মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ভৈরবে পুরাতন উত্তাল ব্রহ্মপুত্রের অস্তিত্ব বিপন্নের পথে

আবদুর রউফ (ভৈরব) কিশোরগঞ্জ :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

এশিয়ার প্রধান বৃহত্তম নদ-নদীগুলোর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদ অন্যতম। পৃথিবীর ১৫ তম দীর্ঘ নদী হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র। কথিত আছে ব্রহ্মপুত্র হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গের মানস সরোবর হ্রদ থেকে উৎপত্তি হয়েছে। পদ্মা এবং মেঘনার সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এর পুরোনো নাম হচ্ছে লৌহিত। বাংলাদেশের দীর্ঘতম এ নদী উৎপত্তিস্থল থেকে এর দৈর্ঘ্য ২ হাজার ৮শ ৫০ কিলোমিটার। ১৮৮৭ সালে ভূমিকম্পের কারণে নদের তলদেশ উত্থিত হওয়ার কারণে এর দিক পরিবর্তিত হয়ে যায়। এর আগে ব্রহ্মপুত্র ময়মনসিংহের উপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে বয়ে গিয়েছিল। ব্রহ্মপুত্রের একাংশ ময়মনসিংহ থেকে ভৈরব বাজার মেঘনার সাথে মিলিত হয়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার। পরে চাঁদপুর হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। ভৈরব শহরের পশ্চিম থেকে উত্তরাংশে পঞ্চবটি ও জগন্নাথপুর হয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি পর্যন্ত এক কালের উত্তাল ব্রহ্মপুত্র নদে ক্রমাগত পলি জমে বর্তমানে অস্তিত্ব বিপন্নের পথে। ড্রেজিং না করায় মৎস্যপ্রসিদ্ধ ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। নদে জেগে উঠা দীর্ঘ চরে গড়ে উঠেছে ১০/১২টি ইটের ভাটা। ভৈরব জগন্নাথপুর অংশের ব্রহ্মপুত্র নদের সর্বশেষ ১৯৯০ সালের দিকে ৫/৬টি ফেরী যানবাহন পারাপার করত। ঢাকা থেকে সিলেট এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুটিচৌমুহনী এলাকার বাস ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন ফেরীর মাধ্যমে পারাপার হত। বর্তমানে এখানে সরু খালে বইছে পানির প্রবাহ। চরে চড়ানো হচ্ছে ঘোড়া, গরু ও ছাগল। নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে দেশের ২য় বৃহত্তম এ নদ। ব্রহ্মপুত্র পাড়ের ভৈরবস্থ জগন্নাথপুর গ্রামের হাজী কাদির বখশ সরকার বাড়ীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ তালাওয়াত হোসেন বাবলা (৬৯) জানান, আমরা ছোট বেলায় ব্রহ্মপুত্র নদে সাঁতার শিখেছি। বৃহ্মপুত্র আরও বেশ প্রশস্ত ছিল। গ্রামের ছেলেদের মধ্যে সাঁতার শেখার পাশাপাশি নদীতে খেলা ছিল ডুব দিয়ে একে অপরকে ছোঁয়া। এখানে গড়ে উঠেছিল কাদির সরকার এর ঘাট। যা অত্র অঞ্চলে ব্যাপক পরিচিত ছিল। মাঝি মাল্লাদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা ছিল এ ঘাটে নৌকা এবং মাঝি নিরাপদ। সরকারিভাবে এ ঘাট থেকে ইজারা নেয়া হত। এ ঘাট দিয়ে কাঠাল, পাটসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নৌকাযোগে আনা নেওয়া করা হত। পাল তোলা নৌকায় করে বরযাত্রী আনা নেওয়া, পিকনিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নৌকা।
নৌকা সাজিয়ে মাইক লাগিয়ে গান বাজনার মাধ্যমে উৎসবে যোগ দিতাম আমরা। নৌকাঘাটকে কেন্দ্র করে লোক সমাগম ও ব্যবসা বানিজ্য ছিল বেশ জমজমাট। ব্রহ্মপুত্র নদের কাঁচকি মাছ সমস্ত দেশে সুবিদিত ছিল। যা আজও এলাকাবাসী ভুলতে পারেনি। কাদির সরকারের ঘাটের ১ কিলোমিটার উত্তরে ও দক্ষিণে আরও দুটি খেয়াঘাট থেকে লোক পারাপার ও পণ্য যাতায়াত করত। আমরা ছোটবেলায় দেখেছি ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে দিনরাত লঞ্চ, পাল তোলা নৌকা চলাচল করত। মাঝি মাল্লা ও ছেলেদের শোরগোল চলত রাতভর। বর্ষাকালে নদীতে পানির কলকল শব্দ বইত। জেলেরা দিনের বেলা জাল দিয়ে এবং রাতে হেজাক লাইটের মাধ্যমে মাছ ধরত। নদীতে পাওয়া যেত গলদা চিংড়ি, চিতল, বোয়াল, রুই, শৈল, বাউসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এ নদের মাছ অত্যান্ত সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে কিছুটা চড়া দামে বিক্রি হত। যা আজও বিভিন্ন বাজারে বেশি দামে এ নদীর মাছ কিনতে হয়। ঐতিহ্যবাহী বন্দরনগরী ও সু-প্রসিদ্ধ বানিজ্যিক কেন্দ্র ভৈরব বাজার থেকে উত্তরাঞ্চলের নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বেলাব উপজেলা এবং বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র নৌপথে সরাসরি ব্যবসা বানিজ্য ছিল। ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ের রায়পুরা, বেলাব, কুলিয়ারচর, ভৈরব, কটিয়াদীসহ বিভিন্ন উপজেলার কৃষকগণ বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল। নদী, খাল, বিল অসময়ে শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ কাজে বিঘœ ঘটে। সেচের অভাবে পতিত পড়ে আছে হাজার হাজার একর জমি। কতিপয় প্রভাবশালী মহল নদের উভয় তীর বেদখল করছে। ধীরে ধীরে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণসহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে ব্যবসা করছে। ফলে দিন দিন নদের প্রশস্ততা কমছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানি না থাকায় শতাধিক সেচ যন্ত্র বন্ধ হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম পাড়ের মুছাপুর গ্রামের জেলে মোঃ দীন ইসলাম মিয়া বলেন, আগে নদী থেকে মাছ ধরে বেশ আয় হত। এখন কৃষি কাজ করে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়ছে। ব্রহ্মপুত্র খনন করা হলে বছরে কোটি কোটি টাকার মৎস্য আহরনসহ শত শত টন ফসল উৎপন্ন করা সম্ভব। এক তথ্যে জানা গেছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের অংশে যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগস্থল খনন না করায় বর্ষা মৌসুমে ক্রমাগত পলি পড়ে ব্রহ্মপুত্র অস্তিত্ব হারাচ্ছে। জামালপুর থেকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি পর্যন্ত ২শ ২৭ কিলোমিটার সু-পরিকল্পিত উপায়ে খনন করা হলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির প্রবাহ বজায় থাকবে। ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিনের।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com