ব্যাপারীদের প্রত্যাশা গরুর দাম বাড়বে
কোরবানির ঈদ ঘিরে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে পশুর হাট জমে ওঠেছে। উত্তরের জনপদ নাটোর জেলার বৃহত্তম গরু-ছাগল বেচাকেনার তেবাড়িয়া হাট পুরোদমে জমে উঠেছে। সেইসঙ্গে শেষ সময়ে কমেছে পশুর দাম। এতে খুশি ক্রেতারা। গত রবিবার (২৫ জুন) সরেজমিনে হাট ঘুরে খামারি ও ব্যাপারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের হাটে অপেক্ষাকৃত ছোট গরুর চাহিদা বেশি। এ জন্য ছোট গরুর দাম একটু বেশি। তবে বাইরের ব্যাপারীরা না আসায় বড় গরুর চাহিদা কম। দামও তুলনামূলক কম। তবে বড় গরুর ক্রেতা কম। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর নাটোরে কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ২৩৮টি। এর মধ্যে গরু ১ লাখ ১১ হাজার ২৩৪টি, মহিষ ২ হাজার ৮২২টি, ছাগল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪টি, ভেড়া ৪৬ হাজার ১৬৯টি এবং দুম্বা ৯টি। জেলায় কোরবানিতে পশুর চাহিদা আছে ২ লাখ ৫১ হাজার ২টির। ফলে উদ্বৃত্ত থাকবে ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৩৬টি গবাদিপশু।
সরেজমিনে জেলার বৃহত্তম তেবাড়িয়া হাট, সিংড়া হাট, সদরের দিঘাপতিয়া করোটা হাট, ছোটহরিশপুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, পুরোদমে পশু কেনাবেচা চলছে। মাঝারি গরু-ছাগল কেনার প্রতি ঝোঁক বেশি ক্রেতাদের। বড় আকৃতির গরুর প্রতি আগ্রহ কম অনেকের। এবার শুরুতে দাম বেশি থাকলেও শেষ দিকে এসে কমেছে গরু-ছাগলের দাম। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। সদরের দিঘাপতিয়া-হাগুড়িয়া এলাকার মুনছুর আলী বলেন, ‘রবিবারের হাটে ১৯ হাজার টাকায় একটি ছাগল বিক্রি করেছি। মাংস ২৪-২৫ কেজি হবে। প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পেয়েছি।’
দিঘাপতিয়া বাজার এলাকার বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলী বলেন, ‘৯০ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছি। এবার শুরুতে বাজারে গরুর দাম বেশি ছিল। শেষ মুহূর্তে কমেছে। এখন নাগালের মধ্যে আছে।’ দিঘাপতিয়া একমে অনার্স কলেজের কম্পিউটার অপারেটর শাওন জানান, ছোটহরিশপুর হাট থেকে ৩২ হাজার টাকায় দুটি খাসি কিনেছেন। দুটির মাংস প্রায় ৪০ কেজি হবে। এই দামে কোরবানির পশু কিনতে পেরে তিনি খুশি। শহরের গরু ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী জানান, তিনি প্রতিদিন বিভিন্ন হাটে গরু-ছাগল বিক্রি করছেন। এবার শুরুতে দাম বেশি থাকলেও শেষের দিকে এসে দাম কমেছে। এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে খুশি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বিভিন্ন হাটের ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, পশুর দাম নাগালের মধ্যেই আছে। তবে শুরুতে বেশি ছিল।’ জেলায় ২ লাখ ৬৯ হাজার ২৩৬টি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকায় কোনও সংকট তৈরি হবে না উল্লেখ করে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গোখাদ্যসহ সব জিনিসের দাম বেশি। এ জন্য গতবারের চেয়ে পশুর দাম কিছুটা বেশি। তবে তা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আছে।’
ব্যাপারীদের প্রত্যাশা গরুর দাম বাড়বে, ক্রেতাদের আশা কমবে: দেশের নানান প্রান্ত থেকে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৯টি পশুর হাটে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক আসছে কয়েক দিন থেকেই। হাটগুলো ভরে উঠেছে কোরবানির গরু-ছাগলে। বেচাকেনা সেভাবে শুরু না হলেও নগরবাসী পশুর হাটগুলোতে আসছেন। ঘুরে ফিরে দেখছেন গরু-ছাগল। কেউ কেউ আবার দরদামও করছেন। পছন্দ হলে পশুটি কিনেও আনছেন অনেকে। তবে এ সংখ্যা একেবারেই কম। সাধারণত ঈদের আগের দিন গরু বেচাকেনা সবচেয়ে বেশি হয়। ক্রেতাদের আশা, ঈদের আগের রাতে গরুর দাম আরও একটু কমবে। অন্যদিকে ব্যাপারীদের প্রত্যাশা, গরুর দাম সামনে আরও বাড়বে। মানিকগঞ্জের মুন্নাফ ব্যাপারী। চার দিন আগে হাটে ৫৬টি মাঝারি আকারের গরু তুলেছেন। এরমধ্যে মাত্র চারটি বিক্রি করেছেন। সামনে গরুর দাম বাড়বে এই প্রত্যাশায় বাকি গরু বিক্রি করছেন না তিনি। মুন্নাফ ব্যাপারী বলেন, ঢাকায় মানুষের ঘুমানোর জায়গার অভাব। গরু কিনে রাখবে কোথায়? চাঁদ-রাতে গরু সব বিক্রি হয়ে যাবে। সামনে গরুর দাম বাড়বে। যদি দাম না বাড়ে ঘরের মাল ঘরে ফেরত নিয়ে যাবো। তারপরও পানির দরে গরু দেবো না। এরই মধ্যে হাটে ক্রেতা সমাগম বাড়তে থাকে। তবে কেনার থেকে দেখার লোক বেশি। ক্রেতাদের প্রত্যাশা সামনে দাম কমবে।
নগরীর বর্ধিত পল্লবী থেকে গাবতলী পশুর হাটে এসেছেন হাজী মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন। সঙ্গে করে বড় ছেলে ও কলেজ পড়ুয়া নাতি-নাতনিকে নিয়ে এসেছেন। মোহাম্মদ মঈনুদ্দীদের প্রত্যাশা, চাঁদ-রাতে গরুর দাম ঠিকই কমবে। মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাপারীরা গরুর দাম বেশি বলে। তারা গরু ছাড়ছে না। এক লাখ টাকার গরুর দাম এক লাখ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বলে। প্রতিবার দেখি ঈদের আগের রাতে গরুর দাম কমে। গতবার ঈদেও কমেছিল। আমার বিশ্বাস এবার ঈদেও গরুর দাম কমবে। হাটে ১২ থেকে ১৩টি গরু দেখে একটা ধারণা নিলাম। এবার গরুর দাম খুবই বাড়তি। কুষ্টিয়া মিরপুরের শুকচান ব্যাপারী। এবার গাবতলীর হাটে ৩২টি গরু তুলেছেন। গত দুই কোরবানির ঈদের গড়ে ৮ লাখ টাকা লোকসান গুনেছেন শুকচান। এবার ঈদে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশায় আছেন তিনি।
তিনি বলেন, গত দুই কোরবানিতে বড় বসান (লোকসান) খাইছি। যা থাকে কপালে, এবারও গরু রেখে দেবো। পানির দরে বিক্রি করবো না। তবে এবার হাটে গরু কম। আশা করছি দাম বাড়বে। ফলে কোরবানির গরু বেচাকেনা একেবারেই থমকে আছে বলা যায়। তবে গরু রাখার জায়গা যাদের আছে তারা অনেকে দর কষাকষি করে গরু কিনে নিচ্ছেন।
বর্তমানে হাটে গরু দেখভাল চলছে। দাম জিজ্ঞেস করেই চলে যাচ্ছেন ক্রেতারা। মিরপুরের মিজান ব্যাপারী ৪০টি গরু চুয়াডাঙ্গা থেকে গাবতলীর হাটে তুলেছেন। একটি গরুও বিক্রি করেননি ভালো দামের আশায়। মিরপুরের রাজু ব্যাপারী, মন্টু ব্যাপারী ও দেলোয়ার ব্যাপারী এসেছেন গাবতলী হাটে। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। গ্রামের হাট ও বিভিন্ন বাড়ি থেকে এনে ৫৬টি গরু হাটে তুলেছেন। একটি গরুও তারা বিক্রি করেননি। মূলত বাড়তি দামের আশায় তিনি গরু বিক্রি করেননি। রাজু ব্যাপারী জাগো নিউজকে বলেন, গরু বিক্রি হয় চাঁদরাতে। ঢাকার মানুষ গরু রাখবে কোথায়? গরু এখন বেচাকেনা নেই তেমন। ক্রেতারা আসছে, গরু দেখতে। হাটে গরু দেখে বাসায় গিয়ে সবাই গল্প গুজব করবে। এর পরেই গরু কিনবে। এক রাতেই গরু বিক্রি হয়ে যাবে। এরই মধ্যে নগরীর অলি-গলি ও বাসার সামনে কোরবানির পশু দেখা যাচ্ছে। ফুটপাত দিয়ে ছোট ছোট মৌসুমি বেপারীরা বিক্রির জন্য ছাগলের পাল নিয়ে ছুটছেন।