লিভার শরীরের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যা ৫০০টিরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক কাজ সম্পন্ন করে। আপনার খাওয়া খাবারকে লিভার শক্তিতে রূপান্তরিত করতে ভাঙ্গতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে রক্ত থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলোকেও সরিয়ে দেয়।
তাই লিভারে যে কোনো সমস্যা সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। লিভারের দীর্ঘস্থায়ী এক ব্যাধি হলো ফ্যাটি লিভার ডিজিজ, যা লিভারে চর্বি জমার কারণে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্যাটি লিভার ডিজিজের প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে রোগটি বিকশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরজুড়ে লক্ষণ দেখাতে শুরু করে। ফ্যাটি লিভারের রোগ চারটি পর্যায়ে বিকাশ লাভ করে। এর চতুর্থ ও শেষ পর্যায় সিরোসিস নামে পরিচিত। এনএইচএস ইউকে অনুসারে, ক্রমাগত ও দীর্ঘমেয়াদী লিভারের ক্ষতির কারণে সিরোসিস হয়।
সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্যাটি লিভারে আক্রান্তের হার গত ৩ দশকে বেড়েছে বিশ্বব্যাপী। শিকাগোতে এন্ডোক্রাইন সোসাইটির বার্ষিক সভায় ইএনডিও ২০২৩ এ উপস্থাপিত সমীক্ষা এই তথ্য জানাচ্ছে। গবেষকরা বলছেন, ফ্যাটি লিভার কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস ও একটি সাধারণ ধরনের লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। যদি এর সঠিক চিকিৎসা করা না হয় তাহলে এটি লিভার ক্যানসার এমনকি লিভার ফেইলিওর পর্যন্ত হতে পারে। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ বিশ্বব্যাপী একটি বড় উদ্বেগের বিষয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য সবচেয়ে সাধারণ কারণ হয়ে উঠেছে। এই গবেষণার জন্য গবেষকরা ১৯৮৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে থেকে ৩২ হাজার ৭২৬ জন অংশগ্রহণকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করেন।
এ বিষয়ে চার্লস আর. ড্রু ইউনিভার্সিটি অব মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স ইন লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও গবেষক থিওডোর সি. ফ্রিডম্যান (এমডি, পিএইচডি) বলেছেন, ‘আমরা দেখেছি ফ্যাটি লিভারের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে স্থূলতাও বাড়ে।’
ফ্যাটি লিভার হওয়ার কারণ কী? ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায় অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস। যখন লিভার স্বাভাবিক উপায়ে চর্বি ভাঙতে অক্ষম হয়, তখন তা লিভারে জমা হতে থাকে ও ফ্যাটি লিভার নামক রোগের সৃষ্টি করে। স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ পরিমাণে ট্রাইগ্লিসারাইডও ফ্যাটি লিভারের রোগের বিকাশ ঘটায়।
ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ কী কী? ফ্যাটি লিভারের সাধারণ লক্ষণগুলো হলো- ক্লান্তি, ব্যথা, ডান পেটে তীব্র অস্বস্তি ও পেটে ফুলে যাওয়া, যাকে ডাক্তারি ভাষায় অ্যাসাইটিস বলা হয়। এই রোগের লক্ষণ হিসেবে মানসিক বিভ্রান্তি ও চরম অলসতাও এই রোগের লক্ষণ হতে পারে। ফলে রোগীদের পা ফুলে যায়। একই সঙ্গে ক্ষুধা কমে যাওয়া এমনকি ওজন কমে যাওয়াও ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া