অতি সম্প্রতি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আচরণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর যে ৪০ জন বিশ্বনেতা খোলা চিঠি লিখেছেন তাদের সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে আপন মহিমায় উজ্জ্বল। ওই ৪০ জনের মধ্যে যেমন দীর্ঘ এক দশক ধরে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বান কি মুন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন বৃটিশ বিলিয়নিয়ার ও ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যার রিচার্ড ব্রানসনের মতো ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের মতো নারী যেমন রয়েছেন, তেমনি হলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শ্যারন স্টোনের মতো নারীও রয়েছেন। বাদ যাননি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে যাওয়া প্রয়াত মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির পুত্র টেড কেনেডি জুনিয়রও।
বিশ্বখ্যাত ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় বিজ্ঞাপন আকারে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রকাশিত খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অধিকারকর্মী এবং লেখক, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডালে-হ্যারিস। ৪০ জনের তালিকায় একেবারে শুরুর দিকে হিলারি ক্লিনটনের (চতুর্থ) ঠিক পরের (পঞ্চম) নামটিই ছিল স্যাম ডালে-হ্যারিস।
চিঠিটি প্রকাশের পর ‘কানাডিয়ান ন্যাশনাল মাল্টিলিংগুয়াল নিউজ গ্রুপ’ এ প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকার থেকে দেখা যায়, তিনি এ বিষয়ে বিভিন্ন সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। চিঠিতে স্বাক্ষর করার কারণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন, যে ৪০ জন বিশ্বনেতা ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন তারা সাধারণ অর্থে বিশ্বের লাখো কোটি মানুষের কাছে পরিচিত, যারা মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মে অনুপ্রাণিত ও উপকৃত এবং তারা তার নিরাপদ জীবন চান। যারা স্বাক্ষর করেছেন, তারা প্রত্যাশী তাদের জনপরিচিতির কারণে বিশ্ব জানুক প্রফেসর ইউনূসের ওয়াকিবহাল। তিনি বলেছেন, “আমাদের এই ক্ষুদ্র গ্রুপটির প্রয়াস [বাংলাদেশ] কর্তৃপক্ষ যাতে বোঝে বিশ্ব সেটা দেখছে। আমরা সরকার প্রধানের বক্তব্য পড়ে আতঙ্কগ্রস্থ হয়েছি যে, [ইউনূসকে] পদ্মানদীতে দু’বার একটু চুবাতে হবে, যাতে মারা না যায় সেজন্য চুবিয়ে ব্রিজে তুলতে হবে, সম্ভবত তাতে তার শিক্ষা হবে।”
খোলা চিঠিটি কেন পত্রিকাতে বিজ্ঞাপন হিসেবে প্রকাশ করা হলো? এমন প্রশ্নের জবাবে স্যাম ডালে-হ্যারিস বলেছেন, “আমরা ওই বক্তব্য কোনো পত্রিকায় ছাপা হলো কি হলো না, সে অপেক্ষায় বসে না থেকে ছাপিয়েছি।” প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই খোলা চিঠি’র খবর প্রকাশ করা ওয়েবসাইট ‘প্রটেক্ট ইউনূস ডট ওয়ার্ড প্রেস ডট কম’ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার সীমাবদ্ধতার কারণেই ওয়াশিংটন পোস্টে খোলা চিঠি ছাপাতে হয়েছে।
ওদিকে, সরকারের বিরুদ্ধে চিঠি লিখতে ড. ইউনূস তাদের প্রভাবিত করেছেন, এমন বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে স্যাম ডালে-হ্যারিস বলেছেন, “না, প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপই আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে, তিনি উস্কে দেননি।”
চিঠিতে প্রফেসর ইউনূসের যে গুণগান করা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্যাম ডালে-হ্যারিস বলেছেন, “১৯৮৭ সাল থেকে শুরু করে ২৫ বছর ধরে প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে আমি একনিষ্ঠভাবে যুক্ত থেকে কাজ করছি। ১৯৯০ সালে চারটি দেশের ২৮ জন স্বেচ্ছাসেবক, যাদের সকলেই আমার প্রতিষ্ঠিত দারিদ্রবিরোধী লবিভুক্ত, তারা বাংলাদেশ সফর করি। আমরা ১৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পাঁচদিন ধরে গ্রামে থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মচারী ও ঋণগ্রহীতাদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করেছি। আমরা সেই চমকিত কর্মকান্ড স্বচক্ষে দেখেছি। আমরা প্রফেসর ইউনূসকে জানি, আমরা তার সততা এবং একই সঙ্গে দেশের উন্নয়নে তার অঙ্গীকার প্রত্যক্ষ করেছি। তাই আমরা তার স্বাধীনতার বিপক্ষে ওই হুমকিসহ চলমান একাধিক ভুয়া তদন্তকে বিবেচনায় নিয়েছি।”
চিঠিটি প্রকাশ করে কী লাভ হবে সে বিষয়ে তিনি বলেছেন, “আমরা আশা করছি তাতে এই দারিদ্রবিমোচনের নিঃস্বার্থ ও অক্লান্ত পরিশ্রমীর প্রতি হয়রানি বন্ধ হবে, অন্তত সরকার ও সরকার প্রভাবকদের তরফ থেকে। এতে তার সময় ও কর্মশক্তি বাংলাদেশ ও বিশ্বের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের কাজে লাগবে।”-মানবজমিন