এরচেয়ে সুন্দর সমাপ্তি আর কি হতে পারতো! স্টুয়ার্ট ব্রড নিঃসন্দেহে ভাগ্যবানদের একজন। ক্যারিয়ারের শেষ বলে উইকেট পাওয়া কয়জনের ভাগ্যে জুটে? আবার যদি সেই বলেই দলের জয় নিশ্চিত হয় তবে! সোনায় সোহাগা হয়তো একেই বলে। শুধু ম্যাচ জেতাননি, এই এক বলেই অ্যাশেজ হারের তিক্ত স্বাদ থেকে বাঁচিয়েছেন ইংল্যান্ডকে। বলতে গেলে অবিশ্বাস্যভাবে হেরে গেল অস্ট্রেলিয়া। আবার প্রায় হারতে বসা ওভাল টেস্ট জিতে নিলো স্বাগতিকরা। সেই সাথে নানান নাটকীয়তায় অস্ট্রেলিয়াকে ৪৯ রানে হারিয়ে অ্যাশেজে সমতা ফেরালো ইংল্যান্ড। সুবাদে প্রথম দুই টেস্টে টানা জয় নিয়েও অ্যাশেজ জয়ের স্বাদবি ত হলো সফরকারীরা।
অথচ জয়ের পথেই ছিল অস্ট্রেলিয়া। ৩৮৪ রান তাড়া করতে নেমে ১৪০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে জয়ের ভিত গড়ে ফেলেছিল তারা। এরপর দ্রুত ৩ উইকেট হারালেও ২৬৪ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল আর কোনো উইকেট না হারিয়েই। তবে এরপর মাত্র ৭০ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পাশাপাশি হাতছাড়া করেছে সিরিজও।
ওভালে সোমবার শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ২৪৯ রান। হাতে ১০ উইকেট। আগের দিন ১৩৫ রান তোলা উদ্বোধনী জুটি তখনো অপরাজিত। ফলে জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে ছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে শেষ দিনে ইংলিশ বোলারদের আঁটসাঁট বোলিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৩৪ রানে গুটিয়ে গেছে তারা। জিততে হলে করতে হতো ৩৮৪ রান। আগেরদিনই ফিফটি তুলে নেয়া ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা প ম দিনে থিতু হতে পারেননি, ৫ রান যোগ হতেই ফেরে ওয়ার্নার। ক্রিস ওকসের শিকার হয়ে ৬০ করে ফেরেন তিনি। সেই ওকসের পরের ওভারে ফেরেন খাজাও, ৭২ রান আসে তার ব্যাটে। তিন নম্বরে নেমে দলের হাল ধরতে ব্যর্থ হন মার্নাস ল্যাবুশেন (১৩)। ২৯ রানের ভেতর ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে দলকে পথ দেখিয়েছেন স্টিভেন স্মিথ ও ট্রাভিস হেড। দু’জনে গড়ে তোলেন ৯৫ রানের জুটি। ফলে সব শঙ্কা কাঁটিয়ে ফের জয়ের স্বপ্ন বুনতে থাকে সফরকারীরা। জুটি ভাঙেন মঈন আলি, ফেরান ৪৩ রান করা হেডকে। ১০ রান যোগ হতেই ফেরেন স্মিথও ফেরেন ৫৪ রান করে। মিচেল স্টার্কও ফেরেন পরের ওভারে।
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে ২৬৪/৩ থেকে মুহূর্তেই অস্ট্রেলিয়া পরিণত হয় ২৭৫/৬ -এ। ১১ রানে ৩ উইকেট হারানোর ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠা যায়নি। ক্যারির ২৮ আর মারফির ১৮ ছাড়া আর কেউ দুই অংকের ঘরে যেতে পারেনি। ক্রিস ওকস ৪, মইন আলি ৩ ও ব্রড নেন দুটো উইকেট। অপরটি মার্ক উডের। এর আগে ওভালে টসে হেরে আগে ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৮৪ রানে থামে ইংল্যান্ডের ইনিংস। তবে বেশিদূর দৌঁড়াতে পারেনি ক্যাঙ্গারুরাও, অস্ট্রেলিয়া থামে ২৯৫ রানে। মাত্র ১২ রানের লিড পায় তারা। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ ব্যাট করে ইংল্যান্ড, স্কোরবোর্ডে তোলে ৩৯৫ রান। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৮৪ রান।
উল্লেখ্য, ওভাল টেস্ট চলাকালীন সময়েই অবসরের ঘোষণা দেন ব্রড। চলতি অ্যাশেজ সিরিজ শেষেই জার্সি তুলে রাখার সিদ্ধান্ত জানান এই ইংলিশ পেসার। ফলে ওভাল টেস্ট শেষ হওয়ার সাথে সাথে শেষ হলো ব্রডের ক্রিকেট ক্যারিয়ার। ৬০৪ টেস্ট উইকেট আর সব মিলিয়ে ৮৬৭ উইকেট নিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন এই কিংবদন্তি।