়ের জুলুম। এর চেয়ে বড় জুলুম হলো, যে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয় আল্লাহর প্রতি ঈমান-আকিদার ভিত মজবুতের জন্য, সেই মাদরাসার পাঠ্যবইয়ে আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস লালনের জন্য অনুমানভিত্তিক থিওরি উল্লেখ করা, নাস্তিক্যবাদের বীজ বপন করা- এটি নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও মুসলমানদের সাথে উপহাস করার নামান্তর।
ইসলাম বিজ্ঞানচর্চা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহারের বিরোধী নয়; বরং মানব কল্যাণে এগুলোর প্রতি উৎসাহিত করে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞান হলো মানুষের গবেষণালব্ধ জ্ঞান। তা কখনো আসমানি জ্ঞান বা হাজার বছরের প্রমাণিত ইতিহাসের বিপরীত সত্য হতে পারে না। মানুষের গবেষণালব্ধ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো সাধারণত দুই ধরনের। একটি প্র্যাকটিক্যাল (প্রমাণিত সত্য) অপরটি থিওরিক্যাল। প্র্যাকটিক্যাল আবিষ্কারগুলো কুরআন মাজিদের সাথে বা প্রাচীন কোনো ইতিহাসের সাথে সাংঘর্ষিক হয় না। যেমন- বিমান, রকেট, জাহাজ ইত্যাদি। আর থিওরিক্যাল গবেষণাগুলো সাধারণত কোনো কিছুর ওপর ভিত্তি করে ধারণামূলক হয়ে থাকে। এটি কখনো সত্য হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে। আমরা অনেকেই বিজ্ঞানের এই থিওরিক্যাল তথ্যকে প্র্যাকটিক্যাল তথ্য বা আবিষ্কারের মতো চূড়ান্ত জ্ঞান মনে করি। যা ভুল চিন্তা ও মানসিকতা। এর উত্তম দৃষ্টান্ত হলো- মিসরের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্লডিয়াস টলেমি বলেছিলেন, ‘সূর্য পৃথিবীর চার পাশে ঘোরে’। অর্থাৎ, পৃথিবী স্থির আর সূর্য তার চার পাশে ঘোরে। আজকের বিজ্ঞান কি তা বিশ্বাস করে? কখনো না। অথচ ২৫০ বছর ধরে পৃথিবীর মানুষ এই মিথ্যা তথ্যকে বিশ্বাস করে আসছিল। যাদের মধ্যে আবার বড় বড় বিজ্ঞানী, গবেষকও ছিল। তারাও এ বিশ্বাসই করত। পরে তার ঠিক বিপরীত থিওরি প্রকাশ করে নিকোলাস কোপার্নিকাস, ‘পৃথিবী সূর্যের চার পাশে ঘোরে’। অর্থাৎ, সূর্য স্থির আর পৃথিবী তার চার পাশে ঘোরে। সূর্য ঘোরে না। তার এই থিওরিও বিজ্ঞান মহলে প্রায় ৫০ বছর বীরদর্পে টিকে ছিল। আজকের বিজ্ঞান কোপার্নিকাসের এই তথ্যকে ভুল প্রমাণিত করে। বর্তমান বিজ্ঞানীরা বলেন, পৃথিবী ও সূর্য উভয় তাদের নিজস্ব কক্ষপথে ঘোরে।
মানব জাতীর ইতিহাস সম্পর্কে বিবর্তনবাদের এসব ধারণামূলক তথ্য চূড়ান্তভাবে বিবর্জিত। কারণ, তাদের এই তথ্য মানব সৃষ্টির প্রকৃত ইতিহাসের বিপরীত- যা মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন। ইতিহাস শাস্ত্রের মূলনীতিমূলক কথা হলো- ইতিহাস কখনো ধারণানির্ভর হতে পারে না। প্রাচীন ও আধুনিক জ্ঞানসম্ভারের একটি মৌলিক উৎস হচ্ছে ইতিহাস। কেউ ইচ্ছে করলেই কোনো লজিক বা যুক্তি দিয়ে এই জ্ঞান উৎসের ওপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। ধারণামূলক বা কল্পিত কোনো জ্ঞান এতে যুক্ত হতে পারে না। এই মহাবিশ্ব ও প্রাণিজগতের ইতিহাস দু’টি অবস্থায় বিভক্ত- এক. মানব সৃষ্টির আগের ইতিহাস। দুই. মানব সৃষ্টির পরের ইতিহাস। উভয় অবস্থার প্রকৃত ও চূড়ান্ত ইতিহাস এই মহাবিশ্ব ও সমস্ত প্রাণীকূলের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহতায়ালা সঠিকভাবে জানেন। হ্যাঁ, মানব সৃষ্টির পরের ইতিহাস প্রত্যক্ষদর্শী কোনো ব্যক্তি বা দল থেকে যুগ শতাব্দীর ক্রমবিকাশে বংশপরম্পরায় আমাদের কাছে পৌঁছতে পারে। কিন্তু মানব সৃষ্টির আগের ইতিহাস চূড়ান্তভাবে আমাদের কাছে মহান সৃষ্টিকর্তার সংবাদ ব্যতীত পৌঁছতে পারে না। (আগামী দিন সমাপ্য)
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com