পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি কাটাতে গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করেছে চাকরির সুবাদে গাজীপুরে বসবাসকারী মানুষ। সোমবার (২৬ জুন) গাজীপুরের কিছু কারখানা ছুটি হলে দুপুরের পর থেকে গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করেন হাজার হাজার পোশাক শ্রমিক। গাজীপুরের বিভিন্ন ব্যস্ততম স্থানগুলোতে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা, কালিয়াকৈরের চন্দ্রা মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে থেমে থেকে যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে মঙ্গলবার গাজীপুরের প্রায় সব পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হবে। আর দুপুরের পর থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের থাকবে প্রচ- ভিড়। সোমবার বেশ কিছু কারখানা ছুটি হওয়ার পর যারা বাড়ি যেতে পারেনি তাদের মঙ্গলবার সকাল থেকেই টঙ্গী, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজার, চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ি, চন্দ্রা মোড়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম স্থান গুলো মহাসড়কে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। মঙ্গলবার সকালে টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ও যাত্রীদের জটলা সৃষ্টি হচ্ছে। যানবাহনের ধীর গতির কারণে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
ময়মনসিংহগামী সৌখিন পরিবহনের চালক ইলিয়াস হোসেন বলেন, মহাখালী থেকে সকাল সাড়ে ৮টায় রওয়ানা দিয়ে দ্রুত টঙ্গী পর্যন্ত এসেছি। যাত্রীবাহী বাসগুলোর সিট পরিপূর্ণ না হওয়ায় অনেকে ফ্লাইওভার ব্যবহার না করে নিচ দিয়ে গাজীপুরের দিকে যাচ্ছে। এতে ব্রিজের নিচের অংশে বিভিন্নস্থানে যানবাহন ধীর গতিতে চলে। কখনো যানজটের সৃষ্টি হয়।
নেত্রকোনাগামী পরিবহন চালক আবুল হোসেন বলেন, বিআরটি প্রকল্পের কারণে ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী সড়কে একটি সরু লেন আছে। ফলে রাস্তায় যেসব বাস যাত্রী ওঠানোর জন্য থামছে এর পেছনে অন্য যানবাহনের দীর্ঘ সারি হচ্ছে। টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত কোথাও বাসস্ট্যান্ড না থাকায় যাত্রীবাহী সব পরিবহনই সড়কের ওপরই যাত্রী ওঠানামা করে। ফলে যানবাহনের দীর্ঘ সারি হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গত ঈদের মতো এবারো যানজটমুক্ত পরিবেশে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। কোথাও কোনো যানজটের সৃষ্টি হলে পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। যাত্রীদের নির্বিঘেœ গন্তব্যে পৌঁছাতে আমরা বদ্ধপরিকর।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেই যানজট: ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঘরমুখো মানুষ এবার কোনো দুর্ভোগ ছাড়াই গন্তব্যে যেতে পারছেন। কারণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে যানবাহনের চাপ থাকলেও নেই কোনো যানজট। তবে সোমবার রাতের দিকে মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে থেমে থেমে যানজট ছিল। এদিকে সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় কিছুটা দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। তবে প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বৃষ্টির মধ্যেই গন্তব্যে ছুটছেন। এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে বাস মালিকদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মো: ইব্রাহিম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ উপজেলার কাঁচপুর থেকে মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা পর্যন্ত এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পুরিন্দা বাজার পর্যন্ত সর্বমোট এক শ’ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ৪০ জন পুলিশ মোতায়েন আছে। তিনি বলেন, এছাড়া কমিউনিটি পুলিশ, মোবাইল টিম, হোন্ডা টিম, অ্যাম্বুলেন্স টিম মহাসড়কে ২৪ ঘণ্টা থাকবে। পাশাপাশি দুই মহাসড়কের কোথাও কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে দুর্ঘটনাজনিত যানবাহন দ্রুত মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় ও মদনপুর এলাকায় দুটি রেকার এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে একটি রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যানজট নিরসনে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি, অন্যবারের তুলনায় এবার ঘরমুখো মানুষ কোনো দুর্ভোগ ছাড়াই সহজেই তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে পারবেন।