মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিশেষ সিএসআর তহবিলের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে গবেষণা খাতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করলো সাউথইস্ট ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবসায় উন্নয়ন সম্মেলন ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা  ডেঙ্গুতে আরো ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১২৯৭ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলো ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কার বিষয়ে অগ্রগতি জানালেন কমিশনপ্রধানেরা বৃটেনে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আপসানা হত্যা-গণহত্যাসহ গুমের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে ৮০টিরও বেশি অভিযোগ ৪ মহানগর ও ৬ জেলায় কমিটি অনুমোদন বিএনপির মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল জানা যাবে কখন?

বিরল ও অদ্ভূত মানসিক সমস্যা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ জুলাই, ২০২৩

সিজোফ্রেনিয়া এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক সমস্যার কথাই বেশিরভাগ মানুষ শুনে থাকে। কিন্তু কিছু কিছু মানসিক সমস্যা এতোটাই বিরল যে, মানসিক রোগ চিকিৎসকদের অনেকে সারা জীবনেও একবার এমন রোগীর দেখা পান না। মনোরোগবিদ্যায় সবচেয়ে অদ্ভূত ও বিরল পাঁচটি রোগ বা উপসর্গের কথা এখানে তুলে ধরা হলো।
১. ফ্রেগোলি সিনড্রোম: ফ্রেগোলি সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মনে করে আলাদা আলাদা ব্যক্তি মূলত একজনই মানুষ। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ করে। যারা এই সমস্যায় ভোগেন তারা মনে করেন তারা ছদ্মবেশধারী ব্যক্তির দ্বারা নির্যাতিত। এই সমস্যার নামকরণ করা হয়েছে ইতালির ম অভিনেতা লিওপলডো ফ্রেগোলির নামানুসারে। তিনি মে উপস্থিত থেকেই খুব দ্রুত চরিত্র পরিবর্তন করে ফেলতে পারতেন এবং এজন্য তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। ফ্রেগোলি সিনড্রোম আরো অনেক মানসিক সমস্যার পাশাপাশি থাকে। যেমন বাইপোলার ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া এবং অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি। মানে সাধারণত ব্যক্তির মুড, আবেগ বা মানসিক অবস্থার বিপরীতমুখী পরিবর্তন ঘটে যেসব মানসিক অবস্থায়। এছাড়া মস্তিষ্কে আঘাত এবং পারসিনসন্স ডিজিজ নামে স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত লেভোডোপা নামে ওষুধ গ্রহণের কারণেও এই রোগ দেখা দিতে পারে। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় বলা হয় প্রথমবার সনাক্ত হওয়ার পর বিশ্ব জুড়ে এ ধরণের উপসর্গে আক্রান্ত মাত্র ৫০ জন ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। এরপর ২০২০ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী স্ট্রোকে ভোগা রোগীদের মধ্যে এক দশমিক এক শতাংশ ঘটনায় এ ধরণের সিনড্রোম দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মানে হচ্ছে এ পর্যন্ত ৫০ জনের চেয়ে বেশি মানুষ এই সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু তারপরো এটি বেশ বিরল মানসিক উপসর্গ। ফ্রেগোলি সিনড্রোমের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে মানসিক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের মাধ্যমে এর উপসর্গ কমিয়ে আনা যায়।
২. কোটার্ড’স সিনড্রোম:কোটার্ড’স সিনড্রোম আক্রান্ত মানুষকে ‘জীবন্মৃত’ বা ‘ওয়াকিং ডেড সিনড্রোম’ আক্রান্ত বলে বর্ণনা করা হয়। এ রোগে আক্রান্ত মানুষরা বিশ্বাস করে তারা মৃত এবং তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। অনেকে আবার মনে করে তার দেহের কোনো একটি অংশ সক্রিয় নেই। এই রোগের নামকরণ করা হয়েছে ১৯ শতকের ফরাসি স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ জুলস কোটার্ড-এর নামানুসারে। তিনি ১৮৮২ সালে প্রথম এ রোগের উপসর্গ বিষয়ে ধারণা দেন। সিজোফ্রেনিয়া, বিষণ্নতা এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারে ভোগা রোগীদের মধ্যে এই মানসিক উপসর্গ দেখা দেয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া ভাইরাস প্রতিরোধী ওষুধ অ্যাসিক্লোভিরের বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এ রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। মস্তিস্কের যে অংশের সাহায্যে মানুষ চেহারা সনাক্ত করে এবং যে অংশ আবেগীয় বিষয়ের সাথে যুক্ত। এই দুই অংশের মধ্যকার সংযোগ বিচ্ছিন্নতা ঘটলে তার কারণে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিরল এই উপসর্গের ক্ষেত্রে বিষণ্নতা প্রতিরোধী চিকিৎসা, মানসিক রোগের চিকিৎসা এবং মেজাজ স্থিতিশীল রাখার চিকিৎসা কার্যকর। এছাড়া ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপিও কাজ করে।
৩. এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম:এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম বিশ্বের অন্যতম বিরল স্নায়ুরোগগুলোর মধ্যে একটি। এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মনে করে তার হাতের আলাদা একটি মন আছে এবং সেটি তার নিজের মর্জিমাফিক কাজ করে। একইসাথে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করেন তার হাত মূলত তার নিজের নয়।
এই সিনড্রোম প্রথম ১৯০৮ সালে সনাক্ত করা হয়। কিন্তু ১৯৭০-এর দশকের আগ পর্যন্ত এটি খুব পরিষ্কার করে বা ভালোভাবে বর্ণনা করা সম্ভব হয়নি। ‘এলিয়েন হ্যান্ড সিনড্রোম’ এই শব্দ প্রথম প্রচলন করেন আমেরিকার নিউরোফিজিওলজিস্ট জোসেফ বোগেন। মস্তিষ্কের অস্ত্রোপচারের পর সেরে উঠছে এমন কিছু রোগীর মধ্যে দেখা দেয়া অদ্ভূত ও নতুন আচরণকে বর্ণনা করার জন্য তিনি এই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছিলেন। এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সংবেদনশীলতা প্রক্রিয়াগতকরণ-বিষয়ক জটিলতায় ভোগে এবং মনে করে যে তাদের হাতের কাজের সাথে তারা জড়িত নয়। গবেষণায় দেখা যায়, এই উপসর্গে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই এলিয়েন হ্যান্ড-এর নকল করে এবং বিশ্বাস করে তাদের হাতের উপর কোনো আত্মা ভর করেছে বা কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী বা জীবের অস্তিত্ব রয়েছে তাদের হাতে।
এই রোগের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে ডিমেনসিয়া, স্ট্রোক, প্রিয়ন ডিজিজ (মস্তিষ্কের এক ধরণের মারাত্মক রোগ), টিউমার এবং খিঁচুনি। মারাত্মক ধরণের মৃগী রোগের চিকিৎসায় মস্তিস্কের ডান ও বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফেয়ার আলাদা করার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে এমন রোগীদের মধ্যেও এ ধরণের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এই উপসর্গ খুবই বিরল। ২০১৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয় চিকিৎসাবিষয়ক জার্নালগুলোতে এ পর্যন্ত ১৫০টি এ ধরণের ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। যদিও এখনো পর্যন্ত এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, তারপরো আক্রান্ত হাতকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে এই উপসর্গ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আক্রান্ত হাতকে ব্যস্ত রাখতে এটিকে কিছু কাজ দেয়া হয়। যেমন, কোনো কিছু ধরে রাখতে দেয়া ইত্যাদি। অন্য চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে বটালিনাম টক্সিন ইনজেকশন এবং মিরর বক্স থেরাপি। মিরর বক্স থেরাপি হচ্ছে একটি বাক্সের মধ্যে বিশেষ কায়দায় দুটি আয়না বসিয়ে সেটি ‘অলীক অঙের’ (অঙ্গ অপসারণের পরও সেটি সেখানে রয়েছে এমনটা মনে করেন যিনি) ব্যথা দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়। স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এর চিকিৎসা বেশি কার্যকর হয়।
৪. সিনড্রোম ডি একবোম:একবোমস সিনড্রোম হচ্ছে স্পর্শকাতর একটি হ্যালুসিনেশন (অবাস্তব কিছু দেখা) যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিশ্বাস করে তারা পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত এবং মনে করে তাদের চামড়ার নিচে পোকামাকড় কিলবিল করছে। এই উপসর্গের নামকরণ করা হয়েছে সুইডিশ নিউরোলজিস্ট কার্ল একবোমের নামানুসারে। তিনি ১৯৩০-এর দশকে প্রথম এই অবস্থার বর্ণনা করেন। এই উপসর্গে কত লোকে আক্রান্ত তা এখনো অজানা। কিন্তু নতুন একটি গবেষণায় বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ক্লিনিকে বছরে অন্তত ২০টি এ ধরণের ঘটনা দেখা যায়। একবোম সিনড্রোমে আক্রান্ত এক হাজার ২২৩টি আলাদা ঘটনার বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, এই উপসর্গে বেশি আক্রান্ত হয় নারীরা (আক্রান্তের দুই তৃতীয়াংশ নারী) এবং ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। এই উপসর্গ সাধারণত তিন থেকে চার ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
একবোম সিনড্রোমের সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে সিজোফ্রেনিয়া, মস্তিষ্কের রোগ, স্নায়ুর রোগ এবং ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত জটিলতা। এছাড়া যেসব ব্যক্তি অ্যালকোহল ত্যাগ করছেন, কোকেইন ব্যবহার করছেন, যাদের স্ট্রোক, ডিমেনসিয়া আছে এবং মস্তিষ্কের থ্যালামাস নামে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ব্যক্তিরাও এতে আক্রান্ত হতে পারে। একবোম সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীরা বেশিরভাগ সময় মানসিক চিকিৎসা নিতে চান না। কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে, এই সমস্যার জন্য শারীরিক চিকিৎসা দরকার।
৫. অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম:অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোমকে টড সিনড্রোমও বলা হয়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক গঠন, দৃষ্টি, শ্রবণ, স্পর্শ এবং স্থান বা সময় সম্পর্কিত অনুভূতি যথার্থ থাকে না।
এতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মনে করে তাদের আশপাশে থাকা জিনিসপত্র আকারে বাস্তবের তুলনায় অনেক ছোট। অন্যদিকে আশপাশে থাকা মানুষ বাস্তবের তুলনায় আকারে অনেক বড়।
এর বিপরীত অনুভূতিও হয়। যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি মনে করে যে, জিনিসপত্র বাস্তবের তুলনায় অনেক বড় এবং মানুষজন আকারে অনেক ছোট। এসব অভিজ্ঞতার সাথে কিছু মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দিতে পারে। এই উপসর্গ কী পরিমাণে দেখা যায় সে বিষয়ে খুব একটি জানা যায় না।
তবে শিশুদের মধ্যে এবং মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তিরদের মধ্যে এ ধরণের উপসর্গ বেশি দেখা যায়। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি ভয় পেয়ে থাক এবং ঘাবড়ে যায়। এ কারণে চিকিৎসা হিসেবে বিশ্রাম এবং অবসরের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই উপসর্গ খুব বেশি দিন স্থায়ী হয় না। অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড সিনড্রোম নিয়ে সম্প্রতি করা এক বিশ্লেষণে জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকই চিকিৎসার মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করে। সূত্র : বিবিসি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com