এই ভূপৃষ্ঠে কুরআন ব্যতীত নির্ভুল আর কোনো গ্রন্থ নেই। এমন কোনো সাহিত্যিকের গ্রন্থ দেখাতে পারবেন, যেটি নির্ভুল সব দিক থেকে? কখনো না। তবে সব দিক থেকে নির্ভুল ও নিখুঁত একমাত্র গ্রন্থ হলো আল-কুরআন! এই গ্রন্থ যখন নাজিল হয়েছিল, তখন চার পাশ ছিল আরবি সাহিত্যের ছড়াছড়ি। একে অপরকে বশে আনত সাহিত্য দিয়ে। কমবেশি সবাই আরবি সাহিত্যে পারদর্শী ছিল। এমন সময় নবী সা: নিয়ে এলেন পবিত্র কুরআন। এই গ্রন্থ ছিল রবের প্রেরিত। তবে মক্কার মুশরিকরা তা কখনোই মানত না, স্বীকার করত না। বলত, ‘এটি মুহাম্মদের বানানো গ্রন্থ।’ এমন পরিস্থিতিতে যদি এই গ্রন্থে কোনো প্রকার ভুল খুঁজে পেত, কোনো রকমের খুঁত চোখে পড়ত, তাহলে মক্কার কাফিরদের কখনো বশে আনা যেত? কখনো না। এ নিয়ে তারা নবী সা:-কে কষ্ট দিতো।
এই মহাগ্রন্থ জিবরাইল আ:-এর মাধ্যমে নাজিল হয়। এই গ্রন্থে যা আছে, সব রবের কথা। কোনো মানুষের কথা যুক্ত করা হয়নি। এই কালামের ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহ পোষণ করা যায় না। এ কথা স্বীয় তাঁর সংরক্ষক ও প্রবর্তক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। ইরশাদ ফরমান- ‘এ সেই কিতাব যাতে কোনোই সন্দেহ নেই’ (সূরা বাকারাহ-০২)।
এই মহাগ্রন্থ আরবি সাহিত্যের উচ্চ শিখরে। বড় বড় সাহিত্যিকরা এই গ্রন্থে মুগ্ধ হয়ে এ কথা বলতে ও মানতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘মুহাম্মদ সত্য নবী। মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত নবী। মুহাম্মদ কোনো জাদুকর নন। এই গ্রন্থ কখনো তাঁর রচিত হতে পারে না। এই গ্রন্থ রবের প্রেরিত। সা: বলার বিশেষ কারণও আছে বটে। নবী সা: ছিলেন উম্মি। কারো থেকে সাহিত্য শিখেননি। কোনো বিদ্যাপীঠে গিয়ে বিদ্যাচর্চা করেননি। এতদসত্ত্বেও তাঁর মুখ থেকে ঝরে পড়ছে সাহিত্যের অসংখ্য মুক্তো। তবুও কিছু অভাগা নবী সা:-কে চিনতে পারেনি। তারা নবী সা: জাদুকর বলে পরাস্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে, ছেলেদেরকে পেছনে লেলিয়ে দেয়। এত কিছুর পরও নবী সা:-কে তারা দমাতে পারেনি। ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তাদের দিকে, ‘এই গ্রন্থ নিয়ে যদি তোমাদের কোনো সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তা হলে এর মতো একটি সূরা রচনা করে নিয়ে আসো। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সাথে নাও এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো’ (সূরা বাকারাহ-২৩)।
এই গ্রন্থকে কেউ ধ্বংসও করতে পারবে না, তাঁর অস্তিত্বকেও কেউ মিটিয়ে দিতে পারবে না। কারণ এই গ্রন্থের সংরক্ষক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। তিনিই এই গ্রন্থ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। ইরশাদ ফরমান- ‘নিশ্চয় আমিই কুরআন নাজিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক’ (সূরা হিজর-০৯)। কত কুরআনের কপি জালেমরা পুড়িয়েছিল, অস্তিত্ব মিটিয়ে দেয়ার জন্য কত কিছুই না করেছিল, একেবারে নির্মূল করে দেয়ার জন্য কত ঘৃণ্য উদ্যোগ তারা নিয়েছিল- কিছুই করতে পারেনি। পবিত্র এখনো, এখনো অক্ষত রয়েছে।
এই গ্রন্থ মলাটবদ্ধ করা হয়েছিল খলিফা উসমান রা:-এর খিলাফতকালে। তিনি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আঞ্জাম দিয়েছিলেন। যার নিমিত্তে পবিত্র কুরআনের কপি মানুষের ঘরে ঘরে, দোকান, মসজিদে। এমনকি অ্যাপস বানিয়ে মানুষের মোবাইলে মোবাইলে আছে। দরকার হলে দেখতে পারি, প্রয়োজন হলে অনুবাদ দেখতে পারি, পড়তে পারি, শিখতে পারি।
একটি প্রশ্ন জাগে মানুষের অন্তরে, এই গ্রন্থের সংরক্ষক আল্লাহ তায়ালা। যদি তাই হয়, সুইডেনে পবিত্র কুরআনকে পুড়ানো হয়েছে নির্বিঘেœ, বাধাহীনভাবে- অথচ কেউ কিচ্ছু করতে পারেনি। তার কোনো ক্ষতিও হলো না। তাদের জন্য এই বার্তা, ‘কালির শব্দ, কাগজে লেখা বাক্য পোড়ানো যায়, ধ্বংস করে ফেলা যায়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই গ্রন্থকে এভাবে সংরক্ষণ করবেন না। করবেন হাফেজদের মাধ্যমে। এই গ্রন্থকে নির্মূল করতে চাইলে হাফেজদের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে হবে- তা কি আদৌ সম্ভব? আজ একটি কপি পুড়লেন, আগামীকাল আরেকটি কপি প্রস্তুত হয়ে গেল। লেখক : গল্পকার ও প্রাবন্ধিক