আমাদের সামনে এখন পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। এই পবিত্র ঈদুল আজহা আমাদের জন্য নিয়ে আসছে বরকতময় ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ। বরকতময় ফজিলতপূর্ণ সেই ইবাদতটি হচ্ছে কোরবানি। ইসলামে এই কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। তাই সামর্থ্যবান মুসলমানের উচিত এই সুযোগ কাজে লাগানো। আসুন কুরআন-হাদিসের আলোকে কোরবানির গুরুত্ব ও ফজিলতগুলো জেনে নিই। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ‘হে নবী! তুমি কিতাবিদেরকে আদমের দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা ভালো করে বর্ণনা করো। তারা যখন কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো কিন্তু অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না। ক্ষিপ্ত হয়ে সে বলল, আমি তোমাকে খুন করব। অপরজন বলল, প্রভু তো শুধু আল্লাহ-সচেতনদের কোরবানিই কবুল করেন।’ (সূরা মায়িদা-২৭) অন্যত্র বলেছেন- ‘হে নবী! ওদের বলুন, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ, আমার সবকিছুই বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তিনি একক ও অদ্বিতীয়। এ আদেশই আমি পেয়েছি। আমি সমর্পিতদের মধ্যে প্রথম।’ (সূরা আনআম : ১৬২ ও ১৬৩)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবন ওমর রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: মদিনায় ১০ বছর থেকেছেন এবং প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। (তিরমিজি-১৫০৭) অন্যত্র রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোরবানির দিন মানুষ যে কাজ করে তার মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় হচ্ছে রক্ত প্রবাহিত করা। অর্থাৎ- কোরবানি করা। (তিরমিজি ১৪৯৩) অন্যত্র হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এতে কি আমাদের জন্য সওয়াব আছে? তিনি বললেন, ‘কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের পরিবর্তে একটি করে প্রতিদান রয়েছে। সাহাবিরা আবার জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! পশমওয়ালা পশুদের ব্যাপারে কী হবে? অর্থাৎ- এদের পশম তো অনেক বেশি? তিনি বললেন, ‘পশমওয়ালা পশুদের প্রতিটি পশমের পরিবর্তে একটি করে নেকি রয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ ৩১২৭)
অতঃপর ফজিলতপূর্ণ এই কোরবানির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হচ্ছে, বিশুদ্ধ নিয়ত। এ জন্য যার নিয়ত বিশুদ্ধ ও খালেছ হবে না তার কোরবানিও কবুল হবে না। কেননা, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘সব কাজের ফলাফল নিয়তের ওপরই নির্ভরশীল। আর প্রতিটি লোক তাই পাবে, যা সে নিয়ত করবে।’ অন্যত্র হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে লক্ষ করেন না; বরং তোমাদের অন্তঃকরণ ও কাজের দিকে লক্ষ করেন।’ (বুখারি-৫১৪৪, মুসলিম-২৫৬৪) আর কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘বলে দাও, প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে।’ (সূরা বনি ইসরাঈল-৮৪) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে পরকালীন ফসল চায়, তার ফসল আমি বৃদ্ধি করি। আর যে দুনিয়ার ফসল চায়, তাকে দুনিয়া থেকেই দান করি; কিন্তু পরকালে তার কিছুই প্রাপ্য হবে না।’ (সূরা আল-শুরা-২০) এ ছাড়া এই কোরবানির উদ্দেশ্য আমাদের থেকে শুধু একটি পশুকে জবাই করা নয়; বরং একটি পশুকে জবাইয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে আমাদের মনের পশু ও আমিত্বকে জবাই করা। দেহমনের সব পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করা, পবিত্র করা। আর এই কোরবানি কবুল হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে আমাদের বা ব্যক্তির নিয়ত, ভাবনা ও মানসিকতার ওপর। তাই আসন্ন এই কোরবানির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদতে শরিক হয়ে নিজেদেরকে তাকওয়াবান, মুত্তাকি হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমও হতে পারে এই ঈদুল আজহা বা কোরবানি। অতএব, আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহার ফজিলতপূর্ণ কোরবানির ইবাদতটি আমল করার আগে নিজেদের নিয়ত ঠিক করুন, পরিশুদ্ধ করুন, ভেজালমুক্ত করুন। আর নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সব স্তরে
আল্লাহর ভয়, আনুগত্য ও আত্মত্যাগের সাধনাকে প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানান। আর এই কোরবানির মধ্যদিয়ে আমাদের মধ্যে তার শিক্ষা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন ঘটুক। লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক