আমার যখন মন খারাপ থাকে তখন তার গুরুত্ব শুধু আমিই বুঝতে পারি। কেন বা কার কারণে মন খারাপ হলো তাও বুঝতে বাকি থাকে না। ঠিক তেমনি আমার বা আপনার মত মায়েদেরও মন খারাপ হয়। অবাক হলেও মিথ্যে না। মনে হতে পারে মায়েদেরও আবার মন আছে নাকি? না চাইতেই সব পেয়ে যাওয়ায় ধরেই নিয়েছেন মা সব কাজ করতে বাধ্য। তবে তিনিও যে আমাদের মতোই একজন মানুষ, তা অনেক সময় মনেই থাকে না। পরিবারে একের অধিক সন্তান থাকলে মা কার জন্য কতটুকু করলেন, কাকে কী দিলেন সেই হিসাব নিয়েই ব্যস্ত থাকি। অথচ এত কাজের মাঝে মায়েরও যে বিশ্রাম প্রয়োজন তা আর মাথায়ই থাকে না।
ছোট থেকে মাকে কোথাও বসতে দেখিনি। শান্তি করতো না ঘুমিয়েও। রাতে আমার পানির পিপাসা পেলে মা রুমে পানি নিয়ে আসতো। বাবার বেলাতেও তাই। কারণে-অকারণে ছোট ভাইটার রাতে পাঁচ থেকে ছয়বার জেগে ওঠাতো আছেই। সবকিছু মিলিয়ে আরামের ঘুমকেও বিসর্জন দিতেন মা। তবুও চোখেমুখে কখনো ক্লান্তির ছাপ দেখিনি। সব কিছু হাসিমুখেই করতেন। জানিনা ওই হাসির পেছনে ক্লান্তিটা ঠিক কী রকম।
মাঝে মধ্যে মাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যেতাম। মা কিন্তু কখনো কাজ করতে দিতেন না। এমন ভাব করতেন যেন কাজ করলে তার ছেলের শরীরে দাগ লেগে যাবে। জোড় করে করতে চাইলে রাগ করে পাঠিয়ে দিতেন। একটি মানুষ কীভাবে এত কাজ করতে পারেন, তা আমার মাকে না দেখলে কখনো বুঝতেই পারতাম না। তবে আমি মাকে কাজে সহযোগিতা করতে না পারলেও তা করতাম ভিন্নভাবে। মায়ের কাজে যাতে ক্লান্তি না আসে তাই তাকে সময় দিতাম। নানা বিষয়ে গল্প জুড়ে দিতাম। বোঝার চেষ্টা করতাম কোন গল্পে মা খুশি হন। সে অনুযায়ী গল্প করে সময় কাটিয়ে দিতাম। মাও গল্প আড্ডায় তার কাজ শেষ করতেন।
মায়েরা তার সন্তানকে কাজ করতে দিতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। তবুও আমার মত তারও যেহেতু ক্লান্ত আছে তাই তার বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্রাম নিতে না চাইলেও ছলে কলে কিংবা কিছুটা জোড় করেই বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন। খানিকটা বিশ্রাম পেলে তার কষ্টটা অনেক কম হবে।
মায়ের কী পছন্দ তা কখনোই তিনি বলতেন না। সবসময় আমাদের পছন্দকেই নিজের পছন্দ বলে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। তবে তারও নিজস্ব পছন্দ থাকতে পারে। আমি সবসময় তা বোঝার চেষ্টা করতাম। মায়ের ভালো লাগার কাজগুলো করলে তার মন খারাপ কি আর থাকতে পারে?
আসলে মা তো মা ই হয়। তার সঙ্গে কি তুলনা সম্ভব? অবশ্যই না। মায়েরা সব সময় তার সন্তানের খেয়াল রেখে চলেন। তাই আমাদেরও উচিত মায়ের সুখ দুঃখগুলো বোঝার চেষ্টা করার, তাকে হাসিখুশি রাখার। কেননা মাকে মানসিক শান্তি দিতে পারলে তারা একজন যোদ্ধার চেয়েও অধিক শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। আমি আমার মাকে অনেক ভালোবাসি, তাই তাকে সব সময় হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করি। তার সঙ্গে অনেক দুষ্টুমি করি। ঠিক তিনি আমার শৈশবে যেমনটা করতেন। মায়ের কাছে সন্তানরা কখনো বড় হয় না। আপনার দুষ্টুমিটাও হতে পারে মায়ের মানসিক শক্তির কারণ। তাই আজ থেকে আপনিও মাকে হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করুন। মায়ের এক চিলতে হাসি আমাদের সারাদিন ভালো থাকার কারণ। -জাগোনিউজ২৪.কম। লেখক-মো. আবু সালেহ মুসা, ফ্রিল্যান্স ফিচার রাইটার