বিবিসিকে যা বললেন মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ১০ দফা দাবিতে যে আন্দোলন করছে সেটি আগামী দিনে কোন দিকে গড়ায় তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা কল্পনা। বর্তমানে সভা সমাবেশ, পদযাত্রার মতো কর্মসূচী দিয়ে মাঠে থাকা বিএনপি নির্বাচনের আগে যে ‘গণ-আন্দোলন’ সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু সেটি কিভাবে হবে? এ নিয়ে রাজনীতিতে আলোচনা আছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান পুরোপুরি বিপরীত মেরুতে। পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যে ভবিষ্যৎ আন্দোলনকে কিভাবে এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি? আন্দোলনে দলীয় চেয়ারপারসন নেতা খালেদা জিয়া দৃশ্যমান হবেন কিনা – এ প্রশ্ন রয়েছে অনেকের মধ্যে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কাছে আন্দোলনকে ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ নেয়ার জন্য দলের নির্দেশনা দেয়া আছে।
‘যেকোনো মূল্যে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমেই এ সরকারকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করা এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ‘জনগণের একটা সরকারকে প্রতিষ্ঠা’ করা-এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। সেই নির্দেশনাই আমাদের মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মী সকলের কাছে যাচ্ছে।’ বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ যে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলনের করছে সে ব্যাপারে সরকারের অবস্থান এখনো কঠোর। নির্বাচনের আগে সরকারকে ‘বাধ্য করার’ মতো আন্দোলন গড়ে তোলাই এখন বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় আন্দোলন কিভাবে এগিয়ে নেয়া হবে? সে প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই এ পরিবর্তন সম্ভব হবে।
‘জনগণই নির্ধারণ করবে তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেকোনো সময়ে কোন ধরনের আন্দোলনে তারা যাবে। আমাদের দেশে আন্দোলন বলতেই আপনার হরতাল অবরোধ এ সমস্ত বোঝায় এর আগে থেকেই। ‘আমরা এ কর্মসূচীগুলো কিন্তু অত্যন্ত সচেতনভাবেই পরিহার করছি এবং আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে, শান্তিপূর্ণভাবেই জনগণকে সাথে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
নতুন কর্মসূচী: সবশেষ বিভাগীয় সমাবেশেরে মাধ্যমে রাজপথের আন্দোলনে একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল বিএনপি। এরপর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ ১০ দফা দাবি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করলেও প্রায় ছয় মাসে রাজপথে বড় কোনো চাপ সৃষ্টি করতে পারেনি দলটি। এখন সারাদেশে জেলা পর্যায়ে নতুন কর্মসূচীর ডাক দিয়েছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার ও শনিবার অর্থাৎ ১৯ ও ২০ মে ১৮টি জেলায় এ কর্মসূচী পালিত হবে। এছাড়া ২৬ শে মে ১৭টি জেলায় ও ২৭শে মে বিএনপির ১৫টি জেলায় জনসমাবেশ করবে। ‘জেলা পর্যায়ে চার দিন ধরে তারা সমাবেশ করবেন। সেটা ২৭ তারিখ পর্যন্ত চলবে। আমরা আবার জনগণের কাছে যাচ্ছি, জনগণকে সংগঠিত করছি,’ বিবিসি বাংলাকে বলেন আলমগীর। ‘জনগণের যে দাবি অর্থাৎ এ সরকারের পদত্যাগ, সংসদকে বিলুপ্ত করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দেয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করার দাবিতে আমরা জনগণকে সংগঠিত করছি।’
তৃণমূল কী চায়? বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকারকে দাবি আদায়ে ‘বাধ্য করতে’ হলে আরো কঠোর কর্মসূচী দরকার। আগামী ২৬ মে ঢাকা বিভাগের মানিজকগঞ্জ জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মানিকগঞ্জে গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা স্থানীয় এ সমাবেশ সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সর্বস্তরের নেতা-কর্মী এখন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত, কিন্তু কেন্দ্র থেকে কঠোর কর্মসূচীর আশা করেন তারা।
মানিকগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি নাসিরউদ্দিন আহমেদ যাদু জানান, তারা এখন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। ‘যে আন্দোলন হইছে এতে সরকারের পতন হবে না। আরো বড় আন্দোলন হতে হবে এবং পতন হবেই হবে। আমরা চাই হরতাল আসুক, অবরোধ আসুক, ঘেরাও আসুক। আমরা এই বড় বড় আন্দোলন চাই। ছোট ছোট আন্দোলন করে আর ভাল্লাগে না, এখন বড় আন্দোলন চাই,’ বলেন আহমেদ।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল বাতেন বলেন, তারা এক দফার আন্দোলনের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ‘আমাদের তো এক দফা এক দাবি সরকারের পদত্যাগ। ১০ দফা তো কর্মসূচী দিয়েছে। কিন্তু লাস্টে আমরা এক দফাতে চলে যাবো। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং এর পদত্যাগের দাবিতে।’ সরকার পতনে কী ধরনের আন্দোলন কর্মসূচী দরকার? এ প্রশ্নে আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আন্দোলন করবো আমরা ঢাকা ঘেরাও করতে পারি। আমরা বিভিন্ন বিভাগ থেকে ঢাকায় আসতে পারি। জেলা থেকে আসতে পারি। একেবারে ঢাকাকে ঘেরাও করবো।’ জেলা পর্যায়ে বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজপথে ‘কঠোর আন্দোলনের’ জন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন প্রস্তুত। সরকারের পতনের লক্ষ্যে রাজপথে তাদের যে ধরনের কর্মসূচীর প্রত্যাশা রয়েছে সেটি নিয়ে সচেতন বিএনপির নীতি নির্ধারনী মহল। ধারাবাহিক আন্দোলনের কর্মসূচী নিয়ে সিদ্ধান্ত আসছে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং সময় সুযোগের হিসেব নিকেশ করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, ‘আমাদের তো সব দিক চিন্তা করেই কর্মসূচী নির্ধারণ করতে হয়। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি নির্ধারণ করে। এবং সেটা নি:সন্দেহে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার ছবি সেখানে পাওয়া যায়।’
বিএনপি মহাসচিব গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ‘আমরা এই অবৈধ সরকারের কোনো উসকানিতে পা দিতে চাই না। এবারো আমরা জনগণকে সাথে নিয়েই এগুচ্ছি। সে আন্দোলনটা একটা চূড়ান্ত পর্যায় আসবে এবং সে আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই আমরা এ সরকারকে বাধ্য করতে সক্ষম হবো।’
খালেদা জিয়ার ভূমিকা: বিএনপির সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে শীর্ষ নেতৃত্বের এক ধরনের সংকট দৃশ্যমান। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সক্রিয়তা বা উপস্থিতির প্রত্যাশা আছে দলের তৃণমূলের একটা বড় অংশের। তৃণমূলের নেতারা মনে করেন, দলীয় চেয়ারপারসনকে যদি আন্দোলনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখেন সেটি সারাদেশের নেতাকর্মীদের জন্য ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি করবে। আগামী দিনের আন্দোলনের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া কি দৃশ্যমান হবার সম্ভাবনা আছে? এ প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রশ্নই ওঠে না। এখনতো প্রশ্নই ওঠে না।’
‘নি:সন্দেহে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো বন্দী অবস্থায় আছেন। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ্য অবস্থায় আছেন। সুতরাং তার ব্যাপারে সঙ্গতভাবেই আপনি জানেন যে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বেই দল পরিচালিত হচ্ছে। এবং সেভাবেই আমরা কাজ করছি।’ বর্তমানে সভা সমাবেশ পদযাত্রার মতো কর্মসূচী দিয়ে রাজপথে আন্দোলনে সরব রয়েছে বিএনপি। দলটির লক্ষ্য নির্বাচনের আগে গণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা। কারণ দলীয় সিদ্ধান্ত হলো এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। যে কারণে আসন্ন সিটি নির্বাচনেও অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সূত্র : বিবিসি