মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

দাম্পত্য জীবনে কলহের কারণে বেড়েছে বিবাহ বিচ্ছেদ মা-বাবা’র অধিকার বঞ্চিত শিশুরা

মোঃ এমদাদ উল্যাহ কুমিল্লা
  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩

সুমাইয়া আক্তার। বয়স মাত্র পাঁচ বছর। ফুটফুটে সুন্দর চেহারা ও হাসিখুশি শিশু সুমাইয়া সহজেই সকলের মন জয় করে। এক বছর আগে তাঁর মা আছিয়া বেগম ডাক্তার দেখানোর কথা বলে পরকিয়া প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যায়। বাবা কাশেম মিয়া থাকেন প্রবাসে। বেশ কয়েকদিন অপেক্ষার পর সুমাইয়ার মা-বাবার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। শিশু সুমাইয়া তাঁর দাদির কাছে থাকে। মায়ের চলে যাওয়া এবং বাবা প্রবাসী হওয়ায় সুমাইয়া মা-বাবার অধিকার থেকে বঞ্চিত। ছয় মাস পর কাশেম মিয়া প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আবারও বিয়ে করে নতুন বউ ‘আছমা আক্তার’কে ঘরে নিয়ে আসে। সবাই সুমাইয়াকে শিখিয়ে দেয়, ঘরে তাঁর নতুন মা এসেছে। পরদিন থেকে সুমাইয়া আছমাকে আম্মু বলে ডাকতে শুরু করে। এই ডাক আছমার জন্য বিরক্তিকর। কারণ-মাত্র তার বিয়ে হয়েছে। এদিকে সুমাইয়ার দেখাশুনা করার জন্য আছমাকে নিয়ে আসলেও বাবা দেশে থাকাকালিন কয়েকদিন তার আচরণ ভালো ছিল। কাশেম মিয়া দুই মাস পর প্রবাসে চলে যাওয়ায় সুমাইয়া এখন আরও বেশি অবহেলিত। কারণ-ঘরে সৎ মা ‘নতুন বউ’ আছে ভেবে দাদি তাঁর দেখাশুনা করছে না। বর্তমান সমাজে কেউ নিজের সন্তানের মত সৎ সন্তানকে দেখাশুনা করে না। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৎ মায়ের নির্যাতনের শিকার একটি শিশুর ‘শুধু পানি দিয়ে ভাত খাওয়া’র ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এভাবে চৌদ্দগ্রামের সুমাইয়ার মত সারাদেশের শত শত শিশু মা-বাবার অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। বিভিন্ন শহরে টোকাই ও পথশিশুদের অধিকাংশই তালাকপ্রাপ্ত মা-বাবার সন্তান। গত এক বছরে তালাক হওয়া শতাধিক মা-বাবার সন্তানের অধিকার নিয়ে গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। ইসলাম, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম সূত্রে জানা গেছে, সন্তানের জন্য সবচেয়ে আপন হলো মা-বাবা। তদ্রুপ মা-বাবার জন্য সবচেয়ে আপন হলো সন্তান। সু-সন্তান পার্থিব জীবনে সুখ-শান্তির এবং পরকালে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। ধন-সম্পদ প্রাণ রক্ষার মাধ্যম, আর সন্তান বংশ রক্ষার মাধ্যম। সন্তানকে যথাযথ প্রতিপালন করা মা-বাবার অপরিহার্য কর্তব্য। সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা, স্বাস্থ্যবান হিসেবে গড়ে তোলা, জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালানো মা-বাবার কর্তব্য। সন্তানের পুষ্টিকর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানিসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুর ব্যবস্থা করা আবশ্যক। কিন্তু দাম্পত্য জীবনে কলহের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ায় শিশুরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গবেষণায় জানা গেছে, সমাজে যৌতুক, পরকিয়া, মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, বিপথগামী, বহুগামিতা ও কুসংস্কারের কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ অর্থ্যাৎ তালাক বেড়েই চলছে। যৌতুকের জন্য স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার-নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হয় নারী। কখনও যৌতুকের বলি হয়ে মৃত্যুবরণও করার দৃষ্টান্ত সমাজে কম নয়। যৌতুক দাবি কিংবা নির্যাতনের কোনো বয়স বা সময় নেই। বিবাহ বিচ্ছেদের মাধ্যমে নারীকে ৩০ বছরের সংসারও ছেড়ে আসতে দেখা যায়। এছাড়া আধুনিক যুগের ছেলে-মেয়েরা একেবারেই ধৈর্যহীন। সামান্য বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে তারা সংসার নির্বাহ করতে চায় না। হুট করে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। তারা বিবেক, সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের তোয়াক্কা করে না। আবার অনেক পরিবারে দেখা যায়, বিবাহের পর পরিবারের অনেকে দম্পতির ব্যাপারে অনধিকার চর্চা করে। আত্মীয়স্বজন বা মুরব্বিদের কেউ কেউ নিজেদের মতো দম্পতির সংসার নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এতে একসময় তিক্ততা চলে আসে, যা বিবাহ বিচ্ছেদের পথ খুলে দিতে পারে। মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, প্রতিদিনই সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন পড়ে। আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী-ঢাকায় গড়ে প্রতি ৪০ মিনিটে একটি করে বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে। অনেকেই আইনবিধি ও নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে নোটিশ গোপন করে ৯০ দিন পর বিচ্ছেদের ঘোষণা দিচ্ছে। এ সংবাদ পরিবার-সমাজ তথা দেশের মানুষের জন্য সুখকর হতে পারে না। স্বামী বা স্ত্রী বিদেশে অবস্থান করছে; বিদেশে তালাক ঘটানো ব্যয়বহুল তাই দেখা যায়, এক ফাঁকে দেশে এসে গোপনে তালাক দিয়ে একজন আরেকজনকে প্রতারিত করছে। অনেকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে এমনকি নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে বে-আইনি ও নিয়মবহির্ভূতভাবে ‘তালাক’ প্রদান করছে। বিবাহ ও তালাক ডিজিটালাইজেশন না হওয়ায় প্রতারিত হচ্ছে নারী ও পুরুষ। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আর তালাক রেজিস্ট্রেশন অনলাইন হওয়া সময়ের দাবি। যা নারী-পুরুষ দু’পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক ও কল্যাণকর। ইউনিসেফ ও বিবিএস ২০২৩-এর তথ্য মতে, ৩০.১ শতাংশ শিশু পাবলিক বা খোলা জায়গায় (যেমন রাস্তাঘাট, স্টেশন, টার্মিনাল, মাঠ বা পার্ক) থাকে ও ঘুমায়। এছাড়া রাস্তায় বসবাসকারী শিশুদের ৮২.৯ শতাংশ নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয় পথচারীদের দ্বারা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া মা-বাবার সন্তানদের বেশির ভাগই অধিকার বঞ্চিত হয়ে খোলা জায়গায় থাকে। অযন্ত আর অবহেলায় তারা বেড়ে উঠে। ফলে পথশিশুদের সংখ্যা কমছে না। ইউনিসেফ বাংলাদেশে শিশুদের জন্য সামাজিক নীতি, পানি, পয়নিস্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি, পুষ্টি, শিক্ষার প্রসার ও সামাজিক নীতি নিয়ে ১৯৫২ সাল থেকে কাজ করছে। ফলে শিশু সন্তানদের অধিকার বিষয়ে অভিভাবকরা সচেতন হচ্ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামে পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা উদঘাটন ও উত্তরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী শেখ ফরিদ। তিনি জানান, ‘সংসার সুখের করতে কিছু বিষয় স্বামী-স্ত্রী উভয়কে মেনে চলা প্রয়োজন। দাম্পত্য কলহের উদ্ভব হলে প্রথমেই দু’জনের উচিত একসঙ্গে উদ্ভবের কারণ চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা। ব্যক্তি সচেতনতা-সহনশীলতা ও সমঝোতা করে বিশ্বাসের ভিত শক্ত করা। শান্তি-সুখ ও ভালবাসার নীড় সাজানোর জন্য উভয়কেই ছাড় দিতে হয়। পরস্পরের প্রতি সহনশীলতা, বিশ্বস্ততা ও শ্রদ্ধাবোধ থাকা জরুরি। এতে সংসার যেমন টিকবে, ভালো থাকবে তাদের শিশুরা। পূর্ণ অধিকার নিয়ে শিশুরা বেড়ে উঠবে’। তিনি আরও বলেন, ‘সামান্য অজুহাতে স্বামী-স্ত্রীর তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ করা নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ-বিচ্ছেদের পর নারী ও পুরুষ অন্যজনকে বিয়ে করে সুখে থাকতে পারে। কিন্তু তাদের সন্তান কার আদর যতেœ বেড়ে উঠবে? মা-বাবার অধিকার বঞ্চিত শিশুরা অবহেলায় বেড়ে উঠলে আগামী প্রজন্ম হবে বিপদজ্জনক ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ফলে সব শিশু সন্তানের অধিকার আদায়ে পরিবার, সমাজ ও সরকারকে সোচ্চার হতে হবে’। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রাশেদা আখতার বলেন, ‘প্রত্যেক পরিবারে শিশুদের অধিকার নিশ্চিতকল্পে স্বামী-স্ত্রীকে আরও সচেতন হতে হবে। অভিভাবকদের উচিত-শিশু সন্তানের বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যবিধিসহ সব অধিকার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা। শিশুর অধিকারের কথা চিন্তা করেই সামান্য বাকবিতন্ডার জেরে স্বামী-স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ থেকে বিরত থাকতে হবে। এজন্য সরকারের পাশাপাশি এনজিও ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অভিভাবকদের আরও সচেতন করতে হবে’।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com