ভারতের মণিপুরে গত ৩ দিনের জাতিগত সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয়েছে সেনা। এদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বা লের ওই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। জানিয়েছেন, ওই রাজ্যে আটকে পড়া নাগরিকদের উদ্ধার করতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বিজেপি শাসিত মণিপুর সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সহিংস পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বিভিন্ন রাজ্যের নাগরিকদের উদ্ধারে সচেষ্ট হবে জানিয়ে দু’টি ‘হেল্পলাইন নম্বর’ টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি লিখেছেন, আমরা মণিপুর থেকে যে ধরনের বার্তা পাচ্ছি তাতে গভীরভাবে ব্যথিত। আমি মণিপুরের মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত নাগরিকেরাও এখন সেখানে আটকে পড়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার জনগণের পাশে দাঁড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ও মণিপুর সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেখানে আটকে পড়া লোকদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মণিপুরি ছাত্র সংগঠন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব মণিপুর’ (এটিএসইউএম) বুধবার আন্দোলনকারী মেইতেই জনগোষ্ঠীর দাবির বিরোধিতা করে একটি মিছিল বের করে। সেখান থেকেই মণিপুরের ৮টি জেলায় সহিংসতা ছড়ায় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি মণিপুর হাইকোর্ট মেইতেইদের তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পরেই জনজাতি সংগঠনগুলো তার বিরোধিতায় পথে নামে। আর সেখান থেকেই সংঘাতের সূচনা। মূলত সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস পাহাড়ি এলাকায়। তাদের আশঙ্কা, জনজাতির মর্যাদা পেলেই পাহাড়ি এলাকার জমিতে হাত বাড়াবে মেইতেইরা। এখন জনজাতির মর্যাদা না পাওয়ায় তারা ওই জমি কিনতে পারে না।
বেসরকারি মতে নিহতের সংখ্যা শতাধিক: ৩রা মে থেকে ভারতের উত্তরপূর্ব সীমান্ত রাজ্য মণিপুরে যে অশান্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছিল, শনিবার রাতে তা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সেনাবাহিনী এবং আসাম রাইফেলস টহল দিচ্ছে এলাকায়। সংঘর্ষে ৩০ জনের মৃত্যুর খবর শনিবার রাতে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হলেও, বেসরকারি মতে মৃতের সংখ্যা একশ’রও বেশি। তেরো হাজার গৃহচ্যুত মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়া হয়েছে। রোববার সকাল পর্যন্ত কয়েকটি জায়গায় সংঘর্ষ চলছে। সেনা ও আসাম রাইফেলস সেখানে পৌঁছে গেছে। মনিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়ের সঙ্গে নাগা এবং কুকি এই দুই উপজাতির সংঘাত বহুদিনের। মেইতেই সম্প্রদায় সম্প্রতি উপজাতি ভুক্ত হওয়ার জন্যে আন্দোলন চালাচ্ছে। এই আন্দোলনই আক্রান্ত হয় কুকি ও নাগাদের দ্বারা। দাবানল জ্বলে ওঠে যা আজও নির্বাপিত হয়নি।
মণিপুরে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ জারি আছে। বিচলিত পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় একটি হেল্প লাইন চালু করেছেন। কেউ মনিপুর ছাড়তে চাইলে বাংলার দরজা তাঁর জন্য খোলা, জানিয়েছেন মমতা।