ইসলাম একটি জীবনঘনিষ্ঠ ধর্ম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে যুগোপযোগী ও কালজয়ী দিকনির্দেশনা। যে নির্দেশনাগুলো ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ- সর্বত্র সুখ ও শান্তির বার্তা বয়ে আনে। জীবনকে আনন্দে ও স্বাচ্ছন্দ্যে পরিপূর্ণ করে তোলে। ইসলাম সব ধরনের জুলুম ও সঙ্কট সৃষ্টির পথকে রুদ্ধ করে দেয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি সদস্য যেন নির্বিঘ্ণে জীবনযাপন করতে পারে এ বিষয়ে ইসলাম সব সময় তৎপর। শোষণমুক্ত সঙ্কটহীন জীবনব্যবস্থা উপহার দেয়া ইসলামের মৌলিক লক্ষ্যগুলোর অন্যতম।
গণমাধ্যমের কল্যাণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কাঁচামরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কিছু পণ্য মজুদ করে রেখে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এটি যে কতটা অমানবিক ও ঘৃণ্য অপরাধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইসলাম সব সময়ই এ জাতীয় ঘৃণ্য অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ জাতীয় ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত লোকদের বিরুদ্ধে উচ্চারণ করেছে কঠোর হুঁশিয়ারি।
অস্বাভাবিকভাবে মুনাফা লাভের আশায় মজুদদারি করা বা বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা অভিশাপ বা গুনাহের কাজ। মূলত একদল মধ্যস্বত্বভোগী অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে মুনাফা লাভের আশায় এ ঘৃণিত কাজটি করে থাকে। ইসলামী শরিয়াহ মতে এটি সম্পূর্ণ হারাম ও অবশ্য পরিত্যাজ্য একটি কাজ।
মজুদদারির ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ণ হয় ও বাজারে পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং বেশির ভাগ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়। এ প্রসঙ্গে হজরত মামার ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘জনগণের জীবিকা সঙ্কীর্ণ করে যে ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করবে, সে বড় অপরাধী।’ আরো জেনে রাখো, ‘সে পাপী হিসেবে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে’ (সহিহ মুসলিম-১৬০৫)।
রাসূলুল্লাহ সা: মজুদদারকে পাপী বলে আখ্যা দিয়েছেন। যেমন নবী সা: ইরশাদ করেছেন, ‘পণ্যদ্রব্য আটক করে অধিক মূল্যে বিক্রয়কারী অবশ্যই পাপী’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৩৮)।
এ ছাড়া হজরত আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মূল্য বাড়ার উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুদ রাখে, সে ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট। সে মজুদকৃত সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না’ (মিশকাত শরিফ-২৭৭২)।
নবী সা: মজুদদার ও কালোবাজারিদের অভিশপ্ত উল্লেখ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমদানি করবে সে রিজিকপ্রাপ্ত হবে। আর যে গুদামজাত করবে, সে অভিশপ্ত হবে’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-২১৪৪)।
অবৈধভাবে অর্থোপার্জনের উদ্দেশ্যে দ্রব্যমূল্যের মূল্য বৃদ্ধি করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গর্হিত কাজ। এ জাতীয় লোকদের জন্য ভয়াবহ শাস্তির ধমকি রয়েছে। নবী সা: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি মুসলমানদের লেনদেনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ ঘটালে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা আগুনের ওপর তাকে বসিয়ে শাস্তি দেবেন’ (মুসনাদে আহমাদ-১৯৪২৬)।
এ ছাড়া হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, আমি নবী সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘মজুদদার ব্যক্তি খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দর হ্রাস পায়, তখন সে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আর যদি দর বেড়ে যায়, তখন আনন্দিত হয়’ (মিশকাত শরিফ-২৭৭১)।
মজুদদারি করা মানব সম্প্রদায়ের ওপর এমন একটি জুলুমকার্য, যার কারণে আল্লাহ তায়ালা মজুদদারদের মহামারী ও দরিদ্রতায় নিক্ষেপ করেন। তা-ই নবী সা: মজুতদারদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘কেউ যদি মুসলমানদের থেকে নিজেদের খাদ্যশস্য আটকিয়ে রাখে (মজুদদারি করে), তবে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর মহামারী ও দরিদ্রতা চাপিয়ে দেন’ (সুনানে আবু দাউদ-৫৫, সুনানে ইবনে মাজাহ-২২৩৮)।
তাই আসুন মজুদদারির মতো ঘৃণ্য অমানবিক কাজের বিরুদ্ধে অবস্থান নেই। স্বাভাবিক ব্যবসায়-বাণিজ্যের মাধ্যমে বৈধ ও ভারসাম্যপূর্ণ কাজে অগ্রগামী হই। একটি শোষণমুক্ত সঙ্কটহীন সুখময় সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে যাই।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখজানুল উলুম, টঙ্গী, গাজীপুর। খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর