ফজরের নামাজ পড়ছিলাম। ইমাম সাহেব সীমাহীন ভালোবাসা আর আবেগমিশ্রিত কণ্ঠে তিলাওয়াত করছিলেন সূরা কিয়ামাহ। উনার তিলাওয়াতে প্রতিনিয়তই আমি মুগ্ধ হই। হারিয়ে যাই ভাবনার জগতে। তিলাওয়াত শুনে পুরো দেহ-মনজুড়ে একটি প্রশান্তির সুবাতাস বইয়ে যায়। আল্লাহর কালাম কত মধুময়। নিখুঁত শব্দচয়ন, অভিনব বাক্যের গাঁথুনি ও অনুপম উপমা। আহ, কতই না শ্রুতিমধুর!
নামাজে দাঁড়াতেই বহুমুখী চিন্তা ঘিরে ফেলে আমাকে। দেহটি মসজিদে থাকলেও মন তো এক জাগায় স্থির থাকে না। এটা-ওটা একের পর এক বিষয় স্মরণ হতে থাকে এবং এটি হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। তাই এক মুহূর্তের জন্য চোখ দুটো বন্ধ করে মৃত্যুকে স্মরণ করলাম। আহ, কত ভয়ানক চিত্র! অবশ্য এটি মুমিন বান্দার জন্য নয়। কিন্তু মৃত্যুকে তো আলিঙ্গন করতেই হবে। তা থেকে তো পালানোর সুযোগ নেই। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী। (সূরা আল ইমরান-১৮৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের পেয়ে যাবেই, যদিও সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো।’ (সূরা নিসা-৭৮)
মৃত্যু এক সুনিশ্চিত ও অপ্রিয় সত্য। যা প্রতিনিয়তই হাতছানি দেয় আমাদের। বিপরীতে মৃত্যুকে ভুলে থাকার সার্কুল্য চেষ্টা আমরা করে থাকি দিব্যি। মাঝে মধ্যে কাজের ফাঁকে অবসরে কিংবা বিছানায় বালিশে মাথা ঠেকিয়ে মৃত্যুকে স্মরণ করা উচিত, তাহলে হয়তো দুনিয়ার ব্যস্ততা কিছুটা কমবে। হাদিসেও মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘তোমরা বেশি পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারী অর্থাৎ মৃত্যুর স্মরণ করো।’ (সূনানে তিরমিজি-২৩০৭)
দুনিয়াতে দু’দিনের সফরে বের হলেও আমরা নানান রকম প্রস্তুতি নিই। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করে রাখি। যাতে করে সফরে কোনো প্রকার ঝামেলা পোহাতে না হতে হয়। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের তো শুরু আছে, শেষ নেই। তাহলে সেই সুদীর্ঘ পথের পাথেয় কতটুকুই বা সংগ্রহ করেছি? এমন কোনো আমল কি আছে যা দিয়ে সেই পথ পাড়ি দিতে পারব। আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যেভাবে করা উচিত এবং তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সূরা আল ইমরান-১০২)। লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া আরাবিয়া মাখযানুল উলুম, ময়মনসিংহ সদর